৪৩৩ বার পঠিত
Photo: Julien Chapuis, The Metropolitan Museum of Art
ইসলামের ফুল-ফাইনাল ধর্মগ্রন্থ কোরানে বর্ণনা অনুসারে মুসলিম জাতির আদি পিতা ইব্রাহিমের গোত্রের লোকেরা মূর্তিপূজা করত। ইব্রাহিম একদিন সেই মূর্তিগুলোকে ভেঙে দিলেন এবং দলের সবাইকে বললেন
“তোমরা তাদের উপাসনা করছ যারা নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম নয়। তাদের কাছে প্রার্থনা করলে তারা কীভাবে তোমাদের রক্ষা করবে?”
মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে কোরানের মূল যুক্তিটাই এই। মূর্তিরা জড়বস্তু দিয়ে তৈরি। তারা নিজেরাই আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষা করতে পারেনা, ভক্তদেরও রক্ষা করতে পারেনা। তাদের চোখকানও নেই যে প্রার্থনা শুনতে পাবে।
এমন সুন্দর যুক্তিও হাস্যকর হয়ে ওঠে যখন দেখা যায় আল্লা নামের গায়েবী স্রষ্টারও অবস্থা সেই একই রকম। তিনিও যে নিজেকে অথবা নিজের বান্দাদের রক্ষা করতে পারেন তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়না। প্রার্থনা করলে তিনি শুনতে পান সেটাও প্রমাণিত নয়। এক কথায়, মাটির মূর্তির কাছে প্রার্থনা করলে যতটা সফল হয়, আল্লার কাছে করলে সফলতার হার বেশি তো নয়ই, অনেক ক্ষেত্রে কমই বলা চলে। সারা পৃথিবী জুড়েই মন্দিরে, মসজিদে, গীর্জায়, প্যাগোডায় মানুষ নিজ নিজ ব্যক্তিগত এবং জাতীয় উন্নতির প্রার্থনা করে চলেছে। অন্য যেকোনো জাতির তুলনায় মুসলমানেরা প্রার্থনা বেশি করে, অথচ উন্নতির বিচারে তারা সবচেয়ে পিছিয়ে। নাস্তিকেরা দিনে পাঁচবার করে আল্লার আরশ নিয়ে ফুটবল খেললেও আল্লা তাদের কিছুই করতে পারেন না। মাটির মূর্তির চেয়ে যে আল্লার ক্ষমতা কিছুমাত্র বেশি তেমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই। মরার পরে দেখে নেবেন বলে যে হুমকি দেওয়া হয় সেটাও আল্লার একার সম্পত্তি নয়। সব ধর্মের দেবতারাই মরার পরে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। মরার পরেও বাকি দেবতাদের তুলনায় আল্লা যে বেশিকিছু শাস্তি দিতে সক্ষম এমনটাও কোরান পড়লে মনে হয়না।
আসলে ইসলামী ইতিহাস নিজেই কোরানের বক্তব্যের উলটো ঘটনা বয়ান করে। খোদ মুসলিম লেখকদের থেকেই জানা যায় মুহাম্মদের ঠাকুদ্দা আব্দুল মুত্তালিবের জমানায় অয়েমেন এর রাজা আব্রাহা একদল হাতী নিয়ে কাবাঘর ভেঙে দেবার উদ্দেশ্যে মক্কা আক্রমণ করে। কাবায় তখন ৩৬০ টি মূর্তি রেখে পূজা করা চলত আর আব্দুল মুত্তালিব কাবার প্রধান পুরোহিত ছিলেন। পুরোহিত স্বাভাবিক ভাবেই মূর্তিদের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। ইসলামী ইতিহাস অনুযায়ী অলৌকিকভাবে আকাশে একঝাঁক আবাবিল পাখি উড়ে এসে পাথরের টুকরো ফেলতে শুরু করে যাতে শত্রুপক্ষ হস্তীবাহিনী নিয়ে পালাতে বাধ্য হয়। এই কাহিনী সত্য বলে মুসলমানেরা বিশ্বাস করে, আবার তারা কোরানেও বিশ্বাস করে যেখানে বলা হয়েছে মূর্তিদের কোনো ক্ষমতা নেই, তাদের কাছে প্রার্থনা করে কোনও ফল হয়না।
কোরানে অবশ্য দাবী করা হয়েছে কুরাইশদের প্রধান দেবতা নয়, ইব্রাহিমের আল্লা নাকি কাবাঘর বাঁচাতে এই আবাবিল পাখি পাঠিয়েছিল। অর্থাৎ আবাবিলের দল এসেছিল কাবাঘরকে বাঁচাতে কাবার মূর্তিগুলোকে বাঁচাতে নয়। কিন্তু এই যুক্তিও ইতিহাসের ঘটনার সামনে হাস্যকর হয়ে যায় কারণ মূর্তিহীন কাবার উপর একাধিক বিদেশী আক্রমণের সময় কোরানের আল্লা কোনোরকম সাহায্য দেয়নি। অতি সম্প্রতি ইয়েমেন থেকে মিশাইল হামলা আটকাতে সৌদি সরকার ইজরায়েলি এবং আমেরিকান প্রযুক্তি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। আল্লার গায়েবী কুদরতের দেখা নেই। কেবল যে কাবাঘর তা নয়, সলোমনের মন্দির ওরফে বায়তুল মোকাদ্দাস ছিল কোরান অনুসারে কাবার পরেই দ্বিতীয় পবিত্র স্থান। এমনকি মক্কায় বসবাসের সময়ে মুহাম্মদ সেই দিকে মুখ করে নামাজ পড়ত। সেটাও মুহাম্মদের জন্মের আগেই বিদেশী আক্রমণে ধ্বংস হয়ে গেছিল। আল্লার কুদরতের দেখা মেলেনি। কেবল বিদেশী আক্রমণেই নয়, কাবাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যায় আর ভূমিকম্পেও। বারেবারে মেরামত করাতে হয়েছে। অথচ শয়তানের অনুসারী মূর্তিপূজক ফেরাউনদের পিরামিড থেকে একটা পাথর খসেনি। তাহলে শক্তিতে কে এগিয়ে থাকছে?
যদি এই আবাবিল পাখির কাহিনী সত্য হয় তবে এটা পরিষ্কার যে কাবার মূর্তিদের কিছু ক্ষমতা ছিল। তাদের কাছে প্রার্থনা করলে ফল পাওয়া যেত। তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারত। কিন্তু মূর্তিহীন কাবাঘরে প্রার্থনা করলে সেই ফল পাওয়া যাচ্ছেনা, ইহুদী নাসারাদের সাহায্য নিতে হচ্ছে। ফলে এটাই প্রমাণ হচ্ছে যে আল্লার চেয়ে মূর্তিদের ক্ষমতা বেশি। আর যদি এই পাখির গল্প মিথ্যাও হয় তাহলে আল্লার ক্ষমতা গড়পড়তা অন্যসব দেবতাদের মতই।
মুশকিলের কথা এই যে কোনও মুসলমানের পক্ষেই এই পাখির গল্প অবিশ্বাস করা সম্ভব নয়। খোদ কোরানেই এই ঘটনার উল্লেখ আছে।
সুরা ফিল
(১) তুমি কি শোনো নি, তোমার প্রভু হস্তীওয়ালাদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছিলেন?
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَابِ الْفِيلِ
(২) তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি?
أَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِي تَضْلِيلٍ
(৩) তিনি তাদের উপরে প্রেরণ করেছিলেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি
وَأَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا أَبَابِيلَ
(৪) যারা তাদের উপরে নিক্ষেপ করেছিল মেটেল পাথরের কংকর
تَرْمِيهِمْ بِحِجَارَةٍ مِنْ سِجِّيلٍ
(৫) অতঃপর তিনি তাদের করে দেন ভক্ষিত তৃণসদৃশ।
فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَأْكُولٍ
আসলেই কোরান এত বেশি স্ববিরোধী যে বিন্দুমাত্র কমনসেন্স থাকলে পুরোটা একসাথে বিশ্বাস করা একেবারেই অসম্ভব। তাই আল্লার এমন ক্ষমতার কথা জেনেও সৌদি সরকার টাকাপয়সা খরচ করে ইহুদী-নাসারাদের কাছে অস্ত্র কিনছে। অথচ চাইলে তারা ঐ টাকা সোমালিয়ার পথশিশুদের জাকাত দিয়ে অনেক নেকী কামাতে পারত। তাদের বিশ্বাসের জোর দেখে আমরা নাস্তিকেরাও হয়ত ইমান এনে ফেলতাম। কিন্তু আফসুস, যারা নিজেরাই আল্লার উপর ভরসা রাখেনা তারাই আজ আল্লার সোল এজেন্ট হয়ে বসেছে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন
আগস্ট ৫, ২০১৭; ৯:০১ অপরাহ্ন
চলে আসুন দলে দলে
সনাতনের ছায়াতলে