৯৫৭ বার পঠিত
আমি যদি সেরকম পারভারসিভ লোক হইতাম, আজকে ৬ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত একটা পিকআপ ট্রাক ভাড়া করতাম যার পিছনে থাকতো বিশাল বিশাল দুইটা স্পিকার।
একটা লাউড স্পিকার বাজাতাম, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সংগীত জয় বাংলা জিতবে আবার নৌকা। আরেকটা স্পিকারে বাযাইতাম বিগত ৩১শে মার্চে মনজুরুল আহসান খান এর অমীয় বাণী,
“আমরা চাই না বিকল্প মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল শক্তির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ার আগে, শেখ হাসিনা সরকারের পতন হোক। সেটা পতন হওয়ার মানে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এখানে ক্ষমতায় আসবে।”
এই বক্তব্যে আবার প্রমাণ হয় বিগত ২৯ শে ডিসেম্বর বিজিবি, আর্মি, ডিজিএফআই, র্যাব, প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে মিডনাইট ইলেকশনের মাধ্যমে জনগণের বেছে নেওয়ার অধিকার কেড়ে বাংলাদেশকে পার্মানেন্ট একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করার যেই ন্যারেটিভ আওয়ামী লীগ হাজির করেছে সেই সেম ন্যারেটিভে-যে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিপক্ষের শক্তি দুটি ভাগে বিভক্ত এবং বিপক্ষের শক্তি কে জনগণ ক্ষমতায় আনতে চাইলে ও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ধরে রাখতে হবে, কারণ শেখ হাসিনাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি-সে বয়ানের উৎস এবং বৈধতা বাংলাদেশের বামপন্থী দের কাছ থেকে আসে।
আওয়ামী লীগের যেমন সংসদ একটা গৃহপালিত বিরোধীদল লাগে ঠিক তেমনি সংসদের বাইরে আরেকটা গৃহপালিত বিরোধীদল লাগে। যেটাকে আওয়ামী লীগ একটা নৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এবং যেহেতু এই শব্দে একটি নৈতিক শক্তি ফলে এই নৈতিক শক্তির বিরোধিতা তাদের ফ্যাসিজম কে বৈধতা দেয় -‘দেখো আমার বিরুদ্ধে হরতাল দিতে পারছে সো বাংলাদেশ গণতন্ত্র আছে‘।
আমি বাংলাদেশের বামপন্থীদেরকে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি শক্তি বলে মনে করি। আওয়ামী লীগের বাহিরে বাংলাদেশের মিডিয়া ন্যারেটিভ এখনো তারা কন্ট্রোল করে। এইসব ক্ষমতা তাদের বিগত ৩০ বছরে তৈরি হয়েছে। বয়ান কীভাবে ক্ষমতা নির্মাণ করে এইসব গ্রামসির হেজিমনির আলাপ না বোঝার মতো নির্বোধ বামপন্থীরা না।
কিন্তু সেই শক্তিকে আওয়ামী লীগের একটি অনেস্ট বিরোধিতার মাধ্যমে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার কাজে না লাগিয়ে বরং আওয়ামী লীগের একটা খুঁটি হিসেবে যারা ব্যবহার করে -তাদের তেল গ্যাসের দামের বিরুদ্ধে হরতাল একটা ফার্স বাদে আর কিছুই নয়।
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাষ্ট্র চালানোটাকে একটা রসিকতায় রূপান্তরিত করছে। ঠিক তেমনি সিপিবি (CPB =Comunist Party of Bangladesh) ও বামপন্থীরা সরকারবিরোধী তাকে একটা রসিকতায় রূপান্তরিত করেছে।।
আপনি বলতে পারেন মনজুরুল আহসান খান এর এই বক্তব্যের দায় পুরো বামপন্থীদের না।
কথাটা সত্য। আমার অনেক বামপন্থী বন্ধু আছে যাদের দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং চিন্তার সততায় আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু দ্যাট ডাজন্ট ম্যাটার।
কারণ বামপন্থীদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি সিপিবির এই বক্তব্য কোন লুকানো বক্তব্য না । তারা প্রকাশ্যেই দাবিটা করে থাকেন। এমনকী সিপিবির বাহিরে অন্য যে বামপন্থী রাজনৈতিক শক্তিগুলো আছে তাদের অনেককে আড়ালে সিপিবিকে আওয়ামী লীগের দালাল এবং আওয়ামী লীগের বি,টিম-এর এজেন্ট বলতেও শুনেছি।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে- তারা কেন সিপিবির কাছ থেকে বের হতে পারে না । এর কারণ, বামপন্থী মানসের মধ্যে মনজুরুল আহসান খান এর এই বয়ানের নৈতিক বৈধতা আছে তাদের ম্যাক্সিমামও মনে করে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং বিপক্ষে শক্তিতে বিভাজিত এবং বিপক্ষের শক্তির ক্ষমতায় আসার পরিবর্তে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখাই ভালো।
এই লোকগুলো জানে জনগণের ভোট দিয়ে তারা কখনো ক্ষমতায় যেতে পারবে না এজন্য তারা এখন জনগণকে ইরিলেভেন্ট মনে করে।
তাদের এ হরতাল জনগণের জন্য হরতাল না, তাদের এই হরতাল আওয়ামী লীগকে সিগন্যাল দেওয়া হরতাল; যে টেক মি মোর সিরিয়াসলি তুমি আমার সাথে বারগেন করো। এবং আমাকে আরো বেটার বারগেন দাও।
অনেকে বলতে পারেন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বামপন্থীরা কী সুবিধা পায়।
লেট আস বি ভেরি ক্লিয়ার টক শো থেকে ঢুকতে কে পারবে, কে পারবে না, সেটাও যে দেশে গোয়েন্দা সংস্থা ঠিক করে দেয়। সেইখানে টকশোতে ক্লিয়ারেন্স পাওয়াটাও বামপন্থীদের জন্য একটা বারগেন।
এই ধরনের আরও অনেক ফর্মাল এবং ইনফর্মাল নেগোসিয়েশন এবং পাওয়া না পাওয়ার জায়গা আছে। আওয়ামী লীগের সাথে সিপিবি এবং অন্যান্য বামপন্থীদের একটি ক্লায়েন্ট পেট্রোন সম্পর্ক আছে। এই বামপন্থী নেতাদের ভাই-ব্রাদার আত্মীয়-স্বজন অনেককেই বিগত ১০ বছরে ভালো ভালো চাকরি এনজিও এবং অন্যান্য ফেসিলিটি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইউনিভার্সিটিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের বসানো হয়েছে। মনে হতে পারে এটা তাদের যোগ্যতার জন্য। না, এগুলো কিন্তু সেই ক্লায়েন্টস পেট্রোল নেটওয়ার্কের বারগেন এর রিটার্ন।
অন্যদিকে এই হরতালগুলো বামপন্থীদের লেজিটিমেসি নির্মাণ করে। এবং এই লেজিটিমেসি নির্মাণের মাধ্যমে যে শক্তি তারা অর্জন করে সেই শক্তি তারা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের মূল ন্যারেটিভ, মঞ্জুরুল আহসান খান সাহেবের যে বক্তব্য, “এই দেশ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিপক্ষের দুইটি শক্তির মধ্যে বিভক্ত। এরমধ্যে বিপক্ষের শক্তিকে জনগণ যদি ক্ষমতায় আনতে চায়ও জনগণকে এই ভুল করতে দেওয়া যাবে না। তাই প্রয়োজনে র্যাব, বিজিবি, পুলিশ আর্মি নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন দিয়ে মিডনাইট ইলেকশন করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকে রাখতে হবে…” সেইটা বলে যেতে পারার মতো সামাজিক শক্তি নির্মাণ করে দেয়।
এর থেকে বেশি কমেডি কিছু নাই ইলেকশনের পরে যে দল বলতে পারে আমরা চাই না শেখ হাসিনার পতন হোক, তারপরে তারা ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি চায় এবং জনগণকে তেল গ্যাসের দাম কমানোর দাবি নিয়ে জনগণের বোঝা কমানোর এজেন্ডা নিয়ে হরতাল দেয়।
আপনি বলতে পারেন তো বিএনপি তো হরতালকে সমর্থন দিয়েছে। দিয়েছে, কারণ বিএনপি একটা সুবিধাবাদী দল; তারা জনগণের পক্ষে শক্তি না। আপনি তাহলে বলতে পারেন তাহলে তো ভাই আপনি কনফিউজ। আমি বলবো, না; আমি আমার ডেমোক্রেটিক রাইটস সেইটা যে হরণ করে, যে পরিষ্কার ফ্যাসিস্ট ন্যারেটিভ নির্মাণ করে, যে দাবি করে এই দেশ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিপক্ষের শক্তিতে বিভক্ত, যে সিস্টেম করে করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সমস্ত ঐক্যের সম্ভাবনা ধ্বংস করে তার ভারচ্যু সিগন্যালিং দেখে বিভ্রন্ত হই না। বিএনপি বিভ্রান্ত হইতে পারে, কারণ তাদের নৈতিক আদর্শিক কমনসেন্স কোন স্ট্যান্ড পয়েন্ট নাই। কিন্তু আমরা যারা রাজনীতিকে বিগত ১০ বছরে দেখেছি বুঝেছি এবং সাফার করছি আমরা এই জনগণের বিরোধীশক্তির পক্ষে যেতে পারি না। বাংলাদেশের বামপন্থীরা পরিষ্কারভাবে ফ্যাসিস্ট এনাবলার।
জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে আপত্তি নাই যে শক্তির, তাদের জনগণের পক্ষে এই হরতাল দেখে আমার এত ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর গালি আসছে; ওই গালিগুলো নেওয়ার শক্তি সোস্যাল নেটওয়ার্ক, ব্লগ বা ফেসবুক-এর নাই।
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার একমাত্র উপায় একটা পিকআপ ভাড়া করে স্পিকারে মঞ্জুরুল আহসান খান সাহেবের উক্তি এবং জয় বাংলা জিতবে আবার নৌকা একইসাথে বাজানো। তাহলে একটু বিকৃত আনন্দ লাগত।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন