ঢাকা এখন ঘটনার শহর। যে কোন মূহুর্তে শেখ হাসিনার সরকার বিদায় নিতে পারে। এই বিদায় মর্মান্তিক হত্যা ক্যুর মধ্য দিয়ে ঘটলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই। পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের মতই ১৫ আগস্টের মত আরেকটি রক্তাক্ত ক্যু’র সামনে কন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ তখন সেই ক্যু ঘটাতে দেশি ও বিদেশী পক্ষ ব্যস্ত। এ ক্যু’র সঙ্গে সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ, সুশীল সমাজ, আওয়ামী লীগের একাংশ, ইসলামি রাজনৈতিক দল, বিএনপি ও মিডিয়া যুক্ত। একবার ক্যু সংগঠিত হলে ক্যুদেতারা যার যার দায়িত্ব পালনে সবাই সোচ্চার থাকবে। মিডিয়াতে উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনা মূহুর্তেই জাতীয় খলনায়কে পরিণত হবে। বের হবে এন্তার দুর্নীতি। যার প্রধান টার্গেট থাকবে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবার।
শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চলছে
শেখ হাসিনাকে বহুদিন ধরেই হত্যার চেষ্টা চলছে। এপর্যন্ত শেখ হাসিনাকে কম করে হলেও ২০ বার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ বারের কথা আওয়ামী লীগ স্বীকার করে। তবে এবছর ২৪ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার কথা আওয়ামী লীগ কৌশলগত কারণে স্বীকার করে না।
আওয়ামী লীগ সমস্যা নয়, ব্যক্তি হাসিনার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বকেই চরম ডানপন্থীরা ভয় করে। বিএনপি জামাত জোট আমলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা যখন হয় তখন স্রেফ দৈবক্রমে শেখ হাসিনা বেঁচে যান। এই হামলায় প্রত্যক্ষ মদদ দিয়েছিলেন তারেক রহমান। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইই ব্লু প্রিন্টে এ হামলা হয়। হামলারকারীদের অন্যতম পরিকল্পনাকারী একজন তাজউদ্দিন হলেন বিএনপি নেতা ও চার দলীয় জোটের ধর্মপ্রতিমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি লাল্টুর আপন ছোট ভাই। তাজউদ্দিনের ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে পাঞ্জাবির একটা দোকান ছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ২১ আগস্ট হামলার পরও তাজউদ্দিন নিয়মতি যেতো। তাকে বাংলাদেশ থেকে প্রথমে পাকিস্তান, তারপর দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে আইএসআই তারেক রহমানের নির্দেশে।
সাম্প্রতিককালে শেখ হাসিনাকে হত্যার একটা চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ‘এনএসআই ‘ ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। গত ২৪ আগস্ট এসএএসএফের কতিপয় সদস্য হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। আইএসআই এ হত্যার সব আয়োজনও ঠিক করে ফেলে। বিষয়টি ধরা পড়ে যায় ক্যুদেতাদের টেলিফোন ইন্টারসেপ্ট করার ফলে।
এ বিষয়ে নিউজ১৮ (এটি সাবেক আইবিএনসিএনন যেখানে সিএনন যুক্ত রয়েছে)তে Jihadi Conspiracy to Assassinate Bangladesh PM Sheikh Hasina Foiled In The Nick of Time শিরোনামে একটি রিপোর্টও প্রকাশিত হয়। পাঠকরা নিউজটি পড়ে দেখতে পারেন।
এরপর জাতিসংঘ সফরকালেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই, ডিজিএফআই ও এনএসআই শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দেন, তিনি যেনো ঘর থেকে না বের হোন। তাঁর জীবন বিপন্ন। শেখ হাসিনা তাঁর বিদেশ সফর পরিবর্তন করেন। দেশে ফিরেই তিনি ঘোষণা দেন, তিনি অসুস্থবোধ করায় কিছুদিন বাইরে বের হবেন না। বাস্তবতা হলো, শেখ হাসিনার জীবন বিপন্ন। শেখ হাসিনাকে যদি হত্যা করা যায় তাহলে তার পরিণতি কী সেটি সবাই আন্দাজ করতে পারেন। কিন্তু তাকে কীভাবে জাতীয় খলনায়ক বানানোর পরিকল্পনা হচ্ছে তা এখনো কেউ ভাবতে পারছেন না।
ক্যুদাতা কারা?
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই যেকোনোভাবেই চায় শেখ হাসিনাকে ফেলে দিতে। আইএসআই’র সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বিএনপি, জামাতসহ ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো এবং আইএসআই প্রভাবাধীন কিছু নিউজ মিডিয়া।
আইএসআই ছাড়াও শেখ হাসিনাকে বিপদে ফেলতে চায় যুক্তরাষ্ট্রপন্থী কিছু ছোট ছোট রাজনৈতিক দল ও শক্তিশালী দুটি মিডিয়া। এরপর রয়েছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’এর ডুয়েল রোল বা দ্বৈতনীতি। মূলত ‘র’এর এটি চাপ প্রয়োগের কৌশল। সেটি হলো হাসিনাকে বিপদে ফেলে হাসিনার কাছ থেকে বেশি সুবিধা আদায় করার নীতি। আর নীতি বাস্তবায়নের জন্য বিচারপতি এসকে সিনহাও কিছুদিন দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেই শেখ হাসিনাকে বিপদে ফেলার জন্য একটি চক্র সক্রিয়।
আইএসআইয়ের ফ্রন্টে যারা আছে
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই একটি বিশাল ফ্রন্ট খুলেছে শেখ হাসিনাকে উৎখাতে। এ ফ্রন্টে রয়েছে বিএনপি, জামাত ছাড়াও জঙ্গিবাদী ইসলামি দলগুলো। তাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশে পাকিস্তানী মতাদর্শের রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনা। এটি করতে পারলে বাংলাদেশে বসে ভারতের পূর্বাঞ্চলে যে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে, সেখানে অস্ত্র ও অর্থ সহজেই পাঠাতে পারবে আইএসআই। এর আগে যেভাবে বিএনপি জামাত জোটের আমলে ভারতের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহীদের কাছে অস্ত্র পাঠিয়েছে। চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান তারই একটি বিএনপি আমলে ধরা পড়ে। এ চালানটি ধরা পড়তো না যদি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’না ধরিয়ে দিতো।
তবে আইএসআই যদি শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে যাতে বিএনপি জামাত জোটের জয় হয় সেদিকেও তারা খেয়াল রাখছে। অর্থ্যাৎ প্লান ‘A’ হলো শেখ হাসিনাকে হত্যা করা, সেটি সফল না হলে প্লান ‘B’ হলো নির্বাচনে বিএনপি জামাত জোটকে জয়ী করা। এজন্য ব্যাপক আকারে মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের দূর্নীতি, দুঃশাসনের বিষয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে।
আগামি নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের মিডিয়াতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করার অংশ হিসেবে দেশের অন্তত ৩০০ গণমাধ্যম কর্মীকে টার্গেট করেছে আইএসআই।। প্রগতিশীল গণমাধ্যম হিসেবে পরিচিত টিভি, রেডিও, অনলাইন, মুক্তমনা ও নারীবাদী হিসেবে পরিচিত কিছু ব্লগসাইট, দৈনিক পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকদের পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে নগদ অর্থ ও বিভিন্ন উপহারের মাধ্যমে দলে টানার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরে এসে এসব সাংবাদিক আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিজ নিজ মিডিয়াতে ভূমিকা রাখবে। নির্বাচনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া নিয়ন্ত্রণেই এমন কৌশল নিয়েছে আইএসআই।
আইএসআই পরিচালিত বাংলাদেশের মিডিয়া কর্মীদের সেখানে নিয়ে গিয়ে মগজ ধোলাইয়ের কাজটি হয়ে থাকে ‘দোস্তি’কর্মসূচির আওতায়। এ কর্মসূচিতে কত অর্থ ব্যয় হয়, কোন সাংবাদিককে কত টাকা দেয়া হয় সে তথ্য বাইরে আসে খুবই কম। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন, দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকার অন্তত ৪০ জন সাংবাদিক পাকিস্তান থেকে ‘দোস্তি’ কর্মসূচির আওতায় ঘুরে এসেছেন।
ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া দক্ষিণে ঘুরে যাবে
বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত বসুন্ধরা গ্রুপ গত আট বছরে আওয়ামী লীগের পক্ষে অনেক প্রচার প্রপাগান্ডা করেছে। কিন্তু এই গ্রুপটির রাজনৈতিক মতাদর্শ সামান্যতমও পরিবর্তন হয়নি। বসুন্ধরা গ্রুপ মিডিয়া দখল করতে দুটি বাংলা পত্রিকা ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন‘ ও ‘কালের কণ্ঠ‘, একটি ইংরেজি পত্রিকা ‘ডেইলি সান‘, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর‘, ‘রেডিও ক্যাপিটাল‘ ও ‘নিউজ২৪‘ নামে টেলিভিশন রয়েছে। এতোগুলো গণমাধ্যমের মধ্যে একমাত্র ‘কালের কণ্ঠ‘ সমাজের প্রেসার গ্রুপের কাছে কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা পায়। বাংলাদেশ প্রতিদিনির প্রচার সংখ্যা বেশি হলেও পত্রিকাটি প্রেসার গ্রুপের কাছে তেমন কোন আবেদন নেই। আর এ প্রতিষ্ঠানের টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন পোর্টাল ও ইংরেজি দৈনিকের প্রেসার গ্রুপের কাছে প্রভাব নেই বললেই চলে।
বসুন্ধরা গ্রুপ কালের কণ্ঠের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে মোস্তফা কামালকে। টিভি চ্যানেলের সেকেন্ডম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে হাসনাইন খুরশিদ সুচিকে। তবে এসবের পেছনে সবকিছু পরিচালনা করছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম। নঈম নিজাম ‘র’ বিশ্বস্ত হলেও মূলত তিনি সুযোগ সন্ধানী। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির মালিক সদ্য প্রয়াত হান্নান ফিরোজের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে তিনি টেলিভিশন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তবে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ তাঁর জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছে। নিউইয়র্কে বাড়ি করেছেন নঈম নিজাম, ঢাকার মোহাম্মদপুরে শত কোটি টাকার সরকারি বাড়ি নিয়েছেন নিজের নামে। মূলত তাঁর সাথে বসুন্ধরা গ্রুপের সম্পর্ক হলো ক্ষমতা ও অর্থের। যদি দেশে কোন বড় পরিবর্তন হয় তাহলে নঈম নিজাম দেশের বাইরে চলে যাবেন। এক মূহুর্তও তিনি দেশে থাকবেন না।
সরকার ও ‘র’ এর সাথে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা বসুন্ধরা গ্রুপ নঈম নিজামকে পেলেপুষে রাখছে তাদের স্বার্থেই। তবে নঈম নিজামকে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবার সোবহান যতটা প্রশ্রয় দেয় তারচেয়ে বেশি প্রশ্রয় দেয় গ্রুপটির এমডি সায়েম সোবহান আনবীর। এর কারণ হলো পারিবারিক ব্যবসা থেকে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা বসুন্ধরার বর্তমান এমডি যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়েছেন। এ জন্য নঈম নিজাম ও আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ তাঁকে সাহায্য করেছেন। ফলে নঈম নিজামের বর্তমান খবরদারিত্ব কোন আদর্শিক কারণে নয়, যে কোন মূহুর্তে পরিস্থিতি পাল্টে গেলে বাংলাদেশ থেকে তাঁরা ভেগে যাবেন। আর তখন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া দেখবেন দু’জন মানুষ। একজন হলেন কালের কণ্ঠের বর্তমান নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল অন্যজন হলেন নিউজ ২৪ টিভির হাসনাইন খুরশেদ সুচি।
বসুন্ধরা গ্রুপ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভারতের কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করে। এ জন্যই তারা নঈম নিজামকে হাত করে। বাস্তবে এ গ্রুপটিতে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদি সংগঠন উলফার বেশ কিছু বিনিয়োগ রয়েছে। উলফা শুধু বসুন্ধরাতেই বিনিয়োগ করেনি, তারা বিনিয়োগ করেছে নাভানা রিয়েল এস্টেট, যমুনা রিয়েল এস্টেট, শমরিতা হাসপাতালসহ দেশের বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে। তবে তাদের প্রথম বিনিয়োগ ছিলো প্রথম আলো মালিকের ট্রান্সকম গ্রুপে। প্রথম আলোর মালিক লতিফুর রহমানের স্ত্রী উলফার প্রধান পরেশ বড়ুয়ার আপন চাচাতো বোন। প্রথম আলোর মালিক টাকা মেরে দেওয়ার কারণে উলফার কর্মীরাই লতিফুর রহমানের মেয়ে শাজনীনকে হত্যা করে।
এভাবেই উলফা ক্রমশ অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে চলে যায়।
দেখুন এ সংক্রান্ত আরও তথ্য –
১) DREAMWORLDS AND EVIL PARADISES
২) ULFA Investment Document Fiasco
৩) Ulfa’s Paresh Baruah invested millions in Bangladeshi firms
৪) Paresh Baruah invested millions of dollars in Bangladesh companies: Report
৫) Paresh Baruah invested millions of dollars in Bangladesh companies: Report
৬) Paresh Baruah invested millions of dollars in Bangladesh firms: Report
উলফার সাথে বসুন্ধরার সম্পর্ক রয়েছে এটি ফাস হবার পর বসুন্ধরা এতো বেশি ভারতীয় সাজার চেষ্টা করে যে তারা ভারতের স্বামী বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশনে ২০০ কোটি টাকা দান করে। এরকম অসংখ্য অর্থ তারা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে দেয়া শুরু করে।
হাসনাইন খুরশেদ সুচি এর আগে হামিম গ্রুপের মালিকানাধীন চ্যানেল ২৪ এ ছিলেন, তার আগে তিনি এনটিভিতে ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিএনপির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই ব্যক্তি মুখিয়ে আছেন কখন তাঁর দলের পারপাস সার্ভ করা যায়।
অন্যদিকে কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল হলেন আইএসআইয়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। আইএসআই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যে ৩০০ সাংবাদিককে পাকিস্তানে নিয়ে যেতে চায় তা আড়ালে থেকে সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন মোস্তফা কামাল। আর উপরে উপরে তিনি বিএনপির নেতাদের সাথে সখ্য গড়ে তোলেন।
আইএসআই যখন বাংলাদেশের সাংবাদিকদের টার্গেট করে ‘দোস্তি’ প্রোগ্রামটি শুরু করে তখন প্রথম কিস্তিতে যেসব সাংবাদিক পাকিস্তানে গিয়েছিলেন তার প্রথম দলে ছিলেন মোস্তফা কামাল। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান থেকে তিনি আফগানিস্তানেও যান, সেখানে তালেবানদের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠ অবস্থার বিবরণ দিয়ে তিনি রিপোর্টও লিখতে থাকেন। এটি সবাই জানে যে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের অন্যতম ঘনিষ্ঠ হলো আফগান তালেবানরা।
আইএসআইয়ের ‘দোস্তি‘ নামের এ প্রজেক্টের মূল বিষয় হলো বাংলাদেশের সাংবাদিকদেরকে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তান সম্পর্কে একটি ইতিবাচক ধারণা দেয়া। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষা করা। আইএসআই’র বিশ্লেষকদের বাংলাদেশের গণমাধ্যম সম্পর্কে যে বিশ্লেষণ তাতে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের প্রভাবশালী মিডিয়া হাউজগুলো চরমভাবে জামাতে ইসলাম ও পাকিস্তান বিদ্বেষী। আর গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা রাজনৈতিকভাবে জামাত ও পাকিস্তান বিরোধীতা করে থাকে, এ কারণে তারা এখন বিএনপিরও বিরোধীতা করছে। সাংবাদিকদের পাকিস্তানের পক্ষে ইতিবাচক ধারণা দেয়া ও জামাত সম্পর্কে নেতিবাচক সাংবাদিকতা বন্ধ করার জন্য আইএসআই বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কেনার জন্য বিশেষ এই প্রজেক্টটি ওপেন করে।
মোস্তফা কামাল অবশ্য শেখ হাসিনার ক্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করেন নি। এর আগেই তিনি সুক্ষ্ণভাবে শুরু করেছেন পত্রিকায় ও নিজের বিভিন্ন ফোরামে উপস্থিত হয়ে। গত রমজানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একইদিনে ইফতারির আয়োজন করেন। এদিনে শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় প্রেসক্লাবে ইফতারি পালনে হাজির হন দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে পেশাজীবীরা ইফতার পার্টিতে হাজির হন বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে। দোস্তি কর্মসূচিতে যেসব সাংবাদিকরা পাকিস্তানে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে প্রভাবশালীরা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ইফতার পার্টি প্রত্যাখান করে খালেদা জিয়ার ইফতার পার্টিতে হাজির হন। খালেদা জিয়ার ইফতার পার্টিতে কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল গিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার ডানপাশে বসে তিনি ইফতার করেছেন।
কালের কণ্ঠে গত এগারো মাসে এমন সব খবর বেরিয়েছে যা জামাতের পত্রিকা নয়াদিগন্ত ও সংগ্রামেও বের হয়নি। সম্প্রতি ইকোনোমিস্টের আপত্তিকর ভুল তথ্যে ভরা একটি প্রতিবেদনের অনুবাদ ‘আপত্তিকর’ শিরোনামে প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ। ইকোনোমিস্টের ওই প্রতিবেদনটি দেশের আর কোন সাংবাদপত্রে পরেরদিন প্রকাশিত হয়নি। এমনকী জামাতের পরিচিত দু’টি পত্রিকার কোনটিতেই ছাপা হয়নি। বর্তমানে পত্রিকাটিতে জামাত প্রভাবিত লোকেরা নিয়ন্ত্রণ করছেন।
চ্যানেল ২৪ ও সমকাল
হামিম গ্রুপের একে আজাদের মালিকানাধীন চ্যানেল ২৪ মূলত সুশীল সমাজের প্রতিনিধি মার্কিনপন্থি একটি চ্যানেল। এ চ্যানেলের অন্যতম পরামর্শদাতা ছিলেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমানে নাগরিক ঐক্যর প্রধান মাহমুদুর রহমান। যিনি বিএনপির সাদেক হোসেন খোকার সাথে মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিলেন। মাহমুদুর রহমানের ডানহাত হিসেবে পরিচিত বেগ শাহিন জাহান। তিনি গত বিএনপি জামাত জোট আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। তবে এ চ্যানেলটিতে শিবির দ্বারা পূর্ণ।
এ তালিকায় রয়েছেন চ্যানেলটির আউটপুট এডিটর বিপ্লব শহীদ, ইনপুট আউট এডিটর তালাত মাহমুদ। জয়েন্ট নিউজ এডিটর আমিন আল রশিদ। এছাড়া বার্তাকক্ষে ও রিপোর্টিংয়ে শিবির কর্মী দ্বারা পূর্ণ। বিষয়টি দেশের গোয়েন্দা বিভাগ আগে থেকেই অবগত আছেন। এরপরও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেয়নি।
চ্যানেল ২৪ এর মালিক একে আজাদ হলেও চ্যানেলটির লাইসেন্স নেয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাতো ভাই শেখ কবিরের নামে। একে আজাদ ও সদ্যপ্রয়াত একজন মেয়রের যড়যন্ত্রের কথা জানার পর চ্যানেলটির মালিকানা পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। তবে শেখ ফরিদ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি চ্যানেলটি।
এই টাইম মিডিয়া থেকে সমকালও বের হয়। বর্তমানে চ্যানেল ২৪ নতুন সিইও নিয়োগ দেয়া হয়েছে সরকারের ইচ্ছেতে। নতুন সিও হলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা জীবন কানাই দাস। তবে নতুন সিও দিয়ে সরকার চ্যানেলটি কব্জায় নিতে চাইলেও চ্যানেলের ভেতরে থাকা অসংখ্য শিবির কর্মী বিপজ্জনক ঘটনা যে কোন সময় ঘটাতে পারে।
একই অবস্থা দৈনিক সমকালের। সমকালের সম্পাদক বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও স্বাধীনতার পক্ষের পরীক্ষিত বন্ধু গোলাম সরওয়ার। কিন্তু পত্রিকায় তার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। যেমন নেই কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের। একইভাবে সমকালের নিয়ন্ত্রক হলেন পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক মোস্তাফিজ শফি। সাবেক এই শিবির কর্মীই এখন সমকালের ত্রাণকর্তা। আগামি জানুয়ারিতে সমকাল থেকে বিদায় নিবেন গোলাম সরওয়ার। তিনি জাতীয় নির্বাচন করবেন আওয়ামী লীগের হয়ে, সে কারণে সমকাল থেকে পদত্যাগ করবেন। আর তখন পত্রিকাটি পুরোপুরি চলে যাবে সাবেক শিবির কর্মী মোস্তাফিজ শফির নিয়ন্ত্রণে।
গাজি টিভি
এ টিভির মালিক আওয়ামী লীগের এমপি গাজী গোলাম দস্তগীর। তবে টিভিটির স্পেশাল করেসপডেন্স সাজু যিনি প্রধানমন্ত্রীর নিউজ বিট করেন তিনি পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার অতি কাছের মানুষ।
‘দোস্তি’ প্রোগ্রামে বাংলাদেশ থেকে যে ৩০০ সাংবাদিক পাকিস্তানে নেয়ার টার্গেট রয়েছে তারমধ্যে জুনিয়র রিপোর্টারদের খুঁজে খুঁজে বের করেন তিনি। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও গাজি টিভি কর্তৃপক্ষ কখনোই ব্যবস্থা নেয়নি।
বাংলা ভিসন
এ টিভির এমডি হলেন সাদেক হোসেন খোকার ছেলে। বাংলাভিশন হচ্ছে শ্যামলবাংলা মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অথচ শ্যামলবাংলা মিডিয়া লিমিটেডের মালিকানায় কোথাও সাদেক হোসেন খোকা ও তার ছেলে নেই। মালিকানায় না থাকলেও সাদেক হোসেন খোকার ছেলে চ্যানেলটি চালাচ্ছে। আর কাজে তাঁকে প্রধানভাবে সাহায্য করছেন মোস্তফা ফিরোজ। একসময় জাসদ করা এই ব্যক্তি এখন ঘোর বিএনপি। এ চ্যানেলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে নির্বাচনকে সামনে রেখে।
এনটিভি
এনটিভির মালিক বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন ফালু এটি সবাই জানেন। বর্তমানে চ্যানেলটি খুব সতর্ক থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এটির প্রধান ব্যক্তি জহিরুল ইসলাম ভয়াবহরকম ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়ার সঙ্গে।
যমুনা টিভি
যমুনা টিভির মালিক মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাবুল দেশে একজন বিতর্কিত ব্যবসায়ী হলেও তাঁর প্রতিষ্ঠানটি জনপ্রিয় টিভি হিসেবে গড়ে তোলার একটা চেষ্টা আছে। এ কারণে প্রায়ই সরকার বিরোধী নিউজ টিভিতে হয়। এতে নুরুল ইসলামের সবসময় সায় থাকে এটা বলা কঠিন। কারণ এ চ্যানেলটির প্রধান ফাহিম আহমেদ চৌধুরী একজন সাবেক শিবির কর্মী। ফলে যে কোন সময় চ্যানেলটি সরকারকে বড় বিপদে ফেলতে পারে।
এছাড়া নিউএজ, বাংলাদেশ অবজারভার, রেডিও এবিসি, দ্য ইন্ডিপেডেন্ট, একুশে টেলিভিশন থেকে বেশ কিছু সাংবাদিক দোস্তি প্রোগ্রামে পাকিস্তান ঘুরে এসেছেন। এসব সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন প্রগতিশীল হিসেবে পরিচিত। কারুর কারুর বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে।
পাকিস্তানে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা গিয়ে দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে এমনটি দাবি করে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালিদ সরকারের দায়িত্বশীলদেরকে সাংবাদিকদের নজরদারির মধ্যে আনার আহবান জানান। তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, বিদেশে সাংবাদিকরা কী করছেন তা নজরদারি করবে সরকার। এতে দেশে ব্যাপকভাবে সমালোচনা হওয়ায় সরকার ওই সিদ্ধান্ত থেকে পরে সরে আসে।
চার কারণে হাসিনার ওপর দিল্লীর ক্ষোভ
ভারতে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় থাকলে বরাবরই বাংলাদেশে বিএনপি জামাত সুবিধা পায় বলে প্রচলিত একটি ধারণা রয়েছে। এ কারণে দিল্লীর ক্ষমতায় বিজেপি যাওয়ায় ঢাকায় বিএনপি মিষ্টি বিতরণ করেছিলো। বিএনপির ধারণা ছিলো, এখন শুধু অপেক্ষার পালা! বাস্তবে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া সুদুরপরাহত। তবে বিএনপির সাথে কেন্দ্রীয় বিজেপি সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করে ২৯ মিনিট কথা বলেন। এ খবরটি বিএনপি বোকার মত জোর গলায় মিডিয়ার কাছে প্রচার করে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ এতোটাই রিঅ্যাক্ট করে যে, বিজেপি বাধ্য হয়ে তখন অস্বীকার করে যে, অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন দেন নি। তবে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির সঙ্গে একটি দূরবর্তী সম্পর্ক বজায় রাখলে বাংলাদেশের ক্ষমতায় বিএনপির আসার ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দেয়নি, উল্টো আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিজেপি সরকারের সম্পর্ক ভয়াবহ টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিন কারণে হাসিনার ওপর খেপেছে দিল্লী-
১) চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন কেনা।
২) চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডে বাংলাদেশের আগ্রহ প্রকাশ করা ও চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
৩) হেফাজত ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্যতা গড়ে তোলা।
এখন পর্যন্ত দিল্লীর প্রধান চাওয়া দু’টি। এক. বাংলাদেশের ওপর থেকে চীনের প্রভাব কমানো। দুই. বাংলাদেশে যেকোনভাবেই ভারত বিরোধী রাজনীতি বিশেষত ভারত বিরোধী ইসলামি রাজনীতির বীজ অঙ্কুরে বিনাশ করা।
এই দুই চাওয়া আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই পেতে পারে ভারত। কিন্তু বাস্তবে হাসিনার পাশে থাকা কিছু ভারত বিরোধী লোক তা হতে দেয়নি। মূলত এই ব্যক্তিগুলো যুক্তরাষ্ট্র বা মার্কিনপন্থী। তাদের মূল টার্গেট শেখ হাসিনাকে দিয়ে এমন কিছু কাজ করানো যাতে বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ নষ্ট হয় ও বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতির প্রাধান্য বাড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর যেহেতু হাসিনা সরকার খোলাখুলিভাবে নাখোশ সেকারণে চীনের প্রভাব বাড়িয়ে দিল্লীর কাছে শত্রু হিসেবে শেখ হাসিনাকে হাজির করেছে ওই দল। আর হেফাজতে ইসলামের মত সংগঠনকে আওয়ামী লীগের কাছে এনে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি তৈরি করেছে যা ভারতকেও ঝুঁকিতে ফেলেছে।
শেখ হাসিনাকে দিয়ে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশে বৃদ্ধি করতে যিনি প্রধান ভূমিকা রেখেছেন তিনি হলেন সাবেক শিবির কর্মী প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক ও সাবেক মূখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। আবুল কালাম আজাদের বুদ্ধি ও পরামর্শেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর বহু পুরনো মিত্র ভারতের স্বার্থবিরোধী চীনা বিনিয়োগ বাংলাদেশে বাড়াতে রাজি হোন। আবুল কালাম আজাদ গোটা আমলাতন্ত্রে অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন কর্মকর্তা। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি করতে আবুল কালাম আজাদ আমলাতন্ত্রের মধ্যে বিশাল বড় চক্র তৈরি করেছেন। ছাত্রজীবনে শিবির করেছেন এমন অন্তত ২১ জন সচিব বর্তমানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে এরা আওয়ামী লীগকে ডোবানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।
বিএনপি নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গ করার চেষ্টা করছে
বিএনপি’র ক্ষমতায় আসার এই মূহুর্তে সম্ভাবনা খুবই কম। এটি তারাও ভালো করে জানে। বিএনপি ক্ষমতায় না আসতে পারলেও তারা চায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে ফেলে দিতে। অনেকের কাছে মনে হতে পারে এটি নির্দোষ চাওয়া, কারণ আওয়ামী লীগ বহুল আলোচিত ১/১১ রাজনীতিতে এটাই করেছিলো। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে, আওয়ামী লীগের ওয়ান ইলেভেনকে সমর্থন দেওয়া বড় ভুল ছিলো, এর ফলে দেশে দুই নেত্রীকে বিদায় নেওয়ার একটি পরিস্থিতি তখন তৈরি হয়েছিল। একটি সামরিক সরকার কখনোই ভালো হতে পারে না, এমনকী সবথেকে নিকৃষ্ট গণতান্ত্রিক সরকারও সামরিক সরকারের চেয়ে ভালো। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমান সেনা প্রধানের ভাই ঢাকা উত্তরের মেয়র সদ্যপ্রয়াত আনিসুল হকও এই ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ত ছিলেন।
বর্তমানেও মাইনাস টু ফর্মুলা বহাল রয়েছে। হাসিনা মাইনাস হলে খালেদাও মাইনাস হবেন। সেক্ষেত্রে হাসিনার পরে আওয়ামী লীগে যারা আসবেন তারা কেউ হাসিনার লোক নয়, বরং তারা সবসময় অপেক্ষায় থাকেন কখন হাসিনা দূর্বল হবেন। খালেদার ক্ষেত্রেও একই সত্য। ফলে বিএনপি যদি আওয়ামী লীগকে উৎখাতের যড়যন্ত্রে যোগ দেয় তাহলে প্রকারান্তে নিজেদেরই পতনের কাজে তা ব্যবহৃত হবে। এই হুশ বাংলাদেশের রাজনীতিতে যতদিন না আসবে ততদিন বাংলাদেশের রাজনীতি ঝুঁকিমুক্ত হবে না। দেশি বিদেশী ও গণমাধ্যম মিলে শেখ হাসিনাকে সরাতে চায়। এদের মধ্যে একেকজনের উদ্দেশ্য একেকরকম।
নোট:
ইংরেজি প্রতিবেদন When mass media degrades its dignity and play the role of a demon – What will be the fate of Sheikh Hasina and the Democracy? এর বাংলায় ভাষান্তর।
ডিসেম্বর ৯, ২০১৭; ৯:৪৭ অপরাহ্ন
যে দেশে সঠিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নেই সে দেশে এমনটা ঘটার সম্ভাবনা খুবই। লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক তো আমরা চোখের সামনেই দেখলাম। ইয়েমেনে রাজনৈতিক কিছুটা হলেও ছিল। জিহাদী হুতীরা তা উঠিয়ে দিতে গিয়ে দেশটিকে কি ভয়ঙ্কর দুর্ভোগে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশে যখন সঠিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া জোরদার করার পরিবর্তে যৎ-সামান্য যা ছিল তা নস্যাৎ করা হচ্ছে, তখন এমন রিপোর্ট — সত্য-মিথ্যা যাই হোক — কাউকে অবাক করা উচিত না। একদিন লিবিয়া, সিরিয়ার দশা হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭; ৬:০৭ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশ কোন পথে এগুচ্ছে তা আমরা সকলেই দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গন্তব্য ও পরিণতিও আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আম গাছ লাগিয়ে সে গাছে লিচু চাইলে তো আর হবে না ভাই; আমগাছে আমই ধরবে।
ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭; ৬:১০ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশে আসলে এসব কী হচ্ছে বোঝা মুশকিল। তবে যাই হোক এর জন্য বর্তমান সরকারের অযোগ্যতা ও অপকর্মই দায়ি। যখন কোনো দেশের সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকে কিংবা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়ে, তখন সে দেশের শাসনব্যবস্থায় অজস্র ফাঁক-ফোকর সৃষ্টি হয়। বর্তমান সরকারের আমলেও তেমন অসংখ্য ফাঁক-ফোকর সৃষ্টি হয়েছে। এই ফাঁক-ফোকরের ভিতর শত্রুরা হাত ঢুকিয়ে দিলে অবাক হওয়ার কিছু নাই।