আল-মিকদাম-বি-মাদিকারিব বর্ণনা করেছেন, একদা রসুলুল্লাহ বলেন-শহীদেরা আল্লাহ’র কাছ থকে ছয়টি ভাল জিনিশ লাভ করেঃ
“(১) প্রথম ফোটা রক্ত ঝরতেই তার সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যায়,
(২) তাকে তখনি বেহেস্ত দেখানো হয়
(৩) তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করা হয়
(৪) তাকে ভয়ংকর ত্রাস থেকে রক্ষা করা হয়
(৫) তার মাথায় দামী মুকুট পরানো হয় যার মাঝে খচিত থাকে রুবী যার মূল্য এই পৃথিবীর চেয়েও বেশী মূল্যবান এবং
(৬) তাকে বিবাহ দেওয়া হয় ৭২টি সুন্দরী হুরের সঙ্গে যাদের ডাগর ডাগর কালো চোখ থাকে এবং তার সত্তুরজন আত্মীয়কে বেহেস্তে স্থান দেওয়া হয়।’’
উপরের সহি হাদিসগুলো পড়ে এটা বুঝতে কষ্ট হয় না যে ইসলামে জিহাদকে আল্লাহর নামে ধর্মযুদ্ধের কথাই বলা হয়েছে।
(ঘ) এখন দেখা যাক ইসলামের ইতিহাস এবং ইসলামী চিন্তাবিদগণ জিহাদ সম্বন্ধে কি বলেনঃ
বিশ্বের বিখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদগনের দ্বারা জিহাদের আলোকে শত শত বই লেখা হয়েছে আজ পর্যন্ত। ইসলামিক চিন্তাবিদগণ যে জিহাদকে সর্বদা ইসলামের জন্য ধর্মযুদ্ধকেই (কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ) বুঝিয়েছে তার কিছু প্রমাণ আমি এখন পাঠকদের সামনে তুলে ধরব।
ডঃ মুহাম্মদ সা’য়েদ রমাদান আল-বুতি তার বইতে (জুরিস্প্রডেন্স্ ইন মুহাম্মদ বায়োগ্রাফী; পৃষ্ঠা ১৩৪, ৭ম পাবলিকেশন) লিখেছেন –
‘‘হলি ওয়ার অর্থাৎ ইসলামিক জিহাদ হলো একটি আক্রমণাত্মক যুদ্ধ। এই ধর্মযুদ্ধ বা জিহাদ হলো সর্বকালের সকল মুসলমানের পবিত্র কর্তব্য বা ডিউটি; যখনি তাদের হাতে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা থাকবে, তখনি মুসলিমগণ ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হবে। আল্লাহর রসুলও তাই বলেছেন – ‘‘আল্লাহ আমাকে হুকুম করেছেন কাফের দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যতক্ষণ না তারা আল্লাহ র উপরে বিশ্বাস রাখবে’’।
আল আজহার বিশ্ববিদ্ব্যালয়ের বিখ্যাত পণ্ডিত ডঃ বুতি তার বইতে (পৃষ্ঠা ২৬৩) আরও বলেন-আল্লাহর রসুল তার সেনাদলকে ভাগে ভাগে বিভিন্ন আরব উপজাতিদেরকে ইসলামের দাওয়াত পাঠাতেন যাতে লেখা থাকত,
‘‘পবিত্র ইসলামের আমন্ত্রণ গ্রহণ কর; অথবা যুদ্ধকর এবং মৃত্যুবরণ কর।’’
এটা ঘটেছিল ৭ম হিজরী সালে এবং এই সেনাদলের মোট ভাগ ছিল দশটি।
অন্য এক জায়গাতে ডঃ আল-বুতি তার বইতে বলেন –
‘‘ইসলামে জিহাদের অর্থ শুধুই আত্মরক্ষার যুদ্ধ নয়; জিহাদ আত্মরক্ষা এবং আক্রমণাত্মক দুই বুঝায়। এই জিহাদের আসল উদ্দেশ্য হলো সারা দুনিয়ার বুকে আল্লাহর পবিত্র ধর্ম ইসলামকে কায়েম করা এবং দুনিয়াতে ইসলামী সরকার গঠন করা। জিহাদে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের পবিত্র কর্তব্য।’’
বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত বাদাওয়ী তার লেখা বইতে (দি লাইট অব রিভিলেশন; পৃষ্ঠা ২৫২) বলেছেন-
‘‘খৃষ্টান এবং ইহুদীদের সঙ্গে যুদ্ধ করা ফরজ কারণ তারা উভয়ে তাদের আদি ধর্ম ত্যাগ করেছে এবং তারা ইসলামে বিশ্বাসী নয়। ইসলাম এসে পুর্বের সকল ধর্মকে নিষিদ্ধ করেছে। সুতরাং মুসলিমদেরকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ না তারা রাজী হয় ইসলাম গ্রহণ করতে নতুবা জিজিয়া কর দিতে বাধ্য থাকে বিনয়ের সাথে।”
ইবনে হাসিম-আল সোহেইলি তার লেখা বিখ্যাত বইতে (আল-রাউদ আল আনাফ; পৃষ্ঠা ৫০-৫১) বলেছেন –
‘‘আরব পেনিনসুলাতে কোন দুইটি ধর্ম একসাথে থাকতে পারে না।’’
আর সেইজন্য আজ সৌদি আরবে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম নেই। মোদ্দাকথা হল আজ সৌদি আরবে অন্য আর কোন ধর্মীয় কাজ পালন করতে দেওয়া হয় না। এদিকে মোল্লারা দাবী করে থাকে ‘‘ইসলামে সহনশীলতা (tolerance) অনেক’’! এর চেয়ে ডাহা মিথ্যা কথা আর কি হতে পারে!
মিশরের বিখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ সায়ীদ-কুতুব তার বইতে বলেছেন – ‘‘জিহাদের চারটি স্তর আছে এবং সেইগুলো নিম্নরূপ:
১) ইসলামের প্রথম স্তরে যখন মুসলিমরা মক্কাতে ছিল তখন আল্লাহ তাদেরকে যুদ্ধ করতে হুকুম দেন নাই।
২) তারপর আল্লাহ মুসলিমদের হুকুম করেন অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে।
৩) তারপর আল্লাহ মুসলিমদের হুকুম দেন আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে।
৪) তারপর আল্লাহ মুসলিমদের হুকুম দেন সকল বিধর্মী-পৌত্তলিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে।
সায়ীদ কুতুবের মতে এই উপরের চারটি স্তর একটি অন্যটি দ্বারা প্রতিস্থাপিত (রিপ্লেস্ড); অর্থাৎ চার নং স্তরটি শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
তাঁর এই মতামতকে ন্যায্যতা দান করার জন্য তিনি নিচের কোরানের আয়াতগুলো উল্লেখ করেন।
কোরান ৪:৭৪-৩২:
যেসব বিশ্বাসীরা তাদের জীবনকে বিক্রি করেছে আল্লাহর কাছে পরকালের বিনিময়ে তারা অনবরত যুদ্ধ করবে আল্লাহর পথে; যারা মৃত্যুবরণ করবে তারা অবশ্যই আল্লাহর কাছ থেকে মহা পুরস্কার পাবে।
কোরান ৮:৩৮-৪০:
মুসলিমগণ যুদ্ধ কর যতক্ষণ কোন নির্যাতন না থাকে পৃথিবীতে এবং একমাত্র ধর্ম থাকবে শুধু ইসলাম বা আল্লাহ’র ধর্ম।
কোরান ৯:২৯-৩২:
যুদ্ধ কর আহলে কিতাব (ইহুদী এবং খৃষ্টান)দের সঙ্গেও যারা আল্লাহ কে বিশ্বাস করেনা এবং আল্লাহর অপছন্দের কাজ করে। তারা যতক্ষণ না পরাজিত হয় এবং বিনয়ের সাথে জিজিয়া কর (অমুসলিমদের উপর ট্যাক্স) দিতে রাজী হয় ততক্ষণ যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
যে সকল ইসলামি চিন্তাবিদগণ জিহাদকে মনে করেন শুধু আত্মরক্ষার যুদ্ধ তাঁদের বিরুদ্ধে সায়ীদ কুতুব বলেন –
‘‘তারা ইসলামের ধরন এবং কর্তব্য সম্বন্ধে কোন জ্ঞান রাখে না এবং মানুষের মুক্তির জন্য ইসলামের মহৎ কর্তব্য কি তাও জানে না। মুসলিমরা যেখানেই বাস করবে তাদের পবিত্র কর্তব্য হয়ে যায় সেখানের রাজনীতিতে জড়িয়ে যাওয়া যাহাতে মুসলিমরা সে দেশের শাসন ক্ষমতা হাতে নিতে পারে যাহাতে তারা আল্লাহ’র ধর্মে ক সেখানে স্থাপন করতে সক্ষম হয়।’’
0 পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
23 জানুয়ারি উত্তর প্রদান করেছেন রাজু আহমেদ (487 পয়েন্ট)
জিহাদ (আরবি: جهاد), যার অর্থ সংগ্রাম; কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লাভের জন্য সমগ্র শক্তি নিয়োগ করাকে বোঝানো হয়। তবে সচরাচর ইসলামী পারিভাষিক অর্থে ‘জিহাদ’ কথাটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কুরআনে জিহাদের কথা ৪১ বার উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে “আল্লাহের পথে সংগ্রাম করা” অর্থে ‘জিহাদ‘ কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে। জিহাদের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে মুজাহিদ বলা হয়। জিহাদকে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসাবে গণ্য করা হয়।
প্রাচ্য বিশেষজ্ঞ বার্নার্ড লুইসের মতে কুরআন ও হাদিসের অধিকাংশ জায়গাতেই জিহাদ শব্দটি ধর্মযুদ্ধ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
কোরানের আয়াত।
সহি বুখারি
নবীজি নিজেই জেহাদের জন্য স্বর্গ থেকে বারবার পৃথিবীতে এসে জেহাদে শহীদ হতে চেয়েছেন। আর কাকে দোষ দেবেন বলেন।
আপনারা যারা হাদিসের, কোরানের আগের আয়াত পরের আয়াত, কিংবা এই বক্তব্যের অন্যান্য তাৎপর্য আছে বলে মনে করেন। তারা দয়া করে নিজেরা আগে পড়েন এর আগের আয়াত, পরের আয়াত। কিংবা আগের আর পরের আগের আর পরের করতে করতে কভার টু কভার পড়ে ফেলেন। তারপর হাদিস পড়েন সব খণ্ড। তারপর সিরাত রাসুলুল্লাহ পড়েন। তাবিরি পড়েন। এরপর ইসলামিক ইতিহাস পড়েন। প্রাক ইসলামিক ইতিহাস পড়েন। ইসলামিক জিও-পলিটিক্স পড়েন। তারপর জঙ্গিদেরকে বোঝান। আমার এসব পড়া আছে। আমরাতো মানুষ মারবো না। জঙ্গিরা মারবে। আমাকে না বুঝিয়ে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা জঙ্গিদের কাছে সঠিক করে দেন। আরো ভালো হয়- মক্কায় গিয়ে ওয়াহাবি হুজুরদেরকে বোঝাতে পারলে, বা আরবি ভাষায় দেশে বেড়ে ওঠা আরব জঙ্গিদের কে বুঝিয়ে বলেন কোরানের হাদিসের এই লাইনের এই ব্যাখ্যা, এটা এখানে প্রযোজ্য ওখানে নয়।
এরা কেন এমন করে এইসব আয়াত না পড়লে জানবেন কীভাবে।
কোরানের জিহাদি আয়াতগুলি এই লিঙ্ক থেকে একবার দেখে নিতে অনুরোধ করছি।
http://www.answering-islam.org/Quran/Themes/jihad_passages.html
আমার কাছে মনে হয় না এই বাংলাদেশে ইসলামাইজেশনের বিষয়ে আমি কিছু বাদ দিয়ে গিয়েছি, চেষ্টা করেছি সবই অল্প অল্প করে ছুঁয়ে যেতে। তবুও অনেক কিছু বাদ পড়তে পারে। তথ্যে ভুল থাকতে পারে। সেটা আমার অনভিপ্রেত। তবে যে পরিমাণ তথ্য আমি ঘেঁটেছি তার ৫ শতাংশও আমি তুলে ধরতে পারিনি। তবুও অনেকের লেখা হুবহু কপি করে দিয়েছি। পত্রিকার প্রতিবেদন, বা কোনও তথ্য সূত্র হুবহু যা ছিলো তাই দিয়ে দিয়েছি। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে- এইটুকু একজন পাঠকের জানা দরকার, যদি সে বাংলাদেশে ইসলামাইজেশনের ধাপগুলো জানতে চায়। আমি ক্ষমা চাচ্ছি সেইসব লেখকের কাছে যাদের তথ্যের কার্টেসি আমি দিতে পারিনি। আসলে এত ডাটা নিয়ে বসেছিলাম, যে কার যে কী লেখা সব খেয়াল করতে পারিনি। তবে অনেকেরটা যতটুকু চোখে পড়েছে দিয়েছি। তবুও কেউ রাগ করে থাকলে কমেন্টে আপনার লেখার অংশটি তুলে নাম দিয়ে দেবেন, আমি কার্টিসি উল্লেখ করে দেবো। তবে আপনাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা, যারা এত এত কাজ করেছেন এই বিষয়ে। কারণ এটা এমন একটি বিষয় যেখানে ব্যক্তিগত মতামত দেবার তেমন কিছু থাকে না। ফ্যাক্ট এন্ড ফিগারটাই এখানে আসল। আমার অপারগতা এত বড় একটি লেখা তৈরি করার জন্য আমি কাউকে একটি ফোন করিনি। কারো কাছে কোনও তথ্য চাইনি। যা লিখেছি, যা পড়েছি, যা পেয়েছি, যা খুঁজেছি একা একা। হয়তো অনেক প্রাজ্ঞ বিজ্ঞ বন্ধুদের কাছে আরো বেটার তথ্য পেতে পারতাম। তাই এখানে যদি কিছু ভুল হয়ে থাকে সেটা আমার। আমাকে শুধরে দিলে খুশি হবো। এখানে অনেক বিষয় লিখতে গিয়ে বা তথ্য পড়ে আমার মনে হয়েছে- এর উপরে নিজের অনুভূতি লিখি। তাহলে এটা ১ লক্ষ ওয়ার্ডেও শেষ হতো না। তাই চুপ থেকেছি। পাঠকের অনুভূতির উপর ছেড়ে দিয়েছি। যারা ভাবেন দেশ ঠিকঠাক চলছে। জঙ্গি তৎপরতা নেই, বা ইসলামি দলগুলোর তেমন মুভমেন্ট নেই, সেক্যুলার লেখকদের লাইফ রিস্ক নেই- তারা বোকার স্বর্গে বাস করেন। শুনুন, যারা জঙ্গি তৎপরতা শুরু করে আশির দশকে তাদের মাথায় আছে তারা এটাকে কোথায় নিয়ে যাবে। আপনাদের কাছে এটা টিভি সিরিয়াল মনে হয়। এক পর্ব এক পর্ব করে দেখেন। কিন্তু আমার কাছে এটা সিনেমার স্ক্রিপ্ট। আমি জানি এর শুরু এর শেষ কোথায়। তাই বলছি, সচেতন হন। মানবিক হোন। নিজের ইতিহাস পরিচয় জানুন, নিজের ভাষা, শিল্প সংস্কৃতিকে জানুন। আপনি একজন ভালো মানুষ হলে, আপনার কাছে অন্যেরা নিরাপদ। যদি দেশকে ভালোবাসেন, মানুষকে ভালোবাসেন- যদি স্বর্গের লোভে লোভি না হন। তাহলে আপনাকে দিয়েই একটি সভ্য জাতির ভ্রূণ তৈরি হতে পারে। মুসলমান জঙ্গিরাতো দুনিয়ার সবাইকে মেরে বেহেস্তে যেতে ব্যস্ত। আপনি আসুন না, এই বাঙলাটাকে স্বর্গ বানাই। মানুষ যতদিন স্বাভাবিক ভাবে বাঁচে, সে সুন্দর করে বাঁচুক। একজন রবীন্দ্রনাথ মানুষ মারতে ঘোড়ায় চড়ে দৌড়াচ্ছেন- ভাবা যায়? যায় না। কারণ তিনি মানবিক। তিনি যদি কষ্ট পান, সেই কষ্ট থেকে সৃষ্টি করেন অপূর্ব একটি গান, বা একটি কবিতা। তিনি কষ্ট পেলে তার অগণিত অনুসারীদের ডেকে বলেন না- ওকে কতল কর গলা কেটে নিয়ে আসো।
এই বাংলাদেশে আশার আর কিছু নেই আমি জানি। কিন্তু তবুও আমি মানুষের উপর আশা হারাতে পারি না। আমার বারবার মনে হয়- সব ঠিক হয়ে যাবে, সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু কিছুই ঠিক হয় না।
শেষ।