প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
(এই গল্পের সকল চরিত্র আর কাহিনী সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এই গল্পের কোনো অংশ কিংবা পুরো গল্পটা যদি কেউ নিজের নামে কোথাও পোস্ট করে কিংবা ছাপায়, তবে তার ওপর আইনত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।)
“তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে!তুই বনির সাথে বিয়ে না করে থাকবি!”
-এত বোকা বোকা কথা বলছোনা মা!কোন যুগে পড়ে আছো জানি না।এদিকে তুমি, বাবা এত এডুকেটেড আর এদিকে মানসিকতা সেই পুরোনো দিনের
-এডুকেটেড মানে অসভ্য হওয়া নয়
-এতে অসভ্যতার কি আছে?তাহলে বলছো তোমাদের কিছু না জানিয়ে আমরা দুজনে একসাথে থাকলে ভালো হতো!
-পর্ণা!
-চিৎকার করছো কেন মা? অবশ্য জেঠিমণিরা শুনলেও আমার কিছু এসে যায় না
-তুই এখন এত বেড়ে গেছিস যে, বড়দের সাথে কি করে কথা বলে,তাও বোধহয় ভুলে গেছিস! হে ভগবান! এই দিন দ্যাখার জন্য তোকে এত পড়াশোনা করিয়েছিলাম?
-আমি কিন্তু ব্যাপারটা খুব সিম্পল ভাবে তোমাকে বললাম কিন্তু তুমি এটা ইচ্ছা করে একটা বড় ইশু বানাচ্ছ
-আমি বানাচ্ছি? এসবের পর যদি ঐ কুলাঙ্গারটা তোকে বিয়ে না করে,তখন তুই কি করবি?
-শোনো মা ওর একটা নাম আছে,এসব ফালতু বিশেষণ লাগানোর কোনো দরকার নেই।আর বিয়ে করবে না মানে?সো ওয়াট! না করলে না করবে!তবে এ ও তো হতে পারে যে, আমি ওকে রিজেক্ট করে দিলাম
-তু…ই রিজেক্ট করবি? বাহ্! কি সুন্দর কথা! তা শুনি তারপর তোকে কে বিয়ে করবে?
-তোমরা কোনো ছেলে মেয়ের সম্পর্ক প্রেম আর বিয়ে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারো না,তাই না?
-আমি এই নিয়ে তোর সাথে আর কোনো কথা বলতে চাই না।তুই তোর বাবার সাথে কথা বলবি
-ওকে !তবে আমি ডিসিশান নিয়ে নিয়েছি
-ও! তাহলে আমাকে এসব বলে সময় নষ্ট করছিস কেন,যা চলে যা
-অ্যাজ ইউ উইশ
এখন বুঝতে পারছো তো,তখন আমি তোমাকে ফোনে ওরকম কেন বলছিলাম?
-হ্যা বুঝলাম। তোরা এর মধ্যে ইনভলব হোস না
-কিন্তু কাকিমা মাকে আর আমাকে এখন বলছে,আমরা যেন পর্ণাকে বোঝাই।আমি তো মাকে বলেছি,আমিও কিছু বলবো না,আর মাকেও কিছু না বলতে
-তোকে বলেছে?
-হ্যা দ্যাখো না
(মুচকি হেসে)-তুই লিভ টুগেদারের কিছু বুঝিস?
-মানে কি?
-মানে…..মানে তুই বয়সেই শুধু পর্ণার থেকে কয়েক মাসের বড় কিন্তু আসলে তো তুই এখনো কিড
-কিসের কিড?
-কিড মানে জানিস না! কিড মানে ছোট্ট বাচ্চা
-দেখেছো তো! এত সিরিয়াস টপিকেও তুমি কি রকম মজা করছো?
-দূর! মজা করবো কেন?আচ্ছা! ধর তুই পর্ণা কে বোঝাতে গেলি
-না! আমি কেন ওকে বোঝাতে যাবো
-আরে বাবা ধরে নিলাম,তাহলে তখন ওকে তুই কি বলবি?
-কি বলবো? বলবো,তুই এসব করিস না
-এসব মানে?
-এসব মানে, বিয়ে না করে,এভাবে থাকিস না
– কেন, বিয়ে না করে থাকলে কি হবে?
-না ওটা ঠিক না
-হ্যা সে তো না হয় আমি তোর কথা মেনে নিলাম কিন্তু পর্ণা তো মানবে না।যেমন ধর আমার আর তোর বিয়ে হয় নি,তো আমরা কি কোনো অন্যায় কিছু করছি?
-এর মধ্যে আমাদের উদাহরণ না দিলে হচ্ছে না!আর আমরা তো দিনের বেলায় আছি,রাতে থাকা উচিত না
-কেন?রাতে থাকলে কি হবে?
-দ্যাখো, আমি কিন্তু এক্ষুণি চলে যাবো বলে দিচ্ছি!
-কি আশ্চর্য!তুই আমার ওপর রেগে যাচ্ছিস কেন? আমি তো পর্ণার হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-থাক! তোমাকে আর পর্ণার হয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে না
-জানি তো,সাধে কি তোকে কিড বলি?বয়স তোর যাই হোক,আসলে তুই ছোটই
-মোটেও না!রাতে এই জন্য থাকতে বারণ করছি,কারণ রাতে থাকলে ননভেজ কিছু হতে পারে
-তুই ননভেজও বুঝিস?
-কিরে দাভাই!তুই আবার, তনুর পিছনে লেগেছিস?
-আরে না না,আমি কিছু বলিনি।কি রে,আমি তোকে কিছু বলেছি?
-আচ্ছা?এতক্ষণ তাহলে কে বলছিল শুনি?
-আচ্ছা চল এবার,তোদের দুজনের এসব শুনলে আমার দেরি হয়ে যাবে।এই দাভাই! ফেরার সময় কিছু খাবার আনবো! খাবি?
-ননভেজ হলে কিছু আনিস(তনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে) আমি আবার ভেজ খাই না
তনু,অভির দিকে তাকিয়ে একটু মুখ বেঁকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।অদ্ভুত এই তনু আর অভির সম্পর্ক।আসলে দুজনের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই,তবুও দুজন যেন দুজনের সাথে কিসে বেঁধে আছে। না!তাহলে শুরু থেকেই বলি।অভি,অভির রংটা পরিষ্কার হলেও দেখতে খুব সাধারণ।ছেলে হিসেবে উচ্চতা প্রায় ছয়ের কাছে।বলা যেতে পারে যে বেশ পুরুষালী চেহারা।অভি তাঁর বোন গুড্ডি আর তাঁর বাবা মার সাথে থাকে।ভগবান তাঁদের খুব বেশি প্রতিপত্তি না দিলেও,তাঁদের কোনো দিকে খারাপ রাখেন নি।অভির বাবা কয়েকমাস হলো রিটায়ার করেছেন।অভি, বাবার সুবাদে একবছর হলো রেলওয়েতে চাকরি পেয়েছে।তবে অভির অফিসে, কম্পিউটারে বসে কাজ।আর পাঁচটা, সরকারি চাকরিওয়ালাদের মতো সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা অবধি।অভির মা কয়েকবার অভিকে বিয়ের কথা বলেছেন।অভি এক বছর সময় চেয়েছে,একটু টাকা জমিয়ে তারপর বিয়ে করবে বলে।অভির বোন গুড্ডি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে।ভাই বোনের মধ্যে বেশ ভাব। অবশ্য শুধু ভাই বোন কেন, ওঁদের চারজনের মধ্যেই খুব ভালো বন্ডিং ছিল।অভি তনুকে প্রথম থেকেই পছন্দ করতো।গুড্ডির কাছে শুনছিল তনু, যে তাঁর দাভাই নাকি একবার বলেছিল,”তোর বন্ধুদের মধ্যে এক তনুই পাতে দেওয়ার মতো,আর সব রিজেক্ট”।একটু আধটু ভালো লাগা থেকে কখন দুজনের মধ্যে ফোন করা,মেসেজ দেওয়া,একজনের কথা,আরেকজনকে শেয়ার করা বেড়ে গেছে,তা তাঁরা নিজেরাই জানে না। গুড্ডি বেশ স্মার্ট,তনুও স্মার্ট তবে আসল তনুকে যে চিনবে,সে বুঝবে তনু কতটা নরম মনের মেয়ে।অবশ্য নরম হবে নাই বা কেন? তনু থাকে যৌথ পরিবারে কাকা,জ্যাঠাদের সাথে।যদিও খাওয়া দাওয়া যার যার মতো।ওখানে শুধু তনু আর তাঁর মার সংসার।তনু গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করলে কি হবে,তনুর যত বয়স তাঁর থেকেও তাঁকে বেশি ছোট লাগে।আসলে তনুর সাদামাটা স্বভাব,তনুও চোখে মুখে পরিণতর ছাপ আনে নি।তনুর কাকু কাকিমাদের অবস্থা বরাবরই বেশ ভালো।তাঁদের একমাত্র মেয়ে পর্ণা।ছোটবেলা থেকেই পর্ণাকে সব কিছুতে তাঁর বাবা মা অনেক প্রশ্রয় দিয়েছেন।বাবার পেনশান,দিদার বাড়ির মার পাওয়া ঘরের বাইরেদিকটার ভাড়া আর তনুর কিছু টিউশনের টাকায় তনু আর তাঁর মায়ের খুব ভালোভাবে চলে যায়।তনুর বিয়ের জন্য তাঁর মা একে তাকে বলে কিন্তু তনু বলে, সে তাঁর মাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।
পর্ণা তনুর থেকে কয়েক মাসের ছোট হলে কি হবে,পর্ণা প্রচন্ড ডেসপারেট,আল্ট্রা মর্ডান।দুজনের মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো কিন্তু স্বভাব গত মিল তাঁদের মধ্যে একদমই ছিল না।পর্ণা আবার বয়সের তুলনায় বেশ পরিণত দেখতে।পর্ণার কথা বলার ভঙ্গি,চোখ মুখের ঢং ঢাঙে ছেলেরা খুব আকর্ষিত হতো।পর্ণা যার সাথে লিভ টুগেদারে থাকবে বলছে তার নাম বনি।বনির বাড়ির সবাই তাঁদের আদি বাড়ি,বর্ধমানে থাকে।বনি ছোট বেলা থেকেই কলকাতায় হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছে।যদিও বনির উচ্চতা সাড়ে পাঁচের কাছে,কিন্তু জিমে গিয়ে বনি শরীরটাকে খুব আকর্ষিত বানিয়েছে।হাতে ট্যাটু,চুলে হালকা আধুনিক চুলের রং লাগানো।বলা যেতে পারে বনিকে বেশ হিরো হিরো দেখতে।বনি আর পর্ণার সম্পর্ক প্রায় এগারো মাসের।তনু আর পর্ণার বড় জেঠুর কোনো সন্তান নেই।তবে ওনারা পর্ণার থেকেও তনুকে বেশি স্নেহ করেন।ঠিক ভুল,কম বেশি নিয়ে দিনগুলো সবার বেশ ভালোই কাটছিল কিন্তু পর্ণার এই লিভ টুগেদার নিয়ে এখন বাড়িতে অশান্তি শুরু হয়।তনুর বড় জেঠিমা তো তনুর মাকে বলেই দিলো….
-শোন মেজো,তোকে পর্ণাকে কিছু বোঝাতে হবে না।বেয়াদপ একটা মেয়ে।কি উদ্ধত দেখেছিস? নিজের সম্মান নিজে রাখতে শেখ।ওকে কিচ্ছু বলবি না
ওদিকে পর্ণার বাবা ঘরে ফিরলে পর্ণার মা তাঁর বাবাকে সব জানিয়ে…..
-ছি ছি! আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না।ভাবতে পারছো, এসব হলে কি কেলেঙ্কারি হবে?
-এত মাথা গরম করো না
-মাথা গরম করবো না? তাহলে কি করবো শুনি?
-তাহলে কি করবে? মেয়েকে ঘর থেকে বের করে দেবে? আর এটা কেন ভাবছো না,ওরা এই ডিসিশান না নিয়ে নিজেরা লুকিয়েও তো অনেক কিছু করতে পারতো
-বাহ্! ব্যাস তাহলে আর কি সব মেনেই নাও
-আগে ওর সাথে কথা বলি,তুমি ওই ছেলেটাকেও ঘরে ডাকো, আমি দুজনের সাথে কথা বলবো
এদিকে তনু টবে জল দিচ্ছিল।বাড়িতে সবার কমন স্পেসে অনেকগুলো টবে গাছ লাগানো আছে,তনুই রোজ তাতে জল দেয়,দেখাশোনা করে।ঠিক সেই সময় পর্ণা বাইরে থেকে ফিরে ওখান দিয়ে যাচ্ছিল,তনুকে দেখে পর্ণা দাঁড়িয়ে পড়লো,বলল ….
-কিরে,তোর ওই রসগোল্লা স্টুডেনটা কে আজকাল দেখি না তো, কি ব্যাপার?
-ওরা তো বেড়াতে গেছে
-ও
-এই শোন না!
-বল
-তুই আর বনিদা নাকি
-ইয়েস জানু
-বলছিলাম,আরেকটু ভালো করে ভেবে নে
-কেন?ভাবছিস,একসাথে থাকলেই প্রেগনেন্ট হয়ে যাবো?
-এসব কি বলছিস!
-আরে জানু,এত সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই।মেডিক্যাল শপে যাবি, দেখবি নানা ফ্লেবারে….
-তুই চুপ করবি!তোর সব কিছুতে ছ্যাবলামো!
-তা কি বলবো বল!কেউ করুক আর না করুক অন্তত তোর তো আমায় সাপোর্ট করা উচিত….
তনুর মা ঘরের দরজায় এসে ….
-এ…..ই তোর ফোন বাজছে তো কখন থেকে!
-দ্যাখো তো মা, কে?
পর্ণা ইশারা করে ঘরে যাচ্ছে বলে চলে গেল
এদিকে তনুর মা….
-এ আবার কি নাম রে? এখানে তো ননভেজ লেখা
তনু ছুট্টে গিয়ে জামায় হাতটা মুছে ….
-ও কিছু না মা,ওটা মজা করে লিখে রেখেছি
তনুর মা আবার ঘরে ঢুকে গেল।ওদিকে পর্ণার তখন বাবার সাথে কথা শুরু হয়ে গেছে….
-তোদের প্ল্যান টা ঠিক কি বলতো?
-আমরা দুজনে দুজনকে ভালোবাসি।আমরা একসাথে থাকবো তবে বিয়ে করবো না
-বুঝলাম।তো ভালোবাসিস যখন,ঘোর ফের,আনন্দ কর কিন্তু একসাথে থাকার কি হয়েছে? আর তাছাড়া তোরা যে থাকবি,সেই সব খরচ কে দেবে? কেন বোকামি করছিস।লাইফটা এনজয় করে কাটা।একসাথে থাকলে বুঝবি তখন ঘাড়ে কত দায়িত্ব এসে যাবে।এখনো আমরা আছি,জীবনটাকে উপভোগ কর
-বাবা, আমি বনিকে ঘর দেখতে বলে দিয়েছি
-আমি তো সেটাই জিজ্ঞেস করছি,তোদের তাড়াটা কোথায়?
এদিকে তনু আর অভি….
-বলো?
-কথা হলো?
-হম
-কি বলল?
-তোমাকে বলতে পারবো না…..কি হলো! হাসছো কেন?
-তোর অবস্থা দেখে।অবস্থা না,তোর দুরবস্থা দেখে
-কেন?
-একই বাড়ির মেয়ে তোরা,একজন লিভ টুগেদারে থাকবে আর আরেকজন ফোনে কথাটা বলতেও পারছে না
-জানো,কি উল্টো পাল্টা কথা বলছিল?ইয়ার্কি মারছিল
-কিছু ননভেজ?
-হম
-শুনি?
-আবার?
-কেন,তুই তো নাকি কিড না,অনেক বড়! তাহলে বল!
-ছোট বড়োর কি আছে,আমার এসব বলতে ভালো লাগে না,তাই বলি না
-বিয়ের পর কি করবি,আমার মতো বর হলে তো তোর নিস্তার নেই
-মা ডাকছে,আমি যাচ্ছি
-আগে বলে যা
-উফ্
-আচ্ছা চোখ বন্ধ করে বল
-এসব শুনতে কীইইই ভালো লাগে, তাই না?
-আমি তো আর তোর মতো মঙ্গল গ্রহের নই,জানিসই তো,আমি ননভেজ।এবার বল!
-বলছি,তবে শুধু শুনবে,আমাকে আর কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না কিন্তু
-হাঁ মেরি মা, এবার বল!
-বলল…….
দুই.
“বিয়ের পর কি করবি,আমার মতো বর হলে তো তোর নিস্তার নেই”
-মা ডাকছে,আমি যাচ্ছি
-আগে বলে যা
-উফ্
-আচ্ছা চোখ বন্ধ করে বল
-এসব শুনতে কীই ভালো লাগে, তাই না?
-আমি তো আর তোর মতো মঙ্গল গ্রহের নই,জানিসই তো,আমি ননভেজ। এবার বল!
-বলছি,তবে শুধু শুনবে,আমাকে আর কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না কিন্তু
-হাঁ মেরি মা, এবার বল!
-বলল ও অত সহজে ইয়ে হবে না,কারণ মেডিকেল শপে নাকি সব কিছু পাওয়া যায়
-ইয়ে মানে!কিয়ে?
-বলেছিলাম কিন্তু কোন প্রশ্ন করতে পারবে না
-আরে, ঠিক করে বলছিস না তো!
-যেটুকু বলেছি ওটাই অনেক
-সাধে কি তোকে কিড বলি?প্রেগনেন্ট বলতেও ….. টে………লি
ওদিকে পর্ণা আর ওর বাবা…..
-তোমরা তো জানো বাবা,আমি বনির জন্যই মুম্বাইয়ে ট্রান্সফার নিয়েছি।কতদিন ধরে চেষ্টা করছিলাম।আর এখন যখন আমার ট্রান্সফার হলো,মা এত হাইপার হচ্ছে
-তোর ট্রান্সফার নেওয়ার জন্য তো হাইপার হচ্ছে না,তোদের লিভ টুগেদারের জন্য হচ্ছে…..
-বাবা,ওখানে এসব নরমাল ব্যাপার।ওখানে কেউ লিভ টুগেদারে থাকলে, এখানের মতো কেউ এতটা রিয়েক্ট করে না কিংবা খারাপ ভাবে না।আর তাছাড়া বাবা, কাউকে কিছু বলার দরকারটা কি?কেউ কি জানতে যাচ্ছে,আমি হস্টেলে থাকবো না,অন্য কোথায় থাকবো? আর মা বললো তুমি বনিকে আমাদের বাড়িতে আসতে বলেছো।ও এখন কলকাতায় আসছে না।যখন ছুটি নিয়ে আসবে তখন তোমাদের সাথে দেখা করে নেবে।তবে তোমরা ওর সাথে ফোনে কথা বলতে পারো
তনু আর গুড্ডি একটা লাইব্রেরীর মেম্বার ছিল।এক সময় গুড্ডি আর তনু সব সময় একসাথেই সেখানে যেত।আজকাল তনু প্রতি বুধবার ওখানে একাই যায়,কারণ গুড্ডি আর ওখানে যাওয়ার সময় পায় না।অভির আবার এসবের বালাই নেই,বই,লাইব্রেরী এসবের জন্য অভির কাছে সময় কোথায়? সারাদিনে বেশির ভাগ সময়টা অভি অফিসে কাটিয়ে তারপর বাড়িতে ফিরে একটু রেস্ট নিয়ে,টিভি দেখে,খাওয়া দাওয়া সেরে রাতে প্রায় এক দেড় ঘন্টা, এর তার সাথে চ্যাট করে,অত রাতে যদিও বা কখনো বই নিয়ে শোয়, অভির সঙ্গে সঙ্গে ঘুম এসে যায়।প্রতিদিন রাতে অবশ্য তনুর সাথেই তাঁর বেশি চ্যাট হতো।
একদিন তনু রাতে অনলাইন হয় নি।আসলে সেদিন তনুর বিয়ের জন্য এক পাত্রের খবর এসেছিল।ছেলে জাহাজে চাকরি করে।বছরের ছ’মাস জলে থাকে,ছ’মাস ছুটিতে।বেতন খুবই ভালো।তনুর মার শুনেই খুব ভালো লেগেছিল,যদিও তখনো পাত্রের ছবি দ্যাখেন নি তিনি।যদিও তনুর মা, তনুকে এই পাত্রের কথা বলেন নি,কিন্তু পাশের বাড়ির কাকিমাকে যখন তনুর মা বলছিলেন “এখানে বিয়ে হলে ভালোই হবে,ছ’মাস তনু আমার কাছে থাকতেও পারবে,আর তা ছাড়া বেতনও তো বেশ ভালো” তখন তনু শুনে ফ্যালে।তনুর সেদিন শরীরটা ভালোও ছিল না,তাছাড়া মুডটা অফও ছিল।কেন যে কিছু ভালো লাগছিল না,তা তনু নিজেও জানে না।ওদিকে ঠিক সময়ে তনু অন না হওয়ায়,অভি প্রায় কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করে,ফোনে এসএমএস এ মেসেজ পাঠায়…..
-অন হোস নি কেন?
তনু মেসেজটা দেখেছে কিন্তু কেন জানি,তনুর অভির ওপর অহেতুক অভিমান হচ্ছিল।তনু কোনো উত্তর দেয় নি।আবার কিছুক্ষণ পর মেসেজ এলো…..
-পাঁচ মিনিটের জন্য অন হ,তার বেশি আটকাবো না
ফোনটা বিছানার উপর রেখে,এক দৃষ্টিতে তনু মেসেজের দিকে তাকিয়ে বসে ছিল।ও নিজেও জানে না অভিকে ও কিসের শাস্তি দিচ্ছে।আবার মেসেজ এলো….
-আমি জানি তুই মেসেজ পড়ছিস।এবার উত্তর না দিলে ফোন করবো
তনু তবুও নির্লিপ্ত হয়ে বসে ছিল।তারপর বেশ কিছুক্ষণ মেসেজ এলো না।তনুর মা খেতে ডাকায়, তনু বিছানার ওপরই ফোনটা রেখে অন্য ঘরে খেতে চলে যায়।ঠিক তখনই তনুর ফোন বেজে ওঠে।গুড্ডির ফোন।তনুর ফোনের সাউন্ডটা মিউট করা ছিল বলে গুড্ডির ফোনের আওয়াজ তনু শুনতে পেলো না।গুড্ডির একবার-দুবার-তিনবার -চারবার ফোন এসে বন্ধ হয়ে গেল।তনু খাওয়া দাওয়া সেরে ,মার হাতে হাতে একটু কাজ সেরে,জলের বোতল নিয়ে সবে ওই ঘরে যাচ্ছিল,ঠিক সেই সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।তনুর মা ঘড়ি দেখলো,ঠিক দশটা বাজতে তেরো মিনিট বাকি।তনু খুব অবাক হয়ে দরজার আই হোল দিয়ে দেখলো,কোনো পুরুষের একটা শার্টের কিছুটা বোতাম খোলা,তাঁর বুকের হালকা লোম দেখা যাচ্ছে।তনু ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠলো “কে?”
বাইরে থেকে মেয়ের আওয়াজ এলো “আমি,খোল!” সামনে ছেলে দাঁড়িয়ে,আওয়াজ মেয়ের,তনুর মা এসে তনুকে সরে যেতে বলে দরজা খুললেন।তনু একটু ঘাড় কাৎ করে দ্যাখে গুড্ডি আর অভি।তনুর মা দরজা খুললেই, গুড্ডি ওনাকে বলে ওঠে…..
-দাদার সাথে তোমাদের এখান দিয়ে বাড়ি ফির ছিলাম কাকিমা,ভাবলাম অনেক দিন তোমাদের বাড়িতে আসা হয় নি,তাই একটু দেখা করে যাই।যদিও খুব অসময়ে এলাম,অনেক রাত হয়ে গেছে
-খুব ভালো করেছো, এসো এসো,বসো।সত্যিই তো তুমি তো এখন আসোই না
-এই আমার দাদা,অভি
-থাক থাক বাবা,প্রণাম করতে হবে না।বসো!বাবা মা রা ভালো আছেন?
-হ্যা কাকিমা
অভি আর গুড্ডি লক্ষ্য করছিল,তনু অভির দিকে ঠিক করে তাকাচ্ছে না।গুড্ডি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য…..
-কাকিমা,একটু জল খাবো
-হ্যা দিচ্ছি,দেখি দাড়াও তোমাদের জন্য কি আছে
এই বলে তনুর মা ভিতরে চলে গেলেন।গুড্ডি সঙ্গে সঙ্গে তনুর সামনে গিয়ে….
-কি রে! কতবার ফোন করলাম,ধরলি না কেন?
-ফোন? কখন?
-জানি না বাবা কি হচ্ছে।আমি ভিতরে কাকিমার কাছে যাচ্ছি।আজ বাড়ি ফিরেও রক্ষে নেই,ঢুকলেই প্রশ্ন হবে,এত রাতে আমরা দুজন বাইক নিয়ে কোথায় গিয়েছিলাম।ও কাকিমা….দাড়াও আমিও আসছি…..
তনু অন্য ঘরের দরজায় গা সিটিয়ে দাঁড়িয়েছিল।অভি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে,তনু মেঝের দিকে চোখ নিচু করে বলল ……
-আমি জানি না কখন ফোনে রিং হয়েছে,আমি এ ঘরে ছিলাম,ফোনের সাউন্ড মিউট করা ছিল
অভি এদিক ওদিক দেখে,তনুর দিকে এগিয়ে গিয়ে
-আর আমার মেসেজ? অন হোস নি কেন?
-এমনি
-এমনি? তোর একবার মনে হলো না….?আর যদি আমি এরকম করতাম, তখন?
সেই সময়ই গুড্ডি একটা ট্রে তে তিন গ্লাস জল,আর তনুর মা প্লেটে মিষ্টি আর নিমকি নিয়ে ঘরের দিকে আসছে দেখে অভি আবার বিছানায় গিয়ে বসে পড়ে।তনুর মা ঘরে ঢুকে বিছানার উপর অভির সামনে প্লেটটা রেখে বললেন…..
-ঘরে একটু যা ছিল দিলাম বাবা,নাও তোমরা খাও অভি-আমি শুধু একটা মিষ্টি খাচ্ছি
-নিমকিটা ঘরেই বানানো,খেয়ে দেখো,তনু বানিয়েছে
-ব্যাস ব্যাস কাকিমা,তুমি যা বলে দিয়েছো,এবার তো দাদা খাবেই।এই তনু তোর ফোনটা কোথায়?আমি তোকে কতবার ফোন করলাম
-ফোনটা ওই ঘরে রে,আমি শুনতে পারি নি
-তোর ফোনটা খুলে দ্যাখ
-দাঁড়া দেখছি
তনু ফোন আনতে ওই ঘরে চলে গেল,পিছন পিছন গুড্ডিও ভিতরে গেল।এদিকে তনুর মা অভিকে বললেন….
-তুমি আজকাল কি করছো?
-আমি এক বছর হয়েছে চাকরিতে জয়েন করেছি।রেলে আছি
-ও! বাহ্ খুব ভালো।রেলে তো কাজ করলে শুনেছি সারা বছর সব জায়গায় ফ্রি তে আসা যাওয়া করা যায়
-না,সারা বছর না ,তবে চার পাঁচটা বড় ট্রিপ পাওয়া যায়।আর লোকাল যাতায়াতেও বেশ ফেসিলিটি পাওয়া যায়
-খুব ভালো।তনুও চাইছে চাকরি করতে কিন্তু আমি বলছি কি হবে চাকরি করে,মা মেয়ে ভালোই আছি।যে কদিন বিয়ে হচ্ছে না ওই কটা বাচ্চাকে পড়াচ্ছে, পড়াক, তারপর তো সব বন্ধ হয়ে যাবে
-হম
-এই দাদা চল,মার ফোন এলো
গুড্ডি আর তনু ওই ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।অভি বেরোবে বলে উঠে দাঁড়ালো।তনুর মা বললেন….
-একটু নিমকি খেলে না বাবা!
-না,অনেক রাত হয়ে গেছে,এখন আর কিছু খাবো না
তনুরও মুখটা কেমন হয়ে গেল।অভি,তনু বানিয়েছে শুনেও একটু খেলো না! অভিরা বেরিয়ে গেল।তনুর খুব কষ্ট হচ্ছিল।শোয়ার আগে ভাবলো অভিকে অনেক কিছু লিখবে।তারপর ভাবলো অভিকে না,গুড্ডিকে লিখবে।ফোন অন করেও তনু বুঝছিলো না যে এই সামান্য কথা নিয়ে তনুর এতটা কষ্ট পাওয়া ঠিক হচ্ছে নাকি এটা তেমন কিছুই না।ওয়াটসঅ্যাপ
না খুলে ফেসবুকে এটা ওটা দেখতে দেখতে ,দেখলো অভি অন লাইন আছে।তনুর আবার মাথাটা গরম হয়ে গেল।ভাবলো ও এবার ওয়াটসঅ্যাপে কড়া করে মেসেজ দেবেই।ওয়াটসঅ্যাপ খুলেই দেখলো অভি কয়েক মিনিট আগে ওকে দুটো ছবি পাঠিয়েছে।তনু ডাউনলোড করে অবাক হয়ে গেল,হাতের মধ্যে ভাঙা চার টুকরো নিমকি।তখন অভি মেসেজ লিখছিল,কিছু মুহূর্ত পরেই মেসেজ এলো……
-ওখানে নিমকি খাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।গুড্ডি আগেই ইয়ার্কি মেরে পরিস্থিতিটা খারাপ করে দিয়েছিল।আমি, তুই বানিয়েছিস শুনে,নিমকি খেলে কাকিমা অন্য কিছু ভেবে নিতে পারতো।কিন্তু তোর বানানো খাবার কি করে ছেড়ে দি বল,তাই কাকিমার চোখের আড়াল করে এটুকুই নিতে পেরেছি!এখন খেলাম,কেমন বানিয়েছিস সেটা তুই জিজ্ঞেস করলে তখন বলবো।গুড্ডির কাছে শুনলাম, পাত্র জাহাজে চাকরি করে,স্যালারিও বেশ ভালো।বিয়েটা করে ফ্যাল
বেশ কিছুক্ষণ দুজনের আর কোনো মেসেজ নেই।বেশ অনেক্ষণ পর তনু লিখলো….
-করবো ওখানে বিয়ে? তুমি বললে করবো
-আমি বলা না বলার কি আছে
-বললাম তো তুমি বললে করবো,একবার বলে দ্যাখো
-কাকিমার পাত্র পছন্দ
-জানি,আর তুমি?
-কাল একবার দেখা করবি?কথা আছে
-কাল পর্ণা মুম্বাই চলে যাবে
-সেকি!ওটা ফাইনাল হয়ে গেলো?
-কোনটা?
-লিভ টুগেদার?
-বনিদার সাথে কাকুর কথা হয়েছে ফোনে।ওরা ডেসপারেট হয়ে গেছে ,দুজনে একসাথে থাকার জন্য
-তুই কেন এরকম হোস না?
-কি?
-কিছু না,বল! তারপর?
-কাকুর বক্তব্য,ওঁদের এখন পারমিশান না দিলেও ওরা ওখানে একসাথেই থাকবে।তাই পারমিশান দিলে অন্তত ওঁদের ঠিক ঠাক খবর পাওয়া যাবে যে কেমন আছে,কি করছে
-ও
-আমিও যাবো ওকে তুলে দিতে
-ফ্লাইট কটায় ওর?
-ট্রেনে যাচ্ছে। ওকে অনেক জিনিস নিয়ে যেতে হবে তাই ফ্লাইটে না গিয়ে ট্রেনে যাচ্ছে।ফ্লাইটে তো ওজনের লিমিটেশান আছে।ওর বিকালে ট্রেন।সকালে লাইব্রেরি যাবো,কাল তো বুধবার
-ও!তাহলে তো আর দেখা করা সম্ভব নয়
-হম,এবার আসি
-তুই চাস দেখা হোক?
-কি করে হবে,সকালে তোমার অফিস,সকালে আমি লাইব্রেরিতে যাবো।বিকালে তুমি ফ্রি,আমি স্টেশনে যাবো
-তুই চাস কিনা, সেটা বল
-চাইলে কী হবে?তুমি স্টেশানে যাবে না কিন্তু,ওখানে কাকুরা থাকবে
-তুই কি চাস?
-উফ্! চাইলে কী করে দেখা করবে বলবে তো?
-চাস কি?
-হম।কিন্তু ….
-গুড নাইট
-আরে বলবে তো কি করবে?
অভি সঙ্গে সঙ্গে ফোন অফ করে ঘুমিয়ে পড়ে।পরের দিন সকাল থেকে তনুর মনে খুব টেনশান হচ্ছে।অভির সাথে দ্যাখা হোক সেটাও সে চায় কিন্তু একেই সেদিন পর্ণা মুম্বাইতে চলে যাবে বলে বাড়িতে একটা অন্য পরিবেশ,ওদিকে আবার অভি যদি স্টেশানে বা রাস্তায় দ্যাখা করে সেটাও খুব খারাপ হবে।তনুর মা, পর্ণার জন্য নাড়ু বানাবে শুনে তনু লাইব্রেরী আর যাবে না বলে,আসলে তনু ঘরে থেকে মাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল কিন্তু তনুর মা তনুকে লাইব্রেরী যেতে বলে।আসলে লাইব্রেরী থেকে তনু যে বইগুলো আনতো, তা আগে তনুর মা পড়তেন তারপর তনু পড়তো। তনুর মার ও বই পড়ার খুব নেশা ছিল।লাইব্রেরী যাবে বলে যখন বেরোলো তনু, তখন তনুর মনে কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল,বার বার ইচ্ছা করছিল অভিকে একবার ফোন করার।অভি অফিসে থাকবে তাই ফোন করাটাও ঠিক হবে না।ওদিকে পর্ণা খুব খুশি।সে যা চেয়েছিল,শেষ অবধি বাবা ওঁদের কথা মেনে নিয়েছে আর মা মানতে বাধ্য হয়েছে।তাঁর আর একদিন পরেই বনির সাথে দেখা হবে,শুধু দ্যাখা হবে তা নয়,বনির সাথে তো সে দিন রাত থাকতে পারবে।বনি ঘর ভাড়া করে, যৎসামান্য জিনিস কিনে অপেক্ষায় আছে কখন পর্ণা মুম্বাইতে আসবে।তনু আর নিজেকে আটকাতে পারলো না,ভাবলো একবার অভিকে সে ফোন ইইI।অভি খুব ব্যস্ত থাকলে না হয় শুধু হ্যালো করেই ফোন রেখে দেবে।তনু অভিকে ফোন লাগিয়ে…..
-হ্যালো
-বল
-অফিসে?
-হম
-ব্যস্ত?
-খুব না,একটু,বল!
-না এমনি
-এমনি যে তুই ফোন করবি না,তা আমি জানি,বল।আমায় মিস করছিলি?
-মোটেই না,আমি তো ভাবলাম তোমায় বলে দি যে তুমি কিন্তু বিকালে কোনো ভাবেই দ্যাখা করো না
-জানি,কাল বললি তো।আচ্ছা এখন একটু রাখি কাজ আছে
-হ্যা হ্যা, তুমি কাজ সারো
তনু লাইব্রেরীতে ঢুকে পুরোনো বই জমা দিয়ে,নতুন লেখক লেখিকার বইয়ের টেবিলে বই গুলো ঘাটছিল।লাইব্রেরীতে মোটামুটি লোকজন ছিল।লাইব্রেরিয়ান তনুকে প্রায় দু বছর ধরে চেনেন।উনি তনুর পড়ার রুচিটা জানেন,উনি নতুন এক লেখিকার নাম বলে,ওনার বইটা পড়তে বললেন,রিভিউ নাকি ভালো এসেছে।টেবিলের ওপর এত বই তার মধ্যে তনু সেই বইটা খুঁজে বেড়াচ্ছে,কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ দ্যাখার পরও বইটা খুঁজে পাচ্ছে না দেখে,সবে মাথা তুলে লাইব্রেরিয়ানকে বলতেই যাচ্ছিল,হঠাৎ দেখলো ঠিক ওই বইটাই তনুর মুখের সামনে কোনো একজন পুরুষের হাতের মধ্যে।বইটা কার হাতে দেখার জন্য যেই তনু পিছন ঘুরলো,দেখলো…..
-একি!তুমি এখানে? তুমি তো…
তিন.
লাইব্রেরিয়ান তনুকে প্রায় দু বছর ধরে চেনেন।উনি তনুর পড়ার রুচিটা জানেন,উনি নতুন এক লেখিকার নাম বলে,ওনার বইটা পড়তে বললেন,রিভিউ নাকি ভালো এসেছে।টেবিলের ওপর এত বই, তার মধ্যে তনু সেই বইটা খুঁজে বেড়াচ্ছে,কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ দ্যাখার পরও বইটা খুঁজে পাচ্ছে না দেখে,সবে মাথা তুলে লাইব্রেরিয়ানকে বলতেই যাচ্ছিল,হঠাৎ দেখলো ঠিক ওই বইটাই তনুর মুখের সামনে কোনো একজন পুরুষের হাতের মধ্যে।বইটা কার হাতে দেখার জন্য যেই তনু পিছন ঘুরলো,দেখলো…..
-একি!তুমি এখানে? তুমি তো অফিসে ছিলে?তুমি তো এখানের মেম্বারও নও?
-লাইব্রেরীর নিয়ম ভুলে গেছিস?এখানে কথা বলা বারণ
-তাহলে?
-বইটা নিয়ে আয়, আমি বসার জায়গা রাখছি
-কিন্তু কথা বলতে পারবো না তো
-কিড! কিডের মতোই থাক!বেশি মাথা না ঘামালেও হবে
অভি গিয়ে কোণার একটা টেবিলের দুটো সিট রাখতে না রাখতেই তনু ওখানে পৌছালো।দুজনে মুখোমুখি বসলো,কোথাও কোনো কথা বলার শব্দ নেই।টেবিলের ওপর অভি নিজের ফোনটা রেখে,তনুকেও ইশারা করে বইটা টেবিলের ওপর রাখতে বলল।অভি যে কি করতে চাইছে,তনু কিছুই বুঝতে পারছিল না।অভি হাত বাড়িয়ে তনুর বইটা চাইলো।তনু বইটা অভির দিকে আস্তে করে ঠেলে দিলো।অভি বইটা খুলে,তার ওপর ফোনটা রেখে টাইপ করলো….
“যা জিজ্ঞেস করবো তাঁর উত্তর আমার এখানেই টাইপ করবি”
ফোন শুদ্ধু বইটা তনুর দিকে আস্তে করে ঠেলে দিলো
তনু লেখাটা পড়ে ওখানে লিখলো “আচ্ছা”
তনু আবার ফোন শুদ্ধু বইটা অভির দিকে দিলো
“আমার মনে হয়,আমরা দুজন দুজনকে খুব পছন্দ করি কিন্তু এটাকে প্রেম ভালোবাসা বলে না”
” হয়তো তাই”
“গুড্ডির সাথে হয়তো অর্চিতের বিয়েটা হবে।মাকে কাল অর্চিতের কথা সব বলেছি,মার আপত্তি আছে বলে মনে হলো না”
“তাহলে তো খুব ভালো হবে”
“আর কদিন পরে ট্রান্সফার লিস্ট আসলে আমাকে হয়তো কলকাতার বাইরে চলে যেতে হবে”
“ও”
“ওই জাহাজ ওয়ালার ছবি পেলে আমায় পাঠাস।তোর বর কে সিলেক্ট করার আগে আমি দেখবো”
“এসব কথা তো আমরা রাতেই বলতে পারতাম,তুমি এখানে এলে কেন?”
” কি জানি।কাল তোর জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে শুনে কেমন একটা লাগছিলো।কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম,তোর আর আমার মধ্যে তো কোনো প্রেম নেই যে তোর বিয়ে হচ্ছে শুনে আমার কষ্ট হবে কিংবা আমার বিয়ে হচ্ছে শুনে তোর কষ্ট হবে।তাও ভাবলাম তোর মনের কথাটাও একবার জিজ্ঞেস করি।তুই তো জানিস তোর সাথে কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগে,ইচ্ছা হলো একটু দ্যাখা করি
“তুমি তো এখানের মেম্বার নও, তাহলে তোমায় লাইব্রেরীর বই দিলো কি করে?”
দূর থেকে লাইব্রেরিয়ান আর কিছু মানুষ দেখছিলেন যে তনুদের টেবিলে, একবার তনুর সামনে বইটা যাচ্ছে আবার একবার অভির সামনে বইটা যাচ্ছে ,বইটা যে আসলে কে পড়ছে,কেউ বুঝতেই পারছিলেন না।অভি মেসেজের উত্তর লিখলো….
“প্রায় দু মাস আগে মেম্বার হয়েছি,ভেবেছিলাম,কখনো তোর সাথে আসবো, কিন্তু অফিস করে আর সময়ই হয় না”
“কই আমাকে বলো নি তো?”
“কেন,এই সারপ্রাইজটা ভালো লাগে নি?ফোন করলি আমি অফিসে আছি ভেবে, আমি তো এখান থেকেই তোর সাথে কথা বললাম,কিড বলেই তো কিছু বুঝলি না”
“এবার বাড়ি ফিরতে হবে”
“কিছু জিজ্ঞেস করলে,খুব ভালো এড়িয়ে যেতে জানিস কিন্তু। ঠিক আছে চল!”
মুম্বাইতে পরের দিন রাত ন’টা সতেরো~~
ওলায় একদম গা ঘেঁষে বসে,দুজন দুজনের হাত ধরে,বনি আর পর্ণা….
-তাহলে শেষ অবধি তুই পারলি সবাইকে রাজি করতে!
-মা ভীষণ লাফরা করছিল,বাবা একটু করলেও,আল্টিমেটলি মনে ভয় ছিল,যদি মেয়ে অন্য কিছু করে ফ্যালে?তোর বাড়িতে কি বলল?
-নাথিং জানু
-ইস তোর বাড়ির লোকরা কি ভালো!
-ভালো হয় না জান,ভালো করতে হয়
-ভালো করতে হয় মানে?
-আমি বাড়িতে কিছু জানাই নি
-সেকি!তুই আমার কথা জানাস নি?
(পর্ণার মুখটা একটু কেমন হয়ে গেল বলে)-এসব কথা ছাড় তো! আমি ঠিক সময়ে ঠিক সুযোগ বুঝে ওদের বলবো।এখন আমি ভাবছি কখন ঘরে ঢুকবো আর তোর ওপর ঝাঁপিয়ে পরবো
-আগে আমি ফ্রেস হবো তারপর যা হওয়ার হবে, পর্ণার একদম মুখের কাছে এগিয়ে গিয়ে-নো ওয়ে বেবি,আমি আর কন্ট্রোল করতে পারবো না
-আমরা রাতে কি খাবো?
-আমার আজ রাতে না খেলেও হবে,আজ সারারাত আমি ব্যস্ত
-ইয়ার্কি মারিস না,বল না? আমি খিদে পেলে সহ্য করতে পারি না,পাগল পাগল লাগে
-আজ তো তোকে এমন পাগল করবো যে,তুই ও খেতে ভুলে যাবি
পর্ণার ফোন বেজে উঠলো।পর্ণার মার ফোন…..
-উফ্! এখানে চলে এসেছি,এখনো মা শান্তিতে থাকতে দেবে না।হ্যালো…..
-কিরে,ট্রেন লেট নাকি? এখন তুই কতদূর পৌঁছালি?
-আমি এখন ওলায়
-ওলায়? তারমানে তো তুই নেমে গেছিস!
-হ্যা
-নেমে একটা ফোন করতে পারিস নি? জানিস না,আমরা চিন্তায় থাকবো?
-শোনো মা,আমি কোনো কচি খুকি না।আর আমি এখনো পৌঁছাই নি।ওখানে এসব অনেক করেছো,এবার এসব বন্ধ করো।আমাকে একটু আমার মতো বাঁচতে দাও
পর্ণার মার দুচোখ দিয়ে সমানে জল গড়াচ্ছিলো।স্পিকার অন করে কথা বলায়, পর্ণার বাবাও মেয়ের কথা শুনে বললেন…….
-এত কথা বলার কি দরকার ছিল? ওর এখন নতুন লাইফ,ওকে আর ডিস্টার্ব করো না।ওরা এখন এনজয় করুক
-আমি কি এমন খারাপ কথা বলেছি? ওর কোনো দায়িত্ব বোধ নেই,যে একবার বাড়িতে পৌঁছনোর খবরটা দিয়ে দি
-আমাদের ওকে স্পেস দেওয়া উচিত
-স্পেস!আর কত স্পেস চাই? দিয়ে দিয়েই তো কোনো কিছুর মূল্য বুঝলো না
ওদিকে মুম্বাইয়ের ঘরে~~
জুতো,ব্যাগ,খাবার,জামা-কাপড় সব কিছু পরে আছে অগোছালো ভাবে।ওয়ান বি এইচ কে-এর বেড রুমে তখন শুধু দুই প্রেমী, নিজের শরীর মন সমর্পণ করেছে,একে অপরের কাছে।সারারাত কখনো আবেগে,কখনো পশুর মতো হিংস্র হয়ে মিটিয়েছে তাঁদের শরীরী ক্ষুধা……….
পরের দিন বেলা প্রায় এগারোটা চল্লিশ…..
-এ..ই ওঠ না! কি জানি কটা বাজে?
-ঘড়ি দেখে কি হবে জানু? এখন আমাদের একটাই কাজ
-কি কাজ?
পর্ণা কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে-শুধু আদর করা।দিন রাত শুধু আ…..দর আর আ….দর
-ছাড়! উঠতে দে।খিদে পেয়েছে,রাতেও কিছু খাই নি
পর্ণাকে আদর করতে করতে-দেখলি তো,রাতে এত আদর খেয়েও তোর পেট ভরে নি।তাহলে ছাড়ি কি করে বল!
দুপুর তিনটে তেরো, পর্ণা চোখ খুলে,শুয়ে শুয়ে দেখলো মাথার ওপর ফ্যানটা প্রচন্ড জোরে চলছে,কিন্তু তার হওয়া টা যেন পর্ণার শরীরকে শীতল করতে পারছে না।পর্ণা ওঠার চেষ্ঠা করছিল,অনুভব করলো সারা শরীর ব্যাথা।ঘাড়টা কোনোমতে কাত করে দেখলো,বনি উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে।পায়ের কাছে জামা কাপড় গুলো পড়ে আছে দেখেও,পর্ণার যেন ওঠার ক্ষমতা নেই।কিন্তু প্রচন্ড খিদে পাওয়ায়,কোনো মতে ধীরে ধীরে উঠে,জামা কাপড় পরে মোবাইলটা দেখলো,দুপুর তিনটে বেজে গেছে,আর ফোনের স্ক্রিনে লাল আলো জ্বলছিল।রাতে ফোনটা চার্জে না দেওয়ায়
চার্জ ছিল সাত পার্সেন্ট।ফোনটা চার্জে দিয়ে বেডরুমের বাইরে গিয়ে দেখলো ডাইনিং টেবিলের ওপর কাল রাতের খাবারের প্যাকেটটা রাখা।পর্ণা তাড়াতাড়ি গিয়ে প্যাকেটটায় হাত দিতেই দুর্গন্ধে, পর্ণা নাক বন্ধ করে রান্নাঘরে প্যাকেটটা ডাস্টবিনে ফেলতে গিয়ে দেখে,রান্নাঘরে বেশ কিছু কৌটো,কিছু বাসন কেনা,কিছু প্যাকেট পরে আছে।দুটো বিস্কুটের প্যাকেট,চা পাতার আর চিনির প্যাকেট রাখা।
পর্ণার খিদেতে তখন রাগে,দুঃখে কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না।বাড়িতে থাকতে কখনো খিদে পেয়েছে বললে যে, পর্ণার মুখের সামনে তার মা তাঁর পছন্দের খাবার ধরতো।পর্ণা ফ্রেস হতে ওয়াশরুমে চলে গেল।ওয়াশ রুমে শুধু একটা সাবান।না শ্যাম্পু আছে, না পারফিউম বা পাউডার?কোনো মতে স্নান সেরে বেরিয়ে দেখে বনি ব্রাশ করছে।বনি, পর্ণাকে দেখে দুষ্টু হাসিতে এগোতেই যাচ্ছিল।তাই দেখে পর্ণা…..
-দূরে থাক!একদম কাছে আসবি না।ঘরে একটু কিছু খাবার রাখতে পারিস নি? আমি এখনই বেরোবো,কিছু খেতে যাবো
-বাইরে যাবি বলছিস,কিছু চিনিস এখানে?
-সো ওয়াট!আমাকে কি তুই বোকা পেয়েছিস? আমি ঠিক খুঁজে নেবো
-দাঁড়া আমি খাবার অর্ডার দিয়ে আনিয়ে নিচ্ছি
-তাহলে তাড়াতাড়ি কর,আমি বরং এখন বিস্কুট খাই
★★★★★★★
তিনসপ্তাহ পর কলকাতায় রাত এগারোটা পনেরো….অভির আর তনুর চ্যাট
-কাল এই সময় আমি হায়দ্রাবাদ পৌছিয়ে যাবো।নতুন জায়গায় যাচ্ছি,এমনি আমি খুব এক্সাইটেড জানিস?তবে তোদের সবার থেকে একটু দূরে হয়ে যাচ্ছি,এই আরকি।মা লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদছে,ভাবে আমি দেখিনা কিছু।গুড্ডিটার হাসিটাও এখন আর্টিফিসিয়াল।ও দেখাচ্ছে ও খুব খুশি,ওর কষ্ট হচ্ছে না,আর বাবা তো….যাক ছাড়
তুই আমায় মিস করবি তো?
-জানি না
-অবশ্য মিস করার কিছু নেই,এখন ফোন আছে,তাই আর অত চিন্তা নেই।ফোনে কথা হবে,চ্যাট হবে,ভিডিও কল হবে
-শেষেরটা হবে না
-কেন?ভিডিওতে দেখলে কি হবে?
-না ওটা হবে না
-কেন? তুই কি ঐশ্বর্য রাই যে তোকে ভিডিওতে দেখা যাবে না?
-আমি কি তাই বললাম? কিন্তু না,ওটা হবে না
-তার মানে ওটা তোর কাছে ননভেজ?
-হম
-ও! তার মানে আমি বাবাদের একটু ভিডিওতে দেখবো,কথা বলবো,সেটা ননভেজ? মানে কোনো পুরুষ নারী কেউ কাউকে দেখলেই ননভেজ?
-বাড়ির লোকেদের সাথে করলে হয় না
-ও! শুধু তোর সাথে করলে হয়?
-অন্য কোনো নারী পুরুষ ভিডিও কল করলে ওটা খারাপ
-নারী পুরুষ? তুই নারী হয়েছিস?
-ঘুমাতে যাও
-না মানে তুই তো এখনো কিড,তোর নারী হতে দেরি আছে
-আমি অফ হচ্ছি
-শোন না!
-কি?
-মাঝে মাঝে বাড়িতে আসিস,গুড্ডি টা…..
-ওদের নিয়ে ভেবো না।মন তো ওদের খুব খারাপ হবেই কিন্তু আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।আমি যাবো
-তুই কিড হলে কি হবে,তোকে কোনো কথা বলে এত শান্তি পাই।যাক এবার শুয়ে পড়ি
-হম
ওদিকে মুম্বাইয়ে~~~~~
পর্ণা-কি রে তোর আজ অফিস নেই
বনি-শরীরটা ভালো লাগছে না রে
-কেন কি হলো?
-খুব ম্যাজ ম্যাজ করছে শরীরটা
-একি!!!তুই সকাল বেলায়ই এসব দেখতে বসে গেছিস?তোর এসব ছাড়া আর কিছু দেখার নেই, না?
-আরে! জগতে নারী আর পুরুষের শরীরের তৃপ্তির মতো সুখ আর কি আছে বল?
-ছিঃ বন্ধ কর এসব! আমি বেরোচ্ছি।ও হ্যা!ঘর ভাড়ার অর্ধেক টাকাটা ওখানে রেখে গেছি,বাকিটা তুই দিয়ে ,ভাড়াটা দিয়ে দিস
-আমার এখন হাত খালি
-মানে?আমাদের তো কথা হয়েছিল,আমরা সব কিছু দুজনে হাফ হাফ দেবো
-হ্যা হয়েছিল।আর তুই আসার আগে যে এই বাসন পত্র হাবিজাবি সব কিনলাম!
-সেগুলোর জন্য তো আমি তোকে এখানে আসার আগেই পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলাম
-তুই তো অনেক আগে পাঠিয়েছিলি
-তাতে কি! তুই কেন টাকাটা নিজে খরচ করেছিস?ওটা তো আমি আমাদের ঘরের জিনিস পত্র কেনার জন্য পাঠিয়েছিলাম
-শোন! কাজে যাচ্ছিস যা,ওই টিপিক্যাল বউ দের মতো খিঁচ খিঁচ করিস না তো
-ওয়াট!!!খিঁচ খিঁচ?ওই ভুলটা করিস না বনি,আমি টিপিক্যাল হাউস ওয়াইফ দের মতো নই।তুই একটা বলবি আমি দশটা শোনাবো।ওহ শিট! দেরি হয়ে গেল
★★★★★★★★★★
একমাস পর হায়দ্রাবাদে অভির জন্মদিনের আগের দিন রাত ঠিক বারোটায় তনুর মেসেজ…..
-শিগগিরই কানে এয়ার ফোনটা লাগাও
-দাঁড়া লাগাচ্ছি
-যেই অডিওটা পাঠালাম ওটা শোনো
-ডাউনলোড হচ্ছে
তনু অভিকে বার্থ ডে কার্ড পাঠালো।অভি অডিওটা চালিয়ে শুনলো হ্যাপি বার্থডে টু ইউ গানটা হচ্ছিল।অভি ঘড়ি দেখলো ঠিক রাত বারোটা।কার্ডটায় অভির ছবি দেওয়া।একটা কেকের ছবি এলো অভির কাছে, তারপর একটা ছুড়ির।তনু লিখলো,”কেকটা কাটো, আমি দেখছি।”সঙ্গে সঙ্গে অভির কাছে তনুর শুধু দুটো চোখের ছবি আসলো।
-কেটেছো?
-কেটেছি
তনু দু পিস কেকের টুকরো,পপ কর্ন, আইসক্রিমের ইমোজি পাঠালো
-নাও খাও?
-খেলাম
-এবার ছাদে যাও
-ছাদে?এখন?
-হ্যা
-এত রাতে যাওয়াটা ঠিক হবে?
-হবে!যাও না একটু
-কিন্তু ছাদে গিয়ে কি হবে?
-আগে যাও তো,তারপরে বলছি
-দাঁড়া যাচ্ছি
-ফোন অফ করবে না
-ওকে
চার.
তনু অভিকে বার্থ ডে কার্ড পাঠালো।অভি অডিওটা চালিয়ে শুনলো হ্যাপি বার্থডে টু ইউ গানটা হচ্ছিল।অভি ঘড়ি দেখলো ঠিক রাত বারোটা।কার্ডটায় অভির ছবি দেওয়া।একটা কেকের ছবি এলো অভির কাছে, তারপর একটা ছুড়ির।তনু লিখলো,কেকটা কাটো, আমি দেখছি।সঙ্গে সঙ্গে অভির কাছে তনুর শুধু দুটো চোখের ছবি আসলো।
-কেটেছো?
-কেটেছি
তনু দু পিস কেকের টুকরো,পপ কর্ন, আইসক্রিমের ইমোজি পাঠালো
-নাও খাও,…….খেয়েছো?
-খেলাম
-এবার ছাদে যাও
-ছাদে?এখন?
-হ্যা
-এত রাতে যাওয়াটা ঠিক হবে?
-হবে!যাও না একটু
-কিন্তু ছাদে গিয়ে কি হবে?
-আগে যাও তো,তারপরে বলছি
-দাঁড়া যাচ্ছি
-ফোন অফ করবে না
-ওকে
অভি বেশ কিছুক্ষণ পরে ছাদে উঠে….
-উঠেছি
-চাঁদ দেখতে পাচ্ছো?
-হ্যা
-আমিও
-তুই? কি করে?
-আমি আমাদের গেটের মুখে দাঁড়িয়ে।দ্যাখো তোমার জন্মদিনে আমরা বেশি দূরে নেই,একসাথে দুজনে চাঁদকে একসাথে দেখলাম
-তুই শিগগিরই গেটের ভিতরে ঢোক,এক্ষুণি! তুই কবে বড় হবি বলতো?এত রাতে কেউ একা গেট খুলে বাইরে দাঁড়ায়? তোর কবে বুদ্ধি হবে বলতো?
ঘরে ঢুকেছিস? কিরে?
অভি দেখলো তনু অফ হয়ে গেছে।অভিও ছাদের থেকে নেমে ঘরে ঢুকেও দেখলো তনু আর অন হয় নি।অভির খুব খারাপ লাগছিল।তনু ওর জন্মদিনটা এত দূর থেকেও, কত স্পেশাল করে সেলিব্রেট করার চেষ্টা করছিল আর অভি ওইভাবে ওকে বলল।তনু যে খুব নরম মনের মেয়ে,খুব চাপা,অভিমানী ,তা অভি জানতো, তাই এসএমএস এ মেসেজ এ অভি লিখলো…..
-প্লিস একবার অন হ
তনু মেসেজ দেখেও উত্তর দেয় নি।আবার মেসেজ এলো।
“কাউকে যখন ফাঁসি দেওয়া হয়,তখন তাঁকেও তাঁর শেষ ইচ্ছাটা বলার জন্য সুযোগ দেয়।একটু কথা তো বলার সুযোগ দে,প্লিস”
তবুও তনু কোনো উত্তর দেয় নি।আবার মেসেজ এলো….
“আজ কিন্তু আমার জন্মদিন,আজকের দিনে দুঃখ দিতে নেই,আয় বলছি”
কিছুক্ষণ পর তনু অনলাইন হয়ে ওয়াটসঅ্যাপ খুললো।অভির মেসেজ….
“রাগ করেছিস?”
তনুর কোনো মেসেজ নেই।অভি আবার মেসেজ দিলো….
“একটা কথা ভাব তো,তোদের বাড়িতে এত লোক,এত রাতে তোকে যদি বাইরের গেটের সামনে দেখতো কি হতো?তাছাড়া বাইরের ও যদি কেউ……এসব মাথায় ছিল তোর ?কিছু না ভেবেই বেরিয়ে গিয়েছিলি?”
“গুড্ডি তোমার জন্য কষ্ট পাচ্ছিলো,বলছিল এবার তোমার জন্মদিনে তোমার কাছে কেউ নেই, তুমি একা, তাই তো আমি তোমার সাথে….”
“বেশ করেছিস।সত্যিই তো, বাড়িতে থাকলে এতক্ষণে গুড্ডিটা ঘরে হৈচৈ শুরু করে দিত।কিন্তু দ্যাখ,দূরে থেকেও যে কত কিছু করা যায় তা তোর থেকে শেখার আছে।আমি তো নিজেই এসব করার কথা ভাবতে পারবো না।গুড্ডিও কি ভেবেছে?”
“আচ্ছা হয়েছে”
“তবে তুই কিন্তু আজকের মতো ঐরকম কখনো করবি না।তুই ফোনে ঘরে থেকে যা ইচ্ছা কর কিন্তু রাতে কখনো বাইরে বেরোবি না”
“একটা কথা রাখবে?”
“বল?”
“কাল তোমার জন্মদিন,কাল একটু ভালো কিছু খেও”
“বল কি খাবো?”
“তোমার যা ইচ্ছা,যেটা তুমি ভালোবাসো”
“তাহলে তো ননভেজ খেতে হবে”
“খেও”
“আমার ননভেজ? না তোর?”
“ঘুম পেয়েছে”
“ওমনি কেটে পড়ছিস! আচ্ছা যা শুতে যা,কাল কথা হবে”
পর্ণার বাবা মার পর্ণার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিল,তাঁরা মেয়েকে খুব ভালো চেনেন,তাই সব সময় খুব আতঙ্কে থাকতেন।এবার বাবা ফোন করলো পর্ণাকে…..
-কি রে ব্যস্ত আছিস ?
-না! বলো বাবা
-সব ঠিক আছে তো?
-হ্যা, তোমরা ঠিক আছো তো?
-হ্যা, টাকা পয়সা আছে না পাঠাবো?
-আছে
-ঠিক আছে,রাখছি
-হ্যা
পর্ণা খুব ভালো না থাকলেও,বাবাকে সে কিছুই বলে নি।অনেক বড় মুখ করে এখানে বনির সাথে থাকবে বলেছিল,তাই এখন কিছু আর বলতে পারল না।বনির সাথে যে, সব সময় পর্ণার খুব অশান্তি হতো তা নয়।এখানে পর্ণা অনেক বেশি স্বাধীন,তবে মাঝে মাঝেই…..
পর্ণা-রাতে আমি ডিনার করবো না,তুই খেয়ে নিস
বনি-আজ তোর আবার পার্টি?
-হ্যা
-আবার মাঝরাতে ফিরবি?
-সো ওয়াট!
-এসব কিন্তু পরে আর চলবে না
-মানে?
-তোর যা লাইফস্টাইল দেখছি,তোর কথা কি আর বাড়িতে বলা যায়?
-আমার কি লাইফ স্টাইল দেখলি? এই পার্টি তে যাওয়ার কথা বলছিস?
বনি কোনো উত্তর না দিলে,পর্ণা বলে….
-তুই বলতে না পারলে আমায় বলিস,আমি বলে দেবো
-কি বলবি?
-এই আমাদের দুজনের লাইফস্টাইল।আমার চাকরিতে যেহেতু মার্কেটিংয়ের ব্যাপার আছে তাই ক্লাইন্টদের জন্য পার্টি দেওয়াটা অফিসের কাজের মধ্যেই পরে।কিন্তু তোর বাড়ির লোকেরা জানে কি তাদের সো কল্ড আদরের ছেলে ঘুম থেকে উঠেই বসে যায় পর্ন মুভি দেখতে?
ওখান থেকে বনি উঠে চলে যায়।বনির মধ্যে অনেক দোষ আছে কিন্তু বনির দুর্বলতা হলো শরীরের খিদে।সকালে বনি যে মুডেই থাকুকনা কেন,রাতে পর্ণার শরীরের চাহিদায় সে পর্ণার সব কথা মেনে নেয় কিন্তু সকালে আবার যেই কি সেই।অনেকটা মদের নেশার মতো,তবে এটা শরীরের নেশা।পর্ণা একবার বনিকে জিজ্ঞেসও করেছিল যে বনি যখন এত নারীর শরীরে আসক্ত,তাহলে পর্ণার সাথে থাকে কেন,ও তো উপযুক্ত জায়গায় গিয়ে বহু নারীর সাথেই সম্পর্ক রাখতে পারে কিন্তু বনির মতে নারীর সম্মতিতে যে সম্ভোগ হয় সেটাই নাকি আসল তৃপ্তি।পর্ণার আবার বনির এই সব উদ্ভট ফান্ডা মাথায় ঢোকে না।
যতই পর্ণা বাবাকে বলুক যে মুম্বাইয়ের কালচার কলকাতার কালচারের থেকে অনেক উন্নত কিন্তু,কলকাতার মানুষের মতো বাজার হাটে দেখা হলে হাড়ির খবর না নিলেও,পার্টিতে কিন্তু পর্ণার এই লিভ টুগেদার নিয়ে ভালোই কানা ঘুষো চলতো।কেউ কেউ তো ইনিয়ে বিনিয়েও পর্ণাকে অনেক কিছু বলতো……
-লিভ টুগেদারে থাকাটা বেশ ভালো,যখন ইচ্ছা থাকো, যখন ইচ্ছা ছেড়ে চলে যাও
-ভুল বললেন! ছাড়ার জন্য লিভ টুগেদার থাকার কি আছে,আজকের দিনে এখন ঘরে ঘরে ডিভোর্স হচ্ছে,বিবাহিত নারী পুরুষরাও খুব সতীপনা দেখিয়েও দেখুন ফেসবুকে কতজনের সাথে রিলেশান রাখছে
টোন করে বলুক আর সরাসরি বলুক পর্ণা ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়।সোসাইটির লোকেদের ট্যাকেল করতে সে ভালোই পারতো কিন্তু তবুও এই বিয়ে করে সংসার করা আর বিয়ে না করে থাকার ভেদাভেদটা এখনো যে সমাজ স্বাভাবিক ভাবে স্বীকার করতে পারছে না,সেটা পর্ণা ভালোই বুঝতে পারে।
রোজের মতোই সেদিন অভি মেসেজ দেওয়ায়,তনু জানায় তনুর খুব মন খারাপ।ওই বাতাসির বিয়ে হলো না বলে….
-বাতাসি কে?
-আমার জেঠুর ঘরে কাজ করতো
-কি হয়েছে ওর?
-গত পরশু ওর বিয়ে ছিল।আজ শুনলাম হয় নি
-কেন?
-টাকা পয়সার জন্য
-ও
– জানোতো,ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসতো
-তাহলে এরকম হলো কি করে?
-কি জানি,কেউ বলছে ছেলেটা ভালো না,কেউ বলছে,ছেলেটার মা নাকি খুব খারাপ।ছেলেকে বাধ্য করেছে বিয়ে না করার জন্য
-ও
কিছুক্ষণ তনুর মেসেজ আসছে না দেখে….
-কি রে ঘুমিয়ে পড়েছিস?
-না
-তাহলে চুপ হয়ে গেলি কেন?
-আচ্ছা? ওরা যদি বিয়ে না ই করবে,তাহলে আগেই তো বলে দিতে পারতো।বাতাসির মা কত কষ্ট করে সব আয়োজন করেছিল।এখন তো সে নিঃস্ব হয়ে গেল।মেয়েটা খুব ভালো জানো?সাত বছর ধরে জেঠুর বাড়িতে কাজ করছে।ভালো মানুষদের সাথেই কেন এরকম হয়?
-কত টাকার জন্য বিয়ে আটকে গেলো?
-কি জানি
-শান্ত মাথায় ভেবে দ্যাখ,হয়তো ও ভালো বলেই ভগবান ওকে বাঁচিয়ে দিয়েছে
-মানে
-যারা টাকার জন্য বিয়ের দিন, বিয়ে ভেঙে দিতে পারে।তারা বিয়ের পর টাকার জন্য ওকে তো মারধোর ও করতে পারতো,তাই না বল?
-হম
-এখন ক’দিন,ক’মাস হয়তো বছর লোকে এসব মনে রাখবে তারপর সবাই ভুলে যাবে।কিন্তু লোকের ভয়ে যদি ওর মা ধার দেনা করে ওকে বিয়ে দিতো তখন হয়তো সারাজীবনটা ওর নষ্ট হয়ে যেত
-একটা কথা মনে হচ্ছে
-কি?
-তোমরা অর্চিতের খুব ভালো করে খবর নিও।পরে গুড্ডির যেন কোনো কষ্ট না হয়
-হম।আর তোর বিয়ের সময়?
-আমি তো বিয়েই করবো না।মার সাথে থাকবো
-আরে বিয়ে করবি না কেন? অবশ্য সারাক্ষণ ভেজ হলে কি আর বিয়ের ইচ্ছা হবে? আমার মতো ননভেজ হয়ে দ্যাখ,তখন একদম বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যাবি
-তার মানে তুমি বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছো?
-সেটা না হওয়ার কি আছে! বিয়ের বয়স হয়েছে,সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঠিক আছে,হরমোনের ও কোনো গন্ডগোল নেই
-চুপ করবে?আমি এক্ষুণি অফ হবো বলে দিচ্ছি
-এসব ব্যাপারে তোর সাথে একটু মন খুলে কথা বলতে পারি না।তোর সব কিছুই ননভেজ লাগে
-আর মন খুলতে হবে না
-না!!! তোকে তো মোটেই বিয়ে দেওয়া যাবে না
-কি বলছো?
-ঠিকই বলছি।ফুলশয্যার রাত কাটলেই তোকে ওরা ফেরত দিয়ে যাবে।বলবে ইনি তো মঙ্গল গ্রহের তাই ছুলেই ধোঁয়া বেরোচ্ছে
-যা পারো বলতে থাকো।আমি অফ হলাম
প্রত্যেক মানুষই নিজের স্বাধীনতা চায়।বনির মন্দ গুলো পর্ণা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে সেই স্বাধীনতার লোভে।বনি কখনোই সংসারী টাইপের না।সে নিজে জানে যে সে কতটা অলস,অগোছালো।পর্ণা বনির থেকে বেশি রোজগার করতো।পর্ণা একটু চেঁচামেচি বেশি করলেও পর্ণার সাথে থাকলে তার বাউন্ডুলে জীবনের ধারাটা যে বেশ ভালোই কাটছিল,তা বনি ভালোই বুঝতো।আলাদা আলাদা চাহিদার কারণ হলেও দুজনে নিজের নিজের স্বার্থে দুজনকে মানিয়ে চলছিল।ওদিকে এসবের থেকে অজানা বনির পরিবার বনির জন্য মেয়ে দেখে ফ্যালে।বনির বাবা কায়দা করে ব্যাংকের নমিনির জন্য বনির ঠিকানা লাগবে বলে,বনির থেকে ঠিকানাটা জেনে নেন।তার দু সপ্তাহ পর একদিন সকালে পর্ণা ঘুম থেকে উঠে,নিজেদের টিফিনটা বানাচ্ছে,হঠাৎ বেল বেজে ওঠায় পর্ণা গিয়ে দরজা খুলে দ্যাখে বনির বাবা মা।পর্ণা ওনাদের ছবি আগে দেখেছিল।বনির বাবা পর্ণাকে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে….
-সরি,আমরা বোধহয় ভুল ঠিকানায় এসেছি।আমরা বনি বসুর বাড়ি খুঁজছিলাম
-বনি এখানেই থাকে
-ও,তাহলে তুমি? তোমায় তো ঠিক চিনলাম না?
পাঁচ.
ওদিকে এসবের থেকে অজানা বনির পরিবার বনির জন্য মেয়ে দেখে ফ্যালে।বনির বাবা কায়দা করে ব্যাংকের নমিনির জন্য বনির ঠিকানা লাগবে বলে,বনির থেকে ঠিকানাটা জেনে নেন।তার দু সপ্তাহ পর একদিন সকালে পর্ণা ঘুম থেকে উঠে,নিজেদের টিফিনটা বানাচ্ছে,হঠাৎ বেল বেজে ওঠায় পর্ণা গিয়ে দরজা খুলে দ্যাখে বনির বাবা মা।পর্ণা ওনাদের ছবি আগে দেখেছিল।বনির বাবা পর্ণাকে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে….
-সরি,আমরা বোধহয় ভুল ঠিকানায় এসেছি।আমরা বনি বসুর বাড়ি খুঁজছিলাম
-বনি এখানেই থাকে
-ও,তাহলে তুমি? তোমায় তো ঠিক চিনলাম না?
-ভিতরে আসুন,আমি বনিকে ডেকে দিচ্ছি
বনির বাবা মায়েরা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হয়েই ঘরে ঢুকলেন।পর্ণা তাড়াতাড়ি গিয়ে বনি কে ডাকলো।প্রচন্ড ঘুমের মধ্যেও আবছা ভাবে যেই বনি শুনলো যে বনির বাবা মা এসেছেন সঙ্গে সঙ্গে কারেন্টের শক খাওয়ার মতো এক ঝটকায় উঠে বসলো বনি।পর্ণা খুব শান্ত ভাবে বলল….
-ওনাদের যখন ঠিকানাটা দিয়েছিলি তখন আমার কথাটা বলে দিলে ভালো হতো না কি? যা দ্যাখ এবার কি বলবি
বনি তাড়াতাড়ি ঠিক ঠাক জামা কাপড় পরে একদম বাধ্য ছেলের মতো চোখ ডোলতে ডোলতে বাবা মার সামনে গিয়ে ওনাদের প্রণাম করে,মার গা ঘেষে বসে……
-তোমরা হঠাৎ এখানে?
মা-কেন!আমরা তোর কাছে আসতে পারি না?
-সেটা বলিনি,তোমরা আগে জানালে আমি তোমাদের আনতে চলে যেতাম
বাবা-সে ঠিক আছে।আমাদের এখানে আসতে কোনো অসুবিধা হয় নি
মা-হ্যা রে এই মেয়েটা কে? তোর কোনো বন্ধুর বউ টউ?
পর্ণার কথা কি ভাবে বলবে বনির মাথায় তখন কিচ্ছু আসছিল না।কারণ বনি যতই মর্ডান হোক না কেন,তাঁর বাবা মা তো মর্ডান নয়,তাই মার ওই কথাটা শুনে সেই মুহূর্তে পরিস্থিতি ঠিক রাখতে….
-হ্যা, আমার বন্ধুর…..
মা-কিন্তু দেখে তো মনে হলো না বিবাহিতা?
-ওই সামনেই ওদের বিয়ে
এত আস্তে আস্তে কথা হচ্ছে যে ভিতরে পর্ণা কিছুই শুনতে পায় নি।পর্ণার বেরোনোর তাড়া ছিল,তাই ভিতরের ঘরে রেডি হতে হতে ভাবছিল যে না জানি কি ভাবে রিয়েক্ট করবেন ওনারা,হয়তো অফিস যাওয়া নাও হতে পারে।ঠিক তখনই বনি বেডরুমে ঢুকে পর্ণাকে বলে…..
-শোন, একটা কথা বলছি,রিয়েক্ট করিস না।মা ভেবেছে তুই আমার বন্ধুর হবু স্ত্রী
-কীইই!!!
-আস্তে আস্তে….দ্যাখ,আমি জানি না ওরা এখানে চলে আসবে।বাবা আমাকে ব্যাংকের একটা ব্যাপারে আমার ঠিকানা চেয়েছিল,আর সেটা র জন্য ওরা এখানে আসতে পেরেছে।তুই জানিস তোর বাড়ির লোকেরা কেমন রিয়েক্ট করেছিল আমরা একসাথে থাকবো শুনে।তোর বাবা মা রা শহুরে হয়েও তাদের ওই অবস্থা হয়েছিল আর সেখানে আমার বাবা মা গ্রাম্য পরিবেশের মানসিকতা রাখে ওঁরা তো লিভ টুগেদার কি তাই জানে না
-আমাকে এখন এসব বলে কি হবে? তোর আগেই ওনাদের বলা…..
-বলবো বলবো।দু এক দিনের মধ্যেই বলবো।তুই সেই অবধি একটু এক্টিং করে চল।প্লিস মাথা গরম করিস না
-আর তোর সেই বন্ধুটি আসবে কোথা থেকে শুনি?
-ওসব নিয়ে ভাবিস না,আমি দেখছি কি করা যায়।তুই খেয়ে বেরিয়ে যা
-না,আমি আর খাচ্ছি না,টিফিন ও নিচ্ছি না।ওগুলো তোরা তিনজন খেয়ে নিস।ওনারা এত দূর থেকে এসেছেন।যা তুই বাইরে যা,আমি আসছি
বনি বেডরুম থেকে বেরিয়ে,বাবা মার সাথে বাড়ির এর তার খবর নিতে নিতে,পর্ণা পুরো রেডি হয়ে বেরিয়ে ,বনির বাবা মা কে প্রণাম করতেই বনি বলে উঠলো…..
-ওর নাম পর্ণা
বনির মা-থাক থাক! তুমি কোথাও যাচ্ছ?
পর্ণা-হ্যা, আমি জব করি তো
-ও!আচ্ছা এসো
পর্ণা বনির দিকে তাকিয়ে-সবাই মিলে টিফিনটা খেয়ে নিস
পর্ণা ঘর থেকে বেরোতেই সঙ্গে সঙ্গে বনির মা- তোকে তুই করে বলল কেন?যাই বলিস না কেন,মেয়েটার মধ্যে কোনো লাজ লজ্জা নেই
বনি-এরকম কেন বলছো?ও আমার বয়সী তাই তুই বলছে
-তোর বন্ধু কোথায়? এ কোন বন্ধু? আমরা চিনি?
-না, তোমরা চেনো না।ও দুদিনের জন্য অফিসের কাজে বাইরে গেছে
-ছি ছি! এসব কি বলছিস? তোর বন্ধু এখানে নেই আর ওই মেয়েটা তোর সাথে একা এই ঘরে থাকে?
কি দিনকাল পড়েছে।আজকালকার বাবা মা গুলো মেয়ে গুলোকে লায় দিয়ে এত মাথায় তোলে…একটা আইবুড়ো মেয়ে দুটো পুরুষের সাথে থাকে আর ওর বাড়ির লোকেরা কিছু বলে না?
বনির বাবা-আচ্ছা হয়েছে,এবার জামা কাপড় পাল্টাও
-হ্যা বাবা,তোমরা চেঞ্জ করে নাও আমিও একটু ব্রাশ করে নি
বনি, বাবা মাকে যতই যা বোঝাক না কেন,বনির মার মনে সন্দেহ কিছুতেই যাচ্ছিল না।টিফিন খেতে খেতে …..
-আমি তো এটা বুঝতে পারছি না,তোর বন্ধু যদি আর কদিন পরে এই মেয়েটাকে বিয়ে করবে,তাহলে বিয়ের আগে এভাবে কেউ থাকে নাকি
-থাকে,শহরে এসব হয় মা।আর থাকে তো কি হয়েছে? দুজনের বিয়ে যখন হবেই তাতে দোষ কোথায়?
-তাহলে যখন দুজনে থাকলো,অন্তত মন্দিরে গিয়ে বিয়ে টা তো করে আসতে পারতো? সিঁদুর না পরালে কেউ স্বামীর ঘরে থাকে?
বনির বাবা-এসবের মধ্যে তুই জড়াতে গেলি কেন?তোর ছোট ঘর।কোথায় ঘুমাশ তিনজন?
বনির বাবা মার প্রশ্নের বানে বনির অবস্থা খুব খারাপ।হঠাৎ বনি বলল…..
বাবা আমি একটু বাইরে থেকে আসছি,আমার একটা কাজ আছে।আমি এসে তোমাদের সব কথার উত্তর দিচ্ছি
একথা বলে বনি ফোন আর ওয়ালেট নিয়ে বেরিয়ে যায়।একটু খানি গিয়েই বনি পর্ণাকে ফোন করে…..
-কথা ছিল
-বল
-বাবা মা তোকে নিয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছে।শোন না,দুটো দিন একটু ম্যানেজ করনা
-কি ম্যানেজ করবো?
-আমি একটা হোটেল দুদিনের জন্য বুক করে দিচ্ছি,তুই শুধু দুটো দিন ওখানে থাক।দ্যাখ আমি চাই না,মা রা এখানে কোনো লাফরা করুক।ওরা চলে গেলে,আমি দুদিনের জন্য বাড়িতে গিয়ে তখন ওদের সব বলবো
-এটা তুই কি করে বলছিস?তুই এতদিন বলিস নি কেন? আর চাপিস না,যেটা সত্যি বলে দে
(প্রচন্ড রেগে গিয়ে)-তোর জ্ঞান শোনার এখন সময় নেই।আমি একটা বিপদে পড়েছি,তুই পারবি কি না বল!
-ওনারা যদি দুদিনের পর ফিরে না যান তাহলে?
-সে দায়িত্ব আমার
-ঠিক আছে,তুই আমার থাকার ব্যবস্থা কর, আমি অফিস থেকে ফিরে ওখান থেকে আমার দরকারি জিনিস গুলো নিয়ে আসবো
কলকাতায়~~
গুড্ডির আর অর্চিতের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।দুই বাড়ির সম্মতিতে এই বিয়ে ঠিক হয়েছে।তবে ছেলের বাড়ির চাপে দেড় সপ্তাহ পরই বিয়ের ডেট ঠিক করতে হয়েছে।অর্চিতের মা রা কুষ্টি বিচারে বিশ্বাসী।যদিও গুড্ডি আর অর্চিতের কুষ্টি খুব ভালো মিলেছে তবে অর্চিতের কুষ্টিতে দু সপ্তাহ পর একটা ফারা আছে যা নাকি তার অর্ধাঙ্গিনীর ভাগ্য জড়ালে সেই ফারা নাকি কেটে যাবে।তাই এই বিয়ের এত তাড়া।অভির নতুন চাকরি হওয়ায় সে চার দিনের বেশি ছুটি পাবে না।তাই এত কম সময়ে গুড্ডির বাবা মা কেই সমস্ত আয়োজন করতে হবে।একমাত্র গয়নাটাই রেডি ছিল,আর বাকি সবটাই করতে হবে।
মুম্বাইয়ে~~
বনি, ঘরে না গিয়ে আগে পর্ণার থাকার ব্যবস্থা করার জন্য এদিক ওদিক করতে থাকে।ওদিকে বনির বাবা মা, বনির জামা কাপড়ের সাথে পর্ণার জামা কাপড়,পর্ণার অন্য জিনিস পত্র রাখা দেখে প্রচন্ড রেগে যান।ওনাদের ধারণা হয় যে ,ওনাদের সরল সাদা সিধে ছেলেকে এই পর্ণা বোধ হয় ফাঁসাতে চাইছে।বনির মা পর্ণার সব জিনিসপত্র মাটিতে ফেলে এক জায়গায় জড়ো করছিল।এমন সময় বেল বাজায় ওনারা ভাবেন বনি এসেছে।বনির বাবা দরজা খুলে দ্যাখেন পর্ণা।আসলে বনির সাথে পর্ণার ওই সব কথা হওয়ার পর,পর্ণা মেন্টালি খুব ডিস্টার্ব ছিল।ওদিকে অফিসে দুদিন পর ইন্সপেকশান,তাই অনেক রাত অবধি অফিসে থাকতে হবে।তাই পর্ণা ভাবলো বাড়ি গিয়ে ওর জিনিস পত্র গুলো নিয়ে অফিসেই রেখে দেবে,রাতে ওখান থেকেই হোটেলে চলে যাবে।হঠাৎ ওই সময়ে পর্ণাকে দেখে বনির বাবা ঘাবড়ে যায়।পর্ণা ভিতরের ঘরে ঢুকতে গিয়ে দ্যাখে,বনির মা পর্ণার সব জিনিস…..
প্রচন্ড রাগে পর্ণা এগিয়ে গিয়ে বলে……
-হাউ ডেয়ার ইউ!এসব কি করছেন আপনি?
-তুমি আমার ছেলের জিনিসের সাথে তোমার সব জিনিস রেখেছো কেন?তুমি না অন্যের বউ হতে চলছো?
পর্ণার অন্তর্বাস তুলে দেখিয়ে বলেন-ছি ছি!কী নোংরা মেয়ে তুমি,আমার ছেলের জামার সাথে এসব রেখেছ?তোমার বাবা মা তোমায় ছেলেদের মাথা নষ্ট করার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন? আমার ছেলের কোনো ক্ষতি তুমি করতে পারবে না।আমরা ছেলের জন্য খুব ভালো ভদ্র,ভালো বংশের মেয়ে দেখেছি,তোমার জন্য আমার ছেলের কোনো রকম বদনাম আমি হতে দেবো না
আবার বেল বেজে ওঠে,বনির বাবা তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দ্যাখে বনি।বনি বাবার মুখ,পর্ণার চটি আর মার চিৎকার শুনে ছুটে যেতে গেল, পর্ণাকে কিছু বলতে আটকাবার জন্য কিন্তু ঠিক তখনই পর্ণা বলল……
-অনেক কিছু বললেন,ছেলের দরদে মরে যাচ্ছেন,ছেলের আবার বিয়েও দেবেন,তাহলে এবার আমার আসল পরিচয় টা শুনুন
বনি-পর্ণা স্টপ, প্লিস পর্ণা চুপ কর
পর্ণা-আমি আপনার ছেলের অবিবাহিতা বউ…..
ছয়.
পর্ণার অন্তর্বাস তুলে দেখিয়ে বলেন-ছি ছি!কী নোংরা মেয়ে তুমি,আমার ছেলের জামার সাথে এসব রেখেছ?তোমার বাবা মা র কোনো শিক্ষা দীক্ষা নেই?তাঁরা কি তোমায় ছেলেদের মাথা নষ্ট করার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন? তবে আমার ছেলের কোনো ক্ষতি তুমি করতে পারবে না বলে দিলাম।আমরা ছেলের জন্য আমরা খুব ভালো, ভদ্র,ভালো বংশের মেয়ে দেখেছি।তোমার জন্য আমার ছেলের কোনো রকম বদনাম আমি হতে দেবো না
আবার বেল বেজে ওঠে,বনির বাবা তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দ্যাখে বনি।বনি বাবার মুখ,পর্ণার চটি আর মার চিৎকার শুনে ছুটে যেতে গেল, পর্ণাকে কিছু বলতে আটকাবার জন্য কিন্তু ঠিক তখনই পর্ণা বলল……
-অনেক কিছু বললেন,ছেলের দরদে মরে যাচ্ছেন,ছেলের আবার বিয়েও দেবেন,তাহলে এবার আমার আসল পরিচয়টা শুনুন
বনি-পর্ণা স্টপ, প্লিস পর্ণা চুপ কর
পর্ণা-আমি আপনার ছেলের অবিবাহিতা বউ…..
বনির বাবা-এসব কি বলছো!তোমার তো সাহস কম না?
বনির মা,বনির উদ্দেশ্যে-এসব কি বলছে,বিয়ে না হওয়া বউ মানে কি!……….তুই কিছু বলছিস না কেন?
পর্ণা-ও কি বলবে?ওর বলার সাহস থাকলে তো ও যখন প্রথম আমার সাথে রাত কাটিয়েছে তার আগেই আপনাদের জানাতো
-কীইই! কি বললে?(বনির মা পর্ণার দিকে হাত তুলতে যায়)
(পর্ণা বনির মার হাত টা ধরে)-এমন কিছু করবেন না,যার জন্য আমাকে আপনাদের নামে থানায় কোনো কমপ্লেন করতে হয়
বনি দরজার কাছে ধপাস করে মাটিতে বসে পড়ে
পর্ণা- আগে আপনাদের সব শুনতে হবে,তারপর আমি এখান থেকে যাবো।এই যে আপনার ছেলের হাতে ট্যাটু দেখছেন, এই চুল রং করা,ইংলিশে কথা বলা এই সব দেখে আপনার ছেলের প্রেমে মজেছিলাম আমি।ঠিক হয়েছিল আমরা লিভ টুগেদারে থাকবো।লিভ টুগেদার মানে বিয়ে করবো না কিন্তু দুজন দুজনের সাথে সেই বিবাহিতদের মতোই থাকবো।নিজেদের মধ্যে কথা হয়েছিল,কয়েক মাস দুজনে একসাথে থেকে দেখবো।যদি আমাদের সম্পর্কটা আরো ভালো হয় তারপর ভবিষ্যতে ইচ্ছা হলে বিয়ে করবো।আর যদি দুজন দুজনের সাথে অ্যাডজাস্ট করতে না পারি তখন নিজেদের মধ্যে সব মিটিয়ে আবার যার যার মতো থাকবো।আপনার ছেলের সাথে এই সম্পর্কে আমার কোনো ছলনা ছিল না।যেই বাবা মা,বংশকে আপনি গালি দিলেন সেই বংশের মেয়েই সাহস করে বাবা মা কে এসব কথা জানায়।বাবা, বিশেষ করে মা বার বার বারণ করেছিল কিন্তু আমি শুনি নি।তখন তো আমার ধ্যান জ্ঞান আপনার ছেলে ছিল।ঠিক হয়েছিল আমাদের এই সংসারে যা খরচা হবে দুজনে ভাগ করে নেবো।তা সত্ত্বেও বাবা আমায় আসার আগে টাকা দিয়ে দিয়েছিল।আমার বাবা মা আমার মুখের দিকে তাঁকিয়ে বাধ্য হয়েছিল রাজি হতে।
আপনার ছেলে আপনাদের শুরু থেকে লুকিয়েছে,কারণ ওর মনে পাপ ছিল।আমি ভাবতেও পারি নি যে ও বাড়িতে কাউকে না জানিয়ে,এত বড় সিদ্ধান্ত নেবে।কেন সে আপনাদের জানাতে পারে নি? সে এত মর্ডান যে সে লিভ টুগেদারের কথা ভাবতে পারে,একসাথে থাকতে পারে আর বাড়ির লোকেদের জানাতে তার লজ্জা করেছে?
-তুমি আমার ছেলের কথা বলছো,তুমি কোথাকার সতী
-সতী হতে যাবো কেন? আপনার ছেলেকে ভালোবেসেছিলাম,বাড়িতে জানিয়ে আমাদের দুজনের ইচ্ছায় একসাথে থেকেছি,শুয়েছি
-ছি ছি! কি নির্লজ্জ মেয়ে রে বাবা
-হ্যা ঠিক বলেছেন,আমার সত্যিই লজ্জা করে নি,কারণ মনে মনে ভেবেছিলাম,ভবিষ্যতে আমরা বিয়ে করবো।কিন্তু আপনার ছেলের সাথে থেকে সেই ভুত আমার মাথার থেকে নেমে গেছে।আমাকে নির্লজ্জ বলছেন? আর আপনার ছেলে কী সাধু পুরুষ?
-আমার ছেলে সাদা সিধে বলেই তো,তোমার মত মেয়ের পাল্লায় পড়েছে
-তাই তো! একদম ঠিক বলেছেন!আপনার ছেলে তো এত সাদা সিধে যে তাঁর সারাদিন আমার শরীর লাগতো
বনি-পর্ণা…….তুই জাস্ট এখান থেকে চলে যা
-ও বাবা! এতক্ষণে হুঙ্কার বেরোলো তাহলে!তুই আমায় বের করার কে?তুই যত টাকা দিয়ে এখানে থাকিস., আমিও তত টাকাই দি। তা হ্যা যা বলছিলাম আপনাকে।আপনার ছেলের শুধু আমার শরীর পেলেও হতো না,সারাদিন যখন সময় পেতো পর্ন মুভি দেখতো।পর্ন মুভি মানে জানেন তো? আপনার মুখ দেখে মনে তো হচ্ছে জানেন না
বনি পর্ণার দিকে তেড়ে এলো-তুই চুপ করবি !
-হঠাৎ পুরুষত্ব জেগে উঠেছে কি ব্যাপার?
বনি-মা তুমি ওই ঘরে চলো
বনির মা-কেন যাবো? ও তোর নামে যা ইচ্ছা বলে যাবে আর আমি ওকে ছেড়ে দেবো ভাবছিস!
পর্ণা নিজের জিনিস পত্রগুলো ব্যাগে গুছাতে গুছাতে বলল…..
-আপনার ছেলে যখন কাজে যেতো না,ঘরে আয়েশ করে সারাদিন খেতো,ড্রিংক করতো আর শুধু নারী পুরুষের নগ্নতা দেখতো তখন মনে হতো, আমার এই লিভ টুগেদারে থাকার ডিসিশনটা ভুল নিয়েছিলাম।কিন্তু আজ বুঝছি(বনির দিকে তাকিয়ে) যে ভাগ্যিস তোকে ভালোবেসে বিয়ে করি নি,তাহলে আমার পুরো লাইফ শেষ হয়ে যেত।যাক আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।যেই হোটেল ঠিক করেছিস,আমি ওখানে থেকেই আমার থাকার জায়গা খুঁজে নেবো।তোর বাবা মা রা তোর জন্য মেয়ে দেখেছে।তোর সাথে আর তোর বাড়ির লোকেদের সাথে আর থাকার আমার আর কোনো ইচ্ছা নেই।ভেবেছিলাম আমি স্বাধীনচেতা তুই ও তাই,সেজন্য আমাদের বন্ডিংটা ভালো হবে বাট ….
এক সপ্তাহ পর,অভি আর তনুর চ্যাট…..
-আজ টিকিট করে ফেললাম।ভাবলে কেমন লাগছে জানিস!
-কি
-এর পর বাড়িতে গেলে গুড্ডিটাকে আর দেখতে পাবো না।ও ই তো আমাদের বাড়িটা কে জম জমাট করে রাখে।সারাদিন বক বক,হাসাহাসি,ওর বোকা বোকা কথা,সবাইকে ঠাকুমার মতো শাসন করা।সব সব খুব মিস করবো
-হম
-আজ তোকে একটা কথা বলবো,তোর এখন সময় আছে?
-হ্যা
-বেশ কদিন ধরেই মাথায় কি সব ভাবনা আসছে
-কি ভাবনা
-আজকাল কেন জানি খুব মিস করি
-কি
-তোকে
-আমাকে?
-হ্যা রে।না না ,তুই খারাপ ভাবিস না।আসলে সারাটা দিন যখনই ঘরে থাকি,কেন জানি মনে হয় তুই যদি ঘরে থাকতি, তোকে যদি দেখতে পেতাম।কি করে জানি না রে,এসব অনেক বেড়ে গেছে
-কী একটা দরকারি কথা বলবে বললে
-উফ্! তোকে যে কিড বলি কেন বুঝেছিস তো?
-কি
-এটা কি দরকারি কথা না?
-ও!
-সারাজীবন থাকতে পারবি আমার সাথে?এটা অবশ্য আমার ফিলিংস,তোর ফিলিংসটাও জানতে চাই।
বেশ কিছুক্ষণ তনু মেসেজ দেয় নি বলে,অভি আবার লিখলো….
-তুই ভালো করে ভেবে জানাস
-আমি বিয়ে করবো না
-বিয়ে করবি না,না আমাকে বিয়ে করবি না
-আমি কাউকেই বিয়ে করবো না।তোমাকেও না
-দ্যাখ এটা খুব সিরিয়াস ম্যাটার
-আমি মজা করছি না।তুমি এসব আর বলো না
অভি কিছুক্ষণ মেসেজ দিলো না।তনু অফ হবে ভাবছিলোই,ঠিক তখন আবার অভির মেসেজ এলো…..
-সরি,মেসেজ দিতে দেরি হলো,একটু ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।আমার মনে তোর প্রতি যে ফিলিংস আছে সেটা তোকে বললাম।এটা কখনোই নয় যে সব সময় দুপক্ষেরই একই ফিলিংস হবে।আর তুই তোর মত জানিয়ে দিয়েছিস, ব্যাস মিটে গেছে।তবে এটা ভেবে কিন্তু তুই আমাদের এই সুন্দর সম্পর্কটা নষ্ট করিস না
-হম
-মাথায় ঠিক করে ঢুকলো তো ?
-হম
কিছুক্ষণের মধ্যেই অভির কাছে একটা ছবি এলো।ডাউনলোড করে দেখলো ননস্টিকের চারটে আইটেমের একটা সেট।তনুর মেসেজ এলো…..
-গুড্ডি রান্না করতে খুব ভালোবাসে তো,তাই ওর জন্য এটা মা কিনলো
-খুব ভালো হয়েছে।গুড্ডি পোলাও টা যা বানায় না রে….উফ্ ফাটাফাটি
-তোমায় একটা কথা বলবো?
-বল
-তুমি হায়দ্রাবাদ থেকে ওঁদের দুজনের জন্য,খুব ছোট্ট হলেও কিছু এনো
-এই রে! আমি কি বুঝবো,ওঁদের কি ভালো লাগবে!একটা কাজ করি
-কি?
-কাল বিকালে দোকানে গিয়ে দেখি কিছু পছন্দ হয় নাকি,যদি কিছু বুঝতে না পারি,তোকে ভিডিও কল করবো? তাহলে তুই একটু দেখে বলে দিবি?
-ভিডিও করা যাবে না
-আরে বাবা তুই ক্যামেরার সামনে না থাকলেই তো হলো!তুই ক্যামেরাটা কোনো দেওয়ালের দিকে কিংবা কোনো জিনিসের দিকে দিয়ে রাখিস।আমি তোকে না দেখলেই তো হলো।আমি দেখাবো তুই শুধু দেখিস
-আচ্ছা
-পুরো হ্যাজাক
-হ্যাজাক?
-তুই!যাঁরা কম বোঝে তাদের টিউবলাইট বলে আর তুই তো……হ্যাজাকে যেমন পাম্প দিতে দিতে জ্বলে তুই ও তেমন
-অফ হচ্ছি
-আচ্ছা,চল আমারও ঘুম পেয়েছে
সকালে অভি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে, ফোন খুলে ওয়াটসঅ্যাপে দ্যাখে তনুর বড় মেসেজ…..
“ভেবেছিলাম তোমায় সব বলবো কিন্তু তুমি অন্য প্রসঙ্গে কথা বললে তাই আর তখন বলিনি।এখন তুমি হয়তো শুয়ে পড়েছো,একটা খুব খারাপ খবর আছে।পর্ণা আর বনিদার মধ্যে খুব ঝামেলা হয়েছে।ওদের সম্পর্কটা ভেঙে গেছে।শুনলাম,বনিদার বাবা মা পর্ণার কথা জানতেন না।ওনারা পর্নাদের বাড়িতে এসে খুব ঝামেলা করেন।পর্ণাও খুব নাকি লড়েছে ওদের সাথে।এখন পর্ণা মুম্বাইয়ে অফিসের কাছে একটা বাড়িতে পেয়িংগেস্ট থাকে।বনিদা নাকি অফিসের ছুটি নিয়ে এখন কলকাতায়,বাবা মার সাথে এসেছে,পাত্রী দেখতে।ভাবতে পারো? কাকিমারা সামনের সপ্তাহে মুম্বাই যাচ্ছে।শুনলাম বনি দা নাকি খুব ননভেজ ছিল।খুব মানে খুব।জানি না পর্ণা কেমন আছে,মানে ওর মানসিক অবস্থা এখন কেমন।কাকিমা খুব কান্নাকাটি করছে।বাড়িতে সবার খুব মন খারাপ।
তুমি আজ যে কথাটা জিজ্ঞেস করলে, আর কখনো জিজ্ঞেস করো না, কারণ আমি বিয়ে করবো না।সবার অনেক ভালোবাসা দেখলাম।ভালোবাসা,বিয়ে এসবে অনেক কষ্ট।কাকিমা এত কাঁদছে যে, দেখে ভয় লাগে,মনে হয় আমার মা এরকম কষ্ট পেলে,মা মরেই যাবে। তোমাকে সেই বাতাসির কথা বলেছিলাম,বাতাসি গরীব ঘরের হয়ে,ভালোবেসে বিয়ে করতে গিয়ে ওর কি পরিণতি হলো,পর্ণা পয়সা ওয়ালা ঘরের মর্ডান মেয়ে ,সেও ভালোবেসেছিল,কিন্তু…..”
অভি তনুর মেসেজ পড়ে,শুধু এটুকুই লেখে”এটা নিয়ে তোর সাথে পরে কখনো কথা বলবো”।কিন্তু সেই কথা আর দুজনের মধ্যে কখনো হয় নি।
কলকাতায়,গুড্ডির বিয়ের দিন~~
গতকাল দুপুরে অভি কলকাতায় চলে আসে।যেহেতু এতদিন অভি বোনের বিয়ের জন্য কিছু করতে পারে নি, তাই ঘরে ঢোকার পর থেকেই সে কাজে লেগে যায়। বলা যেতে পারে এখন অভি সর্বঘটের কাঁঠালি কলা।সবেতেই সবার যেন অভিকেই দরকার।অবশ্য এটাই স্বাভাবিক,অভির ছোট বোনের বিয়ে বলে কথা।
সারা বাড়িতে হৈ চৈ,গুড্ডির সাথে সারাদিন রাত তনুর থাকার কথা,তার সাথে থাকবে গুড্ডির আরো কয়েকজন বোন।অভির সাথে তনুর একবারই দেখা হয়েছে,কথা কিছু হয় নি,শুধু দুজনের মুখে ছিল এক অদ্ভুত তৃপ্তির হাসি।বিকালে যখন গুড্ডি পার্লারে সাজতে যাবে তখন তনুর ও বাড়িতে যাওয়ার কথা।তারপর সেজে গুঁজে মাকে নিয়ে তনুর, বিয়ে বাড়িতে আসার কথা।গুড্ডির বিয়ের লগ্ন ছিল রাত আটটা পঞ্চাশে।
যেরকমটা ভাবা হয়েছিল।সেরকম ভাবেই সব সম্পন্ন হলো।তনুর মা সাড়ে ন’টার ব্যাচে বসে,খেয়ে,গুড্ডির বাবার যে কলিগ তনুদের পাড়ায় থাকেন,তাঁদের পরিবারের সাথে বাড়ি ফিরে যান।তনুর পরের দিন সকালে বাড়ি ফেরার কথা।বিয়ের সব খুব সুষ্ঠ ভাবেই হয়েছে,খাওয়া দাওয়া,আতিথেয়তা সব কিছুই খুব ভালো হয়েছে।গুড্ডি আর অর্চিতের জুটিটাও বেশ মানিয়েছে।তখন রাত প্রায় দেড়টা।নতুন বর বউকে ঘিরে বন্ধু বান্ধব,বোন ভাই রা সবাই হাসি ঠাট্টা,গল্প করছে।অবশ্য অভি ছিল না।বিয়ে বাড়ির বিভিন্ন কাজে সে তখনও ব্যস্ত।যখন প্রায় পৌনে দুটো বাজে,তখন গানের লড়াইটা বেশ জমে উঠেছে, গুড্ডির মাসতুতো বোন এসে গুড্ডিকে বলে যে গুড্ডিকে অভি ডাকছে।গুড্ডি তখন নতুন বউয়ের সাজে গয়না,মাথায় একঢাল সিঁদুর,লাল হলুদ শাড়ির সাজে,কি সুন্দর এক নবাগতা কনে।বেশ কিছুক্ষণ পর গুড্ডি ফিরে এসে তনুকে কাছে ডেকে বলে তাঁর দাদা তনুকে ডাকছে।তনু যেতে একটু ইতস্তত হওয়ায়,গুড্ডি বলে,তাঁর দাদার অসহ্য পায়ে ব্যাথা করছে, তাই উপরে আসতে পারছে না।তনু যেন নীচে যায়।বিয়ে বাড়িতে, বাড়ির অনেক লোকই আছে,তবে বড়রা সবাই ঘুমে কাতর।
তনু একটা হালকা হলুদ শাড়ি পরেছিল।শাড়ির কুঁচিটা দু হাতে একটু তুলে আস্তে আস্তে নীচে নেমে দ্যাখে অভি,চার পাঁচটা চেয়ার জড়ো করে,তার ওপর শুয়ে আছে।তনু অভির কাছাকাছি পৌঁছালে,অভি দেখে উঠে বসে।অভিকে দেখেই খুব ক্লান্ত লাগছিল।অভি একটা চেয়ার দেখিয়ে তনুকে ইশারা করে বসতে বলল।তনু বসার পরে অভি এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তনুর দিকে চেয়ে থাকলো,মুখে ছিল এক বিষাদের হাসি…..
-পায়ে অসহ্য ব্যাথা করছে রে,তাই উপরে যেতে পারলাম না
তনু মুখে কিছু না বলে অভির দিকে একটা চেয়ার বাড়িয়ে দিয়ে,ইশারা করে তার ওপর পা দুটো তুলে বসতে বলে।অভি পা তুলে বসে…..
-তোকে খুব সুন্দর লাগছে।আজকাল আগের মতো মেসেজ দিস না কেন?
-দি তো!
–দিস,তবে কোথায় যেন তোর একটা বাধা থাকে।তোকে বিয়ে করার ইচ্ছাটা তোকে বলে কি খুব ভুল করলাম রে,যার জন্য তুই এরকম করছিস?
-তাই বলেছি নাকি?
-পরশু চলে যাচ্ছি,আর এখন কোনো ছুটি পাবো না।সামনা সামনি তোকে কিছু উত্তর দেওয়ার ছিল।তুই একদিন আমায় ভালোবাসা আর বিয়ের উদাহরণে পর্ণা আর বাতাসির কথা বলেছিলি।সেই কথার উত্তর তোকে আমার দেওয়া হয় নি।আসলে এসব কথা মেসেজে হয় না।আমি তোর একটা সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছিলাম,তুই তার স্পষ্ট উত্তর দিয়েছিলি,তাই সে প্রশ্ন আমি তোকে আর কখনো করবো না।
আগে বাতাসির কথা বলি।বাতাসিদের অবস্থা তুই বেশ খারাপ বলেছিলি।বাতাসিদের দুজনের মধ্যে ভালোবাসার গভীরতাটা কতটা ছিল তা কি তুই জানিস?যদি সত্যিই সেই ভালবাসা দু পক্ষের তরফ থেকে হতো,তাহলে কি ছেলেটা বাতাসির জন্য বাড়ির লোকেদের সাথে লড়াই করতো না?আর তোকে তো সেদিনই বললাম,আমার তো মনে হয় বাতাসির বিয়ে না হওয়ায় ও বেঁচে গেছে,নয়তো সারাজীবন ওকে আরো বেশি কষ্ট পেতে হতো।
পর্ণার কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগলো,কিন্তু কি জানিস তো,এই ঘটনাটার জন্য তুই শুধু বনির বা বনির বাড়ির লোকেদের দোষ দিতে পারিস না।একটা ঘটনা যখন ঘটে তখন তার পিছনে অনেক কারণ থাকে।কি জানি,আমার তো মনে হয় না পর্ণাদের লিভ টুগেদারে থাকার কোনো দরকার ছিল!এই যে লিভ টুগেদার,এটার আসল মানে কি,সেটা সবাই বোঝে কতটা সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।বিদেশে লিভ টুগেদার সমাজের একটা কমন ব্যাপার।তার সাথে আমরা তুলনা করে যদি ভাবি যে, এটা আমাদের দেশেও একই ভাবে মর্ডান মানসিকতায় সমাজের একটা সাধারণ ব্যাপার,তাহলে ভুল হবে।বিদেশে পুরুষ নারীর গালে গাল ঠেকানো আর কিস করাটা কোনো ব্যাপারই নয়।কিন্তু আমাদের? একজন প্রেমী হয়তো কত কত মাসের পরিকল্পনার পর ,কোনো খালি জায়গায়,সুযোগের সদ্ব্যবহার করে একবার কিস করে মনে করে এভারেস্ট জয় করেছে।বিদেশে কেউ কিস করলে অপরের ঠোঁটটা থাকে তাঁর লক্ষ্য,আর আমাদের এখানে কেউ কাউকে কিস করলে, আসে পাশে কেউ আছে নাকি,সেটা দেখা থাকে তাঁর লক্ষ্য।সুতরাং এসব ব্যাপারে সংস্কৃতিতে তফাৎ তো গোড়া থেকেই আছে।ওখানে যেহেতু লিভ টুগেদারে অনেকেই থাকে তাই ভবিষ্যতে লিভ টুগেদারের পর আলাদা থাকা দুজন নারী পুরুষ আবার নতুন সম্পর্কে লিভ টুগেদারে থাকতে পারে। সেখানে আমাদের দেশে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ঘরে, এক লাফে লিভ টুগেদার করাটা খুব সহজে মেনে নেওয়াটা খুব শক্ত।হয়তো আরো বহু বছর পর এটাও আমাদের দেশে আরো বেশি সচল হবে।বিশেষ করে কেউ যদি এভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, তাঁর বাড়ির লোকের আর সমাজকে ফেস করার দৃঢ় মানসিকতা রাখা উচিত। কি রে,মাথাটা তো তোল! ঘাড় ব্যাথা হয়ে যাবে যে।ননভেজ কথা না বললে যে তোকে বোঝানো যাবে না।আর এই সবের মূলই তো হলো ননভেজ
-বলো আমি শুনেছি
-তোর কি মনে হয়!বনি লিভ টুগেদারের প্রস্তাব কেন দিয়েছিল?আর দিলোই যখন,তখন বাড়িতে কেন জানালো না?
-ওরা মর্ডান,তাই ওদের কাছে এটাই ঠিক মনে হয়েছিল
-এটা মর্ডান আর সেকেলের শুধু ব্যাপার না রে।এটা হচ্ছে দুজনের মানসিকতার মিল।যেমন ধর তুই আর পর্ণা, তোরা স্বভাবগত একদম আলাদা।বনি যেই মানসিকতার ছেলে তার পর্ণার এই মর্ডান লুক,মর্ডান মানসিকতাটা ভালো লেগেছিল।ওর কিন্তু তোকে দেখলে ন্যাকা মনে হতো।এরকম গোল্লা গোল্লা চোখে তাকাচ্ছিস কেন? কথাটা সত্যি বললাম।ওঁদের কাছে,সেক্স,মানে তোর ভাষায় ননভেজ এর ছবি দেখা,মুভি দেখা,একে অপরকে ছোঁয়া,সেক্স চ্যাট করা নরমাল ব্যাপার।শুধু নরমাল ব্যাপার তা নয়,এসব ওদের আনন্দ দেয়।এসব ব্যাপার আমার কাছেও নরমাল কিন্তু আমি তোর এই লজ্জা পাওয়া,নিজেকে গুটিয়ে রাখা,সংকোচে কথা বলা,দূর থেকেও কেয়ার নেওয়া এগুলোই বেশি পছন্দ করি।তাই আমার কাছে এটা ন্যাকামো নয়,এটাতেই আমি ফিদা।সত্যি বলতে কি অনেকের কাছেই তোর এই বয়সে এতটা নম্র হওয়া,এতটা ভেজ হওয়া একটু অস্বাভাবিক লাগবে।কারণ আমরা এখন সবাই এডাল্ট,তাই এসবও স্বাভাবিক।কিন্তু আমার মনে হয় তোর যেহেতু বাবা নেই,ঘরে দাদা কিংবা ভাই নেই,তাই পুরুষদের কাছে এসব কথা বলা কিংবা করাটা
হয়তো তোর কমফোর্ট জোন নয়।যাদের ভালোবাসায় অতটা ডেপথ নেই,শুধু ভালোবাসা নিয়ে বেশি শো করা স্বভাব,তাঁদের কাছে তুই ন্যাকা আর যাঁদের মধ্যে ভালোবাসায় খুব ডেপথ আছে,যাঁদের কাছে শরীরটাই প্রধান নয়,তাঁরা সবাই আমার মতো তোর ফিদায় পাগল হবে
-পর্ণার কথা বলতে গিয়ে বার বার আমার কথা আসছে কেন?
-কারণ তোকে দিয়ে লিভ টুগেদার সম্বন্ধে বোঝানোটা সহজ হচ্ছে।
পর্ণা অনেক কিছু ভুল করেছে।প্রথমত ওঁদের ভালোবাসা যদি সত্যিই খাঁটি হতো তাহলে মুম্বাইতে দুজনে আলাদা আলাদা থেকে,রোজ দুজন দুজনের সাথে দেখা করে,কয়েক মাস কিংবা এক বছর কাটিয়ে তারপর নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করতে পারতো।সরি টু সে,বনি খুব সেক্সী জানি,মানে তোর কাছে শুনে যে টুকু মনে হয়েছে।কিন্তু শরীরের খুদা পর্ণার ও ছিল।নয়তো ভাব, ওঁদের এত কি তাড়া ছিল এক ঘরে থাকা?পর্ণা এত বড় পদক্ষেপ নেওয়ার আগে বনি বাড়িতে জানিয়েছে নাকি একবার ও জন্য না?
লিভ টুগেদারের কিছু ভালো দিকও আছে।দুজন ভিন্ন মানুষ নিজেদের একাকিত্বের জন্য কিংবা একজন আরেকজনের পাশে সব সময় থাকার জন্য লিভ টুগেদার থাকতেই পারে।আবার এটায় এও ভালো যে বনিবনা না হলে খুব সহজেই আলাদা হয়ে যেতে পারে।কত স্ত্রীরা এই বিয়ের বন্ধন থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না,আবার কত স্বামী মানসিক চাপে থাকা সত্ত্বেও ভদ্রতার খাতিরে বিয়ের বন্ধন থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না।তাঁদের দিক থেকে বিচার করলে,এটাই ঠিক।অনেক বিবাহিত স্ত্রী আর স্বামী তাঁদের স্বামী আর স্ত্রীকে শুধু নিজের সম্পত্তি মনে করেন,তাঁদের কাছেও সম্পর্কের এই নামটা,মানে স্ত্রী,স্বামী শব্দটা না থাকাটাই ভালো তাহলে তাঁরা অন্তত নিজের সম্পত্তি ভাববেন না।
জানিস তো,আমার কি মনে হয়?
-কি?
-মনে হয় এই লিভ টুগেদার সব থেকে প্রযোজ্য বয়স্কদের জন্য।বৃদ্ধ বয়সটা এতটাই একাকীত্ব জীবন যে সেই সময় তাঁদের যদি একজন পছন্দ মতো জীবনসাথী সাথে থাকে তাহলে মনের মধ্যে অসহায়তাটা থাকে না।সারাজীবন ছেলে মেয়ের জন্য করে যখন ছেলে মেয়েরা তাঁদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত ঠিক তখন যদি কোন বৃদ্ধ ব্যক্তি এবং বৃদ্ধা লিভ টুগেদারে থাকেন,তাহলে শেষ বয়সেও তাঁরা বাঁচার মতো বাঁচতে পারেন।এই বয়সে তো তাদের শারীরিক চাহিদা থাকবে না।হয়তো আবেগে একটু জড়িয়ে ধরবে কিংবা তার বেশি হলে না হয় কিস করবে ফোকলা দাঁতে
-কি যা তা বলছো?
-আরে মজা করছি না,সত্যি বলছি।আরে ভালোবাসায় গভীরতা থাকলে একই বাড়িতে থেকেও দুজন দুজনের থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারে।যেমন পর্ণা,পর্ণা কিন্তু তোর থেকে অনেক বেশি একট্র্যাকটিভ।ওঁদের ভালোবাসায় গভীরতা ছিল না।কিন্তু তুই এত স্নিগ্ধ,সুন্দর,আসলে তোর সরলতা তোর চোখে মুখে ফুটে ওঠে,তোর মধ্যে যে কোনো সম্পর্কের অনেক বেশি গভীরতা আছে
-ভোর হয়ে এলো তো
-কটা বাজে?
-তিনটে সাতান্ন
-যাঃ বাবা! চারটে বাজে! যাক ঠিক আছে,অনেক জ্ঞান দিলাম তোকে,এবার তুই ওপরে যা………………আসলে তোকে এত কথা বোঝানোর কারণটা হলো,আমি চাই তুই আবার আগের মতো একদম নির্ভেজাল কিড হয়ে যা।তোকে সেদিন ওই কথাটা বলেছিলাম, বলার পর থেকে ,তুই যেন একটু বেশিই বড় হয়ে গেছিস।কলকাতায় থাকতে কখনো তোর প্রতি এরকম ফিলিংস হয় নি রে।এখন এত দূরে থেকে কি জানি কেন,তোকে একটু বেশি মিস করি।চল! তুই এবার উপরে যা, আমিও এবার কাজে লাগবো।তোর কিছু বলার আছে?
-পা ব্যাথাটা একটু কমেছে?
-ডাক্তারিও জানিস দেখছি। কমেছে
-আমি উপরে যাচ্ছি,একটা কথা বলার ছিল
অভি যেন এই কথাটার অপেক্ষায় ছিল,অসহায়ের মতো মুখ করে বলল…..
-হ্যা বল!
-তুমি খুব ভালো বোঝাতে পরো,তুমি টিচার হলে খুব ভালো হতো
অভি মাথাটা চেয়ারের পিছনের দিকে ঝুলিয়ে দিয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে রইলো।তনু আবার শাড়িটা ধরে আস্তে আস্তে উপরে চলে গেল।
গুড্ডির বিয়ে,বৌভাত সব মিটিয়ে অভি হায়দ্রাবাদে ফিরে গেছে।এর মধ্যে পর্ণা বাড়িতে ফোন করে জানায়,তাঁর বাবা মাদের আর মুম্বাইতে যেতে হবে না।পর্ণা আর তাঁর এক কলিগ বন্ধু চন্দ্রিমা,ভালো কাজের জন্য,তাছাড়া স্মার্ট,স্পোকেন ইংলিশে খুব ভালো হওয়ায় ,দুজনে সিঙ্গাপুরের ব্রাঞ্চে স্বেচ্ছায় শিফট করবে।তনু একদিন পর্ণাকে ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করায়,পর্ণা তাঁকে বলে,বনি তার একটা কিছু দিনের দুঃস্বপ্ন ছিল।ও ওসব আর ভাবে না।এখন ওর কাছে কেরিয়ারটাই আসল।ভবিষ্যতে সিঙ্গাপুরেও যদি কারোর সাথে রিলেশানে থাকে,তখন সব দিক ভালো করে দেখে সে আবার লিভ টুগেদারে থাকবে।তাই পুরোনো কথা ভেবে তনু যেন কষ্ট না পায়।শোনা গেছে ,বনির আর চার মাস পর বিয়ে।
হায়দ্রাবাদে পৌঁছনোর চার দিন পর,অভি আর তনুর চ্যাট~~
-পর্ণার সাথে আমার কথা হয়েছে
– কি বলল?
-ও খুশিতেই আছে,সিঙ্গাপুর চলে যাবে,তার আগে কদিনের জন্য কলকাতায় আসবে
-বাহ্,এ তো দারুণ খবর
-বাতাসি জেঠুদের বাড়িতে খাওয়া পরা হিসেবে থাকছে।জেঠুদের সব দায়িত্ব ওর, আর ওর সব দায়িত্ব জেঠুদের।বাতাসিকে আমি সই করাটা শেখাবো বলেছি
-একসিলেন্ট!এই হলি তুই
-আমারও একটা ভালো খবর আছে
-কি?
-বাড়িতে কাজ করার জন্য অফিস থেকে আমাকে একটা ল্যাপটপ দিয়েছে।চার্জে দিয়েছি।দাঁড়া ছবি পাঠাচ্ছি।একটা ইচ্ছা হচ্ছিল
-কি?
-ল্যাপটপে প্রথম তুই মেসেজ পাঠা
– কি করে পাঠাবো?
-দাঁড়া আমি আগে রেডি করি
বেশ কিছুক্ষণ পর রেডি করে যখন অভি জানালো,যে এবার এই নম্বরে মেসেজ পাঠালে অভি ল্যাপটপে পড়তে পারবে।,তার কিছু মুহূর্ত পর তনুর মেসেজ এলো
“পর্ণা আর বাতাসিকে দেখে এখন আমার মন অনেক হালকা হয়েছে।তাই পুরোনো প্রশ্ন আবার জিজ্ঞেস করা যাবে”
অভি কিছু মুহূর্ত ভেবেই সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে লিখলো ” সারাজীবন থাকতে পারবি আমার সাথে?”
-আজকাল কেন জানি মনে হয় পারবো
-এখন তো আর ছুটি নেই,তাই আর এখন বাড়ি গিয়ে কিছু করতে পারবো না।তোকে অপেক্ষা করতে হবে,পারবি তো?
-হম
-যতদিন না আমাদের বিয়ে হচ্ছে,আমার সাথে লিভ টুগেদারে থাকবি?
-ছি ছি! তুমি এসব কি বলছো? তুমিও শেষে?
-দূর কিড! লিভ টুগেদার মানে হচ্ছে দুজনে একসাথে থাকা।আমার কাছে লিভ টুগেদার মানে তোর সাথে মন থেকে থাকা।এই যে এ কটা বছর তুই আর আমি ফোনের মাধ্যমে এভাবে আছি,এটাও লিভ টুগেদার রে।এত দূর থেকেও তুই আমার জন্মদিন যেভাবে পালন করিস,আমরা দুজন দুজনকে যে ভাবে আমাদের সব কিছু শেয়ার করি তা লিভ টুগেদার নয়?তুই আমাকে যেভাবে দূর থেকে কেয়ার করিস,আমি তোকে সামলাই সেগুলো কি? আরে এ হলো ভেজ লিভ টুগেদার।এবার বল,থাকবি?
-জানি না
-কিন্তু আমি জেনে গেছি
তনু অভিকে একটা ক্যাডবেড়ির ছবি পাঠালো
-এটা কি?
-নতুন কিছু শুরু করলে মিষ্টি মুখ করতে হয়
-চল দুজনে মুখে দিয়ে, এভাবেই ক’মাস কাটিয়ে দি দুজনে লিভ টুগেদারে…