অপমৃত্যু
অনেকদিন আগে কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন সেই সময়ের প্রেক্ষিতে। “লব্ধপ্রতিষ্ঠিত কবিরা স্তব্ধ প্রতিষ্ঠিত আজ”। কি স্পষ্ট উচ্চারণ! অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, একটি সময়ের পর প্রতিষ্ঠিত নামকরা কবি সাহিত্যিকরা তাঁর নিজেরই পূর্ববর্তী সৃষ্টির জেরক্স কপি প্রকাশ করতে শুরু করেন। ভক্ত পাঠককূল তাতেই সন্তুষ্ট হতে থাকেন। কিন্তু খেয়াল করেন না, তাতে সাহিত্যে পুষ্টির বড়ো অভাব ঘটে যেতে থাকে। আমাদের বাংলায়, কাঁটাতারের উভয় পারেই সাহিত্যের দিগন্তে ঊনিশবিশ একই চিত্র দেখা যায়। এইভাবেই দিনে দিনে ফুরিয়ে যেতে থাকেন এক একজন নাম করা বিখ্যাত সাহিত্যিক। সাহিত্যের দিগন্তে। সাহিত্যের পরিসরে জমে উঠতে থাকে রাশি রাশি জেরক্স কপি। মৌলিক সাহিত্যের পুষ্টির আকাল দেখা দায় তখনই। কিন্তু কবি খ্যাতি বা সাহিত্যিক খ্যাতির বিন্দুমাত্র ক্ষয়ক্ষতি হয় না তাতে। ভক্ত পাঠককুলের অন্ধভক্তির উপাচারে, প্রাতিষ্ঠিনিক বরাভয়ের সৌজন্যে, সংবাদমাধ্যমের দৌলতে প্রতিষ্ঠিত কবি সাহিত্যিকরা বেঁচে থাকেন তাঁদের লব্ধ প্রতিষ্ঠার কবিখ্যাতি সাহিত্যিক খ্যাতি নিয়ে। স্তব্ধ প্রতিষ্ঠিত হয়ে। ওদিকে সাহিত্যের শাশ্বত দিগন্তে সত্য সত্যই মৃত্যু হয়ে যায় তাঁর সাহিত্যিক প্রতিভার। সৃজনশীল সত্ত্বার। সে কথা খেয়াল থাকে না কারুরই।
খ্যাতির বিড়ম্বনা এমনই। আর তখনই দুইটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে। সমকাল বস্তুত আবেগসর্বস্ব উত্তেজনার বশবর্ত্তী হয়ে কোন কিছুই তলিয়ে দেখার মতো ধৈর্য্য রাখে না। খ্যাতির জাঁকজমকের রোশনাইতে চোখ ধাঁধিয়ে যায় সমকালের। এবং অধিকাংশ সাহিত্যিকই খ্যাতির মোহে দিকহারিয়ে ফেলেন একটা সময়ে পৌঁছিয়ে। সেখানেই মৃত্যু হয় একজন সাহিত্যিকের। কিন্তু এতো গেল সাহিত্যিকের স্বাভাবিক মৃত্যুর আলোচনা। আমাদের বাংলায় অধিকাংশ বিখ্যাত সাহিত্যিকই বর্তমানে খ্যাতির ভেন্টিলেশনে এইভাবে বেঁচে রয়েছেন তাঁদের সাহিত্যিক সত্ত্বার মৃত্যু ঘটে যাওয়ার পরেও। কিন্তু এর বাইরেও অনেক সময়ে কোন কোন সাহিত্যিকের অপমৃত্যু হতেও দেখা যায়। না, অপমৃত্যু বলতে রোড এক্সিডেন্টে মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে না। একজন সাহিত্যিকের নৈতিকতা ও সাহিত্যবোধের মৃত্যুর কথাই বলা হচ্ছে। কখন ঘটে এমন অনভিপ্রেত ঘটনা? ঘটে যখন সাহিত্যিকের সাহিত্যিক সত্ত্বাকে ম্লান করে দিয়ে তাঁর ব্যক্তিসত্ত্বাই প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে পরিচালিত করতে থাকে তাঁর সকল গতিবিধি। তিনি তখন নিজের মধ্যে তাঁর সাহিত্যিক সত্ত্বাকে আর খুঁজে পান না। আপন ব্যক্তিসত্ত্বার প্রবল পরাক্রম তাঁকে পরিচালিত করতে থাকে। ঠিক যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাপতির নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে সৈন্যরা।
আর তখনই তিনি তাঁর একান্ত ব্যক্তি জীবনের হিসাব নিকাশ মেলাতে বসে যান তাঁর বিশ্বস্ত কলমকেই আশ্রয় করে। একদিন যে কলম থেকে সৃষ্টি হতো অনুপম সাহিত্য, আজ সেই কলম থেকেই সৃষ্টি হতে থাকে ব্যক্তিগত বিদ্বেষের তীব্র গরল। কবি ভুলে যান, কোনটা সাহিত্য আর কোনটা বিদ্বেষ! বা আপন স্বার্থের চরিতার্থতায় ব্যক্তিগত বিদ্বেষের গরলকেই তিনি তখন সাহিত্যের সামগ্রী বলে চালাতে শুরু করে দেন। আর তখনই অপঘাতে মৃত্যু ঘটে তাঁর সাহিত্যিক সত্ত্বার। বা বলা ভালো নিজের সাহিত্যিক সত্ত্বাকেই নিহত করে সাহিত্যে অপসাহিত্যের ভেজাল মেশাতে শুরু করেন কবি নিজে। এবং সচেতন ভাবে। কারণ তিনি জানেন তাঁর ভক্তকুল তাঁর কবিখ্যাতিতেই এই ভেজালকেও সাহিত্যের সামগ্রী মনে করে উদ্বাহু হবে। আর বাকিরা নিন্দার ঝড় বইয়ে দিলেও সাহিত্যের হাটে তাঁকে নিয়ে যে কোলাহল উঠবে, তাতে তিনিই থাকবেন তাঁর কবিখ্যাতির উত্তুঙ্গ মিনারে আসীন হয়ে।
এই যে ব্যক্তিগত স্বার্থের আগুনে নিজ সাহিত্যিক সত্ত্বাকে বিসর্জন দিয়ে নিজের আত্মগরিমা, দর্পকে, নিজের অহংকার ঔদ্ধত্বকে উজ্জীবিত রাখার একান্ত তাগিদ, এই প্রবণতা কোন সাহিত্যিককেই কালোত্তীর্ণতায় পৌঁছাতে দেয় না। বরং তাঁকে সীমায়িত করে রাখে তাঁরই নিজ আয়ুর কোঠায়। তাঁর কলম থেমে যাওয়ার পর তিনিও একদিন হারিয়ে যাবেন সাহিত্যের ভুবন থেকেই। কারণ মহাকালের দিগন্তে খুব দ্রুতই একদিন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পরবেন তিনি। সমকালের কোলাহল মিটে গেলে মানুষের আগ্রহের বৃত্ত থকে অপসৃত হয়ে যাবে তাঁর ছায়া। না এত সব ভাবার সময় পান না খ্যাতিমান কবি। আপন খ্যাতির মোহান্ধতায় তিনি সদর্পে মনে করতে থাকেন, তাঁর মুখনিঃসৃত শব্দমাত্রই কবিতা। তিনি দুকলম লিখে দিলেই তা সাহিত্যের সামগ্রী। আর এই বিশ্বাসেই তিনি ভাবতে থাকেন কবিখ্যাতির এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েই তিনি হিসাব মিটিয়ে নেবেন ব্যক্তিগত জীবনের নানান না মেটা হিসাবের। যেকোন সাহিত্যিকের ক্ষেত্রেই এই পরিণতি নিতান্তই লজ্জার এবং নিদারুণ নৈরাশ্যজনক। আরও বেশি হতাশজনক যে কোন ভাষার সাহিত্যের প্রেক্ষিতেই। আর ভয়াবহ সেই ভাষার সাহিত্যের ভবিষ্যতের পক্ষেই।
পিতৃতন্ত্রের গরল
নবযুগ ব্লগে প্রকাশিত প্রবাসী কবির যে লেখাটি নিয়ে এত কোলাহল, তার মজ্জায় মজ্জায় ব্যক্তি বিদ্বেষের পরতে পরতে উপচিয়ে পড়ছে পিতৃতন্ত্রণের গরল! একথা সত্য, মানব সভ্যতায় সাহিত্যের বিবর্তনও পিতৃতন্ত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। শুধু সাহিত্য কেন সৃজনশীলতার প্রত্যেকটি ধারাই বিবর্তিত হয়েছে পিতৃতন্ত্রেরই অভিঘাতে। কিন্তু সে আলোচনা অন্য সময়ে। একজন সাহিত্যিক, তিনি তো এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজেরই উৎপাদন। ফলে তাঁর সাহিত্য সেই পিতৃতন্ত্রের কলমেই যে রচিত হতে থাকবে সেটাও স্বাভাবিক। আবার পিতৃতন্ত্রের বিরোধী যিনি, তাঁর কলমে ফুটতে থাকবে বিরোধের মন্ত্র। কিন্তু এইসবের বাইরেও একজন ব্যক্তি মানুষ যখন সাহিত্য ছেড়ে সৃজনশীলতার উঠান ডিঙিয়ে নিজস্ব ব্যক্তি জীবনে আসীন হয়ে চলাফেরা করেন তখন তাঁর ভাবনা ও কার্যক্রমও পরিচালিত হতে পারে পিতৃতন্ত্রেরই পরিসরে। আর এমনটা হওয়াও খুবই স্বাভাবিক। কারণ সেইটিই তো হয়ে থাকে। সেই পিতৃতান্ত্রিক মনোবৃত্তি বা শুধু মনোবৃত্তিই বা বলি কেন, শারীরবৃত্তিও একজন সাহিত্যিকের ব্যক্তিজীবনকে পরিচালিত করে থাকে। এর বাইরে আমরা কেউই নেই। আর সেই ব্যক্তিজীবনে একজন পুরুষ একজন নারীকে কোন দৃষ্টিতে দেখবে আর দেখবে না, সেটি একান্তই তাঁর ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিসর। বাইরে থেকে সেখানে নাক গলানো অনুচিত। অনধিকার চর্চা। কিন্তু মুশকিল হয় তখনই যখন একান্ত ব্যক্তিগত সেই পরিসরটিকে কেউ বাইরের উন্মুক্ত পরিসরে মেলে ধরেন। মেল ধরেন তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের না মেটা হিসাব নিকাশ মেলানোর জন্যেই।
আর এইটিই পিতৃতন্ত্রের আর একটি দিকও বটে। পিতৃতন্ত্র যখনই নারীর ব্যক্তিসত্ত্বার কাছে হোঁচট খেয়ে সাময়িক হতচকিত হয়ে পড়ে, তখনই সেই ধাক্কাটুকু কাটিয়ে ওঠার জন্যেই উন্মুক্ত হাটে সেই ঘটনাকে প্রকাশ্যে এনে নারীর স্বাধীন ব্যক্তিসত্ত্বাকে কোনঠাসা করতে উঠে পড়ে লাগে। মানুষের ইতিহাসে এটি কোন নতুন ঘটনা নয়। এইভাবেই পিতৃতন্ত্র চিরকাল নারীর স্বাধীন ব্যক্তিসত্ত্বার হাত থেকে আত্মরক্ষা করে চলেছে। আমাদের প্রতিটি ঘরেই কম বেশি এই একই চিত্রের ঊনিশবিশ দেখা যায়। আমাদের অধিকাংশের ভাবনা ও কার্যক্রমেই এই প্রবণতা রয়েছে। সেকথা আমরা স্বীকার করি বা না করি। সত্য সত্যই থাকে। মিথ্যা হয়ে যায় না। হ্যাঁ আমরাই আবার ওপর চালাকির নানান ফন্দি ফিকিরে সেই সত্যকে ধামাচাপা দিতেও যথেষ্ট দক্ষতার প্রামাণ রাখি। সে কথাও সমান সত্য। আসলে পিতৃতন্ত্রের মূল শিক্ষাই হলো বীর ভোগ্যা বসুন্ধরা। আর পুরুষের ভোগ্য নারী। আমদের সকলের চিন্তাচেতনার আদি গঠনেই এই মন্ত্র রাবণের চিতার মতো জ্বলতে থাকে। আর সেটাই আমাদের কর্মে আর ধর্মে প্রকাশমান। এই তো মানুষের মূল ইতিহাস। কজন আমরা এই শাশ্বত শৃঙ্খল থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারি?
পারি না বলেই সময়ে অসময়ে আমাদের ভাবনা আমাদের কাজ আমাদেরকে দিয়ে এমন এমন নিকৃষ্টতম কাজও করিয়ে নেয়, যে কাজে মনুষ্যত্বের চরম অপমান। যে কাজে আমাদের আত্মসম্মান ধুলায় লুটাতে থাকে। যে কাজে আমাদের ঔদ্ধত্ব আমাদেরকে খাটো করে দেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দর্পের দাপাদাপিতে আমরা খেয়াল করতে পারি না সেসবের কোনকিছুই। বরং অনেক ভেবে চিন্তে অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে নারীকে অপমান করার অস্ত্রশস্ত্রে শান দিতে থাকি পৌরুষের অপরিমেয় অহংকারে প্রায় কাপুরুষের মতোই। তখনই সম্ভব হয় নিজের ব্যক্তিগত জীবনের না মেটা হিসাব নিকাশকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসে, নিজেরই অক্ষমতাকে ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করার। একটু তলিয়ে দেখার অবসর থাকলে আমরা অনেকেই বুঝতে পারতাম, এতে পৌরুষেরই সবচেয়ে বড়ো অপমান। কিন্তু পিতৃতন্ত্রের ঠুলি পড়ে আমরা এমনই অন্ধ হয়ে থাকি, যে সেই অপমান আমরা কখনোই দেখতে পাই না স্পষ্ট করে। ফলে ক্রমাগত ঘটতে থাকে ঘটনার পুনরাবৃত্তি। শুধু বদলে যেতে থাকে পাত্রপাত্রী।
আর এইভাবেই আমাদের নৈতিক অধঃপতনের মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যেতে থাকে পিতৃতন্ত্রের জয়রথ। আমাদের কর্মে আর আমাদের ধর্মে এইভাবেই পিতৃতন্ত্র অত্মরক্ষার বন্দোবস্ত করে চলে নিরন্তর। আর পিতৃতন্ত্রের এই গরল যখন সৃজনশীলতার দিগন্তে সৃষ্টিশীল কলমকেই হাইজ্যাক করে নেয়, তখন সত্যই বড়ো দুঃসময়। দুঃসময় শুধুই সেই সাহিত্যিকের নয়, যাঁর অপমৃত্যুর দস্তখত পড়ে গেল তাঁরই নিজের লেখনীতে। দুঃসময় সমাজ ও সাহিত্যেরও। পিতৃতন্ত্রের গরলকে সাহিত্যের সামগ্রী বলে চালানোর এই অপচেষ্টা সমাজ ও সাহিত্যের প্রেক্ষিতে এক মস্তবড়ো অভিশাপ। একটু চোখকান খোলা রাখলেই দেখা যাবে আমাদের বাংলায় আমাদের বাংলা সাহিত্যে এই অভিশপ্ত সময়ের বলয় ঘিরে ধরেছে গোটা সমাজটিকেই। আমাদের সাহিত্যে নানান ভাবেই পিতৃতন্ত্রের গরল সম্ভূত আবর্জনার স্তূপ জমে উঠেছে। আর যে কোন সাহিত্যেই সে এক দমবন্ধ মেধাহীন বুদ্ধি চর্চার পরিসর গড়ে তোলে। গড়ে উঠছে আমাদের সাহিত্যেও।
সাহিত্যের আবর্জনা
হ্যাঁ এইরকমই নানান ভাবে স্তূপীকৃত হয়ে উঠতে থাকে সাহিত্যের আবর্জনা। এখন প্রশ্ন সাহিত্যের পরিবেশ দূষণের এই পরিস্থিতিকে কিভাবে সামলাবে সমাজ। এক একটি সমাজের বিধিবিধান রীতিনীতি লোকাচার এক এক রকম। কোন সমাজ কিভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে, সেটি সেই সমাজের একান্ত অভ্যন্তরীন বিষয়। বিভিন্ন দেশের সাহিত্যের ইতিহাস চর্চা করলে সাধারণভাবে একটি বিষয় পরিস্কার উঠে আসে। সেটি হল কালের ছাকনী। সমকাল কবিখ্যাতির যে মোহান্ধতায় পরিষ্কার দেখার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে, মহাকাল ফিরিয়ে নিয়ে আসে সেই দৃষ্টিশক্তির স্বচ্ছতাকেই। তাই আজকের আবর্জনা কালকে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবেই। আর তখন সুস্থ পথিকের মতোই সাহিত্যের পাঠক পূতিগন্ধময় আবর্জনাকে পাশ কাটিয়ে পথ করে নেবে ঠিক। খুবই ঠিক কথা। কিন্তু তারপরেও কি কথা থেকে যায় না? যায় নিশ্চয়ই। আজকের আবর্জনা আজকে যে দূষণের জন্ম দিচ্ছে তার ফলে যে বিকলাঙ্গ মেধার উন্মেষ হবে না, সে নিশ্চয়তা কে দিতে পারবে? ফলে আমাদের সাহিত্যের স্বাভাবিক অগ্রগতি যে ব্যহত হবে না কোনদিন, বা এখনই হচ্ছে না; আমরা সত্যই কি নিশ্চিত সেই বিষয়ে? খুব গভীর এই সমস্যা। আমরা অধিকাংশই ঠিক পরিচিত নই এই সমস্যার সাথে। সাহিত্যের স্বাভাবিক অগ্রগতির জন্যে দূষণহীন আবর্জনাহীন সাহিত্যের পরিবেশের গুরুত্ব সম্বন্ধে কজন আর সচেতন আমরা?
না প্রায় কেউই এই বিষয়টি নিয়ে ভাবি না। ভাবলে সত্যিই শিউরে উঠতে হতো। তখন এই কবিখ্যাতি বা সাহিত্যিক খ্যাতি আর পিতৃতন্ত্রের ককটেল মিলে তৈরী হওয়া সাহিত্যের অবর্জনার স্তূপ আমাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিত। আমরা বুঝতে পারতাম আমাদেরও শপথ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল প্রাণপণে জঞ্জাল সরিয়ে এই বিশ্বকে উদীয়মান সাহিত্যিকের জন্যে বাসযোগ্য করে রেখে যাওয়ার। না অতদূর অবধি ভাবতে পারিনি আমরা কেউই। আমাদের আলচনা তর্ক বিতর্ক সবকিছুই মূলত আবর্তিত হয় ঘটনার ঘনঘটাকেই কেন্দ্র করে। কিন্তু বিষয়ের গভীর গিয়ে সমস্যার সমাধানের জন্যে অসুখের কার্যকারণ অনুসন্ধানে আমাদের সাধনা নাই। তাই আজকের আলেচনা কালকেই বাসি হয়ে পড়ে। আবার কালকের ঘটনা আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। আমরাও মশগুল হব সান্ধ আড্ডার মৌতাতে।
আজকের আলোচনার বিষয়টি তাই কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কোন কবি বা সাহিত্যিকের নির্দিষ্ট কোন লেখাকে কেন্দ্র করে হওয়া উচিত নয়। এটিকে সিমটম ধরে মূল রোগের শিকড়ে গিয়ে পৌঁছানোটিই আজ সবচাইতে বেশি জরুরী। আমাদের দেখতে হবে আমরা ঠিকমত করে আসল রোগটিকে চিহ্নিত করতে পারছি কিনা। পারলে তবেই আমরা খঁজে নিতে পারবো রোগমুক্তির পথ। মনে রাখতে হবে, এই রোগ এক আধজনের ব্যক্তি বিশেষের রোগ নয়। এই রোগ পিতৃতন্ত্রের রোগ। এবং এই রোগ এই বাংলার সমাজ বাস্তবতার রোগ। এই রোগ সাহিত্যের হাটে প্রকট হয়ে দেখা দিক বা নাই দিক, এইরোগ থেকে সমাজকে মুক্ত করতে না পারলে বাংলা সাহিত্যেরও রোগমুক্তি ঘটবে না কোনদিন। আর বিনা চিকিৎসায় ভুগতে ভুগতে পক্ষাঘাতের রুগী হয়ে পড়ার সম্ভাবনাই থাকে বেশি। সে কথা আমরা কে না জানি। আর তাই সাহিত্যকে সাহিত্যের আবর্জনার হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব সমাজকেই নিতে হবে। না নিলে এইভাবে অপমৃত্যু ঘটতে থাকবে এক একজন দাউদ হায়দারদের।