একটি হতাশার গল্প

9 মতামত পাওয়া গেছে

শোভন আপনার লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো ।আবার প্রথমেই হতাশার কথা বলায় খারাপ লাগছিল,পরে বলেছে আশাবাদী মানুষ ,।এটাই ঠিক-আশা রাখতেই হবে ।সমাজটাকে বদলাতে হবে । তারুণ্যই পারে বদলাতে ।সময়টা অনুকূল না । সংগঠিত হয়ে কাজ করতে হবে, আর প্রাথমিক ভাবে সেটা মাইক্রো লেবেলেও হতে পারে। মানুষের মনে বদ্ধমুল সংস্কার গুলো দূর করা,বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলা , সমাজ পরিবর্তনের দর্শন ও তার প্রবাহে নিজেকে ঋদ্ধ করা , সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে সুন্দর জীবনের বিকাশ  প্রাথমিক কাজ । আপনার স্পিরিটটা পজিটিভ ।

সম্মানিত নবযুগ ব্লগার রাজেশ তালুকদারের ব্যবহৃত স্বাক্ষরটি হচ্ছেঃ “জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই।”

অনুরূপভাবে বলা যায়, “চাওয়ার কোন শেষ নাই, চাওয়ার চেষ্টা বৃথা তাই।”

দ্বিতীয়টি অবশ্যই বিশেষভাবে মানব প্রজাতির জন্য প্রযোজ্য, বিশেষত প্রথম অংশটি।

আজ আমরা অন্ততঃ রাষ্ট্র, পুজিবাদীদের বিরুদ্ধে অনুযোগ করতে পারছি; অনেক সময় অস্ত্র তুলে নিচ্ছি পুজিপতি, রাষ্ট্রের ধারকগণকে কতল করার জন্য।

অথচ এমন সময় ছিল যখন না ছিল পুজিপতি, না রাষ্ট্র — কিন্তু চাওয়া-পাওয়ার তাড়না ছিল আরও প্রবল। আমাদের সে-সব পূর্বপুরুষদের অনুযোগ, অভিযোগের সুযোগও যে ছিল না।

আমি এখন বিশ্বাস করি বৈষম্যহীন সমাজ অসম্ভব…. যার ক্ষমতা আছে সে সিড়ি বেয়ে উঠবে, যার নেই সে হাহুতাশ করবে। বলা হয় ইসলাম সাম্যতা এনেছে, কিন্তু আমার চারদিকে সে সাম্য খুব বেশি দেখতে পাই না। কিছুটা হয়ত এনেছে। তবুও সমাজে উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত নিম্মবিত্তের মাঝে মোটা দেয়াল।

তবে আমি হতাশ হতে চাই না। পৃথিবী সাম্যবসথায় পৌছবে, এ আশাও করি না। চাই শুধু সেই ক্ষমতা যা আমাকে আরোহন করতে সাহায্য করবে, অবরোহন নয়।

তবে আমি হতাশ হতে চাই না। পৃথিবী সাম্যবসথায় পৌছবে, এ আশাও করি না। চাই শুধু সেই ক্ষমতা যা আমাকে আরোহন করতে সাহায্য করবে, অবরোহন নয়।

মানুষে-মানুষে সমতা বা সাম্যের দুটির বোঝাপোড়া রয়েছে। ১) একটি পাওয়াবে মার্ক্সের বিপ্লবী শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার তত্ত্বে। যেখানে সবাই একই জিনিস বা সমান খাবে। ২) দ্বিতীয়টি প্রদর্শিত হয়েছে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর   সংবিধান ও জাতিসংঘ সনদের মানবাধিকার ঘোষণার মাঝে। এবং তার ভিত্তি হলো ব্যক্তির সমান সুযোগ ও অধিকার প্রতিষ্ঠা। দ্বিতীয়টি আপনার মতামতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

মানুষ আদিকাল থেকে একেই অপরের ধনসম্পদ, ক্ষেতের শস্য, বাগানের ফলমূল চুরি ও লুটপাট, জোর-দখল, এমনকি একে অপরকে হত্যাও, করে এসেছে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। মার্ক্সীয় বিপ্লবী সমাজতত্ত্ব মানুষের সে চিরাচরিত প্রবৃত্তির নুতন অভিব্যক্তি মাত্র। যা গতানুগতিক অর্থে ছিল চুরি, ডাকাতির মত অপকর্ম, তাকে মানুষের অধিকার হিসেবে প্রতিস্থাপিত করাই অনেকটা মার্ক্সীয় সাম্যবাদের লক্ষ্য।

মুহাম্মদ বিদায় হজ্জ্বের ভাষনেও সেই সাম্যের গান গাইছে।

কোন মাউলানা এই কথা বলেছে? সে কি সত্যি নবিজীর ভাষণ পড়েছে? না কি নিজের মনগড়া কথা বলেছে?

বিদায় হজ্জ্বে নবি দুইটি ভাষণ দেন। একটি ভাষণে উনি পরিষ্কার বলেছেন নারীরা হচ্ছে গৃহপালিত পশু, তাই মুসলিমরা তাদের নারীদেরকে ঐভাবেই ব্যবহার করবে–দরকার হলে পিটিয়ে ঠাণ্ডা করবে, আর প্রয়োজনমত খাদ্য বন্ধ করে দিবে যতক্ষণ না সেই নারী বাগে আসে। বলাবাহুল্য—সেই সময় বেদুইন বর্বরেরা তাদের বেয়াড়া গৃহপালিত পশুদেরকে সোজা করার জন্য ঐ সব সাজা দিত।
এখানে সাম্যের বানী কোথায়?

      //আমি এখন বিশ্বাস করি বৈষম্যহীন সমাজ অসম্ভব…. যার ক্ষমতা আছে সে সিড়ি বেয়ে উঠবে, যার নেই সে হাহুতাশ করবে। //

     //হ্যা, আমি পুজিবাদী ব্যবস্থাতেই আস্থা রাখছি। সবাইকে সমান হতে বলা একটি মূর্খতা বলে মনে হয় আমার। কেউ সমান করতে পারে না।//

         রুশদী ভাই , আমি আপনার সাথে একমত । শ্রেণিহীন সমাজ  বা  বৈষম্যহীন সমাজ কাল্পনিক স্বর্গরাজ্য ছাড়া আর কিছুই না  । সমস্যা হচ্ছে  এদেশে অযোগ্যদের সিঁড়িতে  ওঠার ক্ষমতা না থাকলেও  তাদের ঠেলা দিয়ে তোলা হয় আর যোগ্যদের উপরে ওঠার সার্মথ্য থাকলেও তাদের কাছে ঐ সিঁড়িটাই থাকে না । আমি মূলত এই বৈষম্যের বিরুদ্ধচারণ করেছি ।

        দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আমি আপনার সাথে একমত না । আমি  মার্ক্সবাদের কট্টর সমালোচক তবুও  মার্ক্সকে শ্রদ্ধা করি কারণ মার্ক্সই প্রথম চোখে আঙুল দিয়ে পূঁজিবাদী সমাজের নগ্নরূপ আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছে । সমাজের পরিবর্তণ আসবেই । অতীতের দাস সমাজ , সামন্ত সমাজের  ক্ষমতাবান লোকরাও মনে করত যে তাদের সমাজব্যবস্থা  অপরিবর্তনীয় এবং মঙ্গলময়  কিন্তু বাস্তবতা দেখেন ,অতীতের সমাজগুলো ভেঙে পড়েছে। তাই পূঁজিবাদী সমাজকেই আপনি চিরন্তন ব্যবস্থা বলতে পারেন না । তবে হ্যা, আমি মার্ক্সের সাম্যবাদী সমাজের অস্তিত্বে বিশ্বাসী নই । তবে এটা নিশ্চিত যে পূঁজিবাদ ভেঙে পড়বে এবং অধিকতর মানবকল্যাণকর মানবিক সমাজ গঠন হবে ।  তাছাড়া পূঁজিবাদ, সম্রাজ্যবাদের জন্ম দিতে  বাধ্য যা আমাদের মত তৃতীয় বিশ্ব তথা মানব সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর । 

  // মানুষ আদিকাল থেকে একেই অপরের ধনসম্পদ, ক্ষেতের শস্য, বাগানের ফলমূল চুরি ও লুটপাট, জোর-দখল, এমনকি একে অপরকে হত্যাও, করে এসেছে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। //

      আলমগীর ভাই , আপনার এই কথাগুলোকে আমি মার্ক্সবাদের সমালোচনার একটা  লেখায় ব্যবহার করেছি । আর এই লেখায় আমার প্রধান উদ্দেশ্য হলো উদারনৈতিক গনতন্ত্র প্রতিষ্টা করা বা  সাম্যের ভিত্তিতে আইন প্রচলন করা , যাতে করে শিক্ষার বাণিজ্যকরণ বন্ধ হয় , মার্কসবাদী কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা নয় ।  

   //কোন মাউলানা এই কথা বলেছে? সে কি সত্যি নবিজীর ভাষণ পড়েছে? না কি নিজের মনগড়া কথা বলেছে?//

        কাশেম ভাই, বিদায় হজ্জ্বের ভাষনে মুহাম্মদ বলেছিলেন – “তোমাদের (আরব) উপর কোন অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নাই তেমনি তোমাদেরও নাই তাদের উপর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব । ” ইসমালী গাধাগুলা  এই কথার মাঝেই সাম্যতার গন্ধ খুঁজে পায় তাই সেই সাম্যতার ভন্ডামী বা প্রয়োগহীনতা দেখানোর জন্যই  বিষয়টা নিয়ে আসছি ।

     

    “তোমাদের (আরব) উপর কোন অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নাই তেমনি তোমাদেরও নাই তাদের উপর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব। “

    বিদায় হজ্জ ভাষণের মূল সূত্র ইবনে ইসহাক ও আল-তাবারীর সিরাতে এই বাক্যটি নেই। সেটি পুরাই বানোয়াট, যদিও বহুল সমাদৃতি পেয়েছে মুসলিম-অমুসলিম সব পাঠক ও পণ্ডিতদের মাঝে।

আমি  মার্ক্সবাদের কট্টর সমালোচক তবুও  মার্ক্সকে শ্রদ্ধা করি কারণ মার্ক্সই প্রথম চোখে আঙুল দিয়ে পূঁজিবাদী সমাজের নগ্নরূপ আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছে । সমাজের পরিবর্তণ আসবেই। 

সমাজ পরিবর্তনশীল একথা কাউকে কারো শিখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না। আমাদের ইতিহাসই তার সাক্ষী। কোথায় ছিল সে আফ্রিকাবাসী মানব সমাজ এবং শত হাজার বছর ধরে তার বিরামহীন পরিবর্তন। এবং মার্ক্সবাদী তত্ত্বে পুজিবাদ-পূর্ব আদিম সমাজ ছিল শোষণহীন সুষ্ঠ এমন ভাবাটা নিতান্তই বোকামী। সে সমাজেও অনাচার, অত্যাচার নিঃসন্দেহে ছিল, তবে ভিন্ন প্রকৃতির।

এটাও চাক্ষুস বোকামী যে, পুজিবাদী সমাজই সবচেয়ে নিষ্ঠুর। আধুনিক যুগে আমরা দেখেছি মানবতা, মানবাধিকার, সুবিচার ইত্যাদিসহ মানুষের জীবন যাত্রার মান অভাবনীয়ভাবে উন্নত হয়েছে সে-সব রাষ্ট্রেই, যেখানে পূজিবাদ সফল হয়েছে — এশিয়াতে জাপান, দঃ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিংগাপুর, পশ্চিম ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড। জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে তাদের প্রায় একচ্ছত্র অবদানের কথা নাই বাদই দিলাম।

এবং এ পূজিবাদ চর্চার মাঝেও এসব সমাজ নানা ভাবে বদলেছে। প্রশ্ন হচ্ছেঃ আগামী যে সমাজের স্বপ্ন আমরা দেখি তার প্রতিষ্ঠা পাবে পূজিবাদকে ভর করেই নাকি পূজিবাদের সংহারের মাধ্যমে?


মতামত দিন বাতিল করুন

আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।