১০৮৭ বার পঠিত
বিএনপিপন্থী এক বুদ্ধিজীবী ভারতের সঙ্গে মাখামাখিটা একদম পছন্দ করতে পারছেন না। আলোচনায় ভারত প্রসঙ্গটা বার বার আসে বলে পকেটে একটা মিছওয়াক রাখেন। ভারতের দুটি সমালোচনা করেই মিছওয়াক দিয়ে খস খস করে দাঁত মাজেন। তার ভয়, ভারতের সঙ্গে ঢলাঢলিতে ইসলাম ধর্মটা বিপন্ন হয়ে পড়ে কীনা। কারণ ভারতে এখন হিন্দুত্ববাদের যে দাপট।
‘ভারত’ শব্দটি বলার পর মিছওয়াক দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে তিনি বলেন,এতোদঞ্চলের প্রগতিশীলরা প্রগতিশীলতা বলতে ইসলামের সমালোচনা আর পূজো-আর্চায় অংশ নেয়াটাকে বুঝে থাকেন। রবীন্দ্র সংগীতের অনুষ্ঠানটাকেও পূজোর ঘট দিয়ে না সাজালে তাদের প্রগতিশীলতার চাকা যেন খুলে পড়ে যায়।
বুদ্ধিজীবীর স্ত্রী ধমক দেন, এক ওয়াক্ত নামাজ তো পড়োনা; আবার ইসলাম নিয়ে চিন্তায় ঘুম হয় না তোমার। তোমার দল তো আর পাওয়ারে আসবে না। পদত্যাগ করে পবিত্র সরকারি দলে যোগ দেওনা কেন!
–আমার মতো আধবুইড়ার কী দেশে অভাব আছে! পবিত্র সরকারি দল আমাকে নেবে কেন! আর সরকারি দলের বুদ্ধিজীবীরা পঞ্চাশ বছর ধরে আওয়ামী লীগের স্তবসংকীর্তন করছে। তাদের দাবি আগে। আমি তো চিহ্নিত বিএনপির বুদ্ধিজীবী; আমাকে সরকার নিতে গেলে সরকারের রসুলেরা খ্যাক খ্যাক করে উঠবে।
বুদ্ধিজীবীর স্ত্রী কিচেন কাউন্টারে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কাটছেন। বুদ্ধিজীবী জিজ্ঞেস করেন,
–পেঁয়াজ কী ভারতের না পাকিস্তানের!
–তা দিয়া তুমি কী করবা; মাটি সব একই; পেঁয়াজের ঝাঁঝও একই।
–ভারতের পেয়াজ খাইতে আমার আপত্তি আছে। আমার পাকস্থলি অতোটা নতজানু হতে পারবে না।
আবার মিছওয়াক দিয়ে খসখস করে দাঁত মাজেন তিনি। স্ত্রী ধমক দেন, একী বদ-অভ্যাস তোমার! লিভিং রুমটাকে ওয়াশরুম বানিয়ে ফেললে যে!
এমন সময় বিএনপির বুদ্ধিজীবীর শ্যালিকা তার আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবী স্বামীকে নিয়ে বেড়াতে আসে। আওয়ামী লীগ বুদ্ধিজীবীর হাতে একটা টুথব্রাশ। তিনি ‘পাকিস্তানের’ নাম উচ্চারণ করলেই টুথ ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজেন। তার ভয়, পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক থাকলে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিপন্ন হতে পারে। কারণ পাকিস্তান মানেই একাত্তরের দখলদার বাহিনী।
‘পাকিস্তান’ শব্দটি বলার পর টুথ ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে তিনি বলেন, এতোদঞ্চলের ধার্মিক ধর্ম বলতে অসাম্প্রদায়িকতার সমালোচনা আর ওয়াজ-মেহেফিলে অংশ নেয়া বুঝে থাকে। নজরুল সঙ্গীতের আসরে আগরবাতি জ্বালিয়ে মাজারের আমেজ না আনলে যেন ধর্মের চাকা খসে পড়ে যায়।
আওয়ামী লীগপন্থী বুদ্ধিজীবীর স্ত্রী ধমক দেন, তোমাদের প্রগতিশীলতাটাও একটা কট্টরপন্থা। ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের মতোই বিদ্বেষ ছড়াও তোমরা। এতো যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বুলি আউড়ালে; অন্য ধর্মের মানুষের ওপর নির্যাতন কী ঠেকাতে পেরেছো! সংখ্যালঘু নির্যাতনে তো জামায়াত-বিএনপি-আওয়ামী লীগ সমানে সমান।
–এইসব করে একাত্তরের পরাজিত শক্তি; দোষ হয় পবিত্র আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগের যা অনাসৃষ্টি-যা কিছু অকল্যাণকর; সবই করিয়াছে জামাত-বিএনপি পাকিস্তানের চর।
‘পাকিস্তান’ শব্দটি এসে যাওয়ায় খসখস করে দাঁত মাজেন তিনি। স্ত্রীর বড় বোনকে পেঁয়াজ কাটতে দেখে বলেন, পাকিস্তানের পেঁয়াজ হলে আমি খাবো না আপা। পেঁয়াজ ছাড়াও রান্না করা যায়।
‘পাকিস্তান’ শব্দটা এসে যাওয়ায় আবার তাকে টুথ ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজতে হয়।
স্ত্রীর বড় বোন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মাটিতো সব জায়গায় একই। পেঁয়াজও একি। দেশগুলোর দালালগুলোও একই রকম ক্ষতিকর।
আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীর স্ত্রী বিএনপির বুদ্ধিজীবীকে প্রশ্ন করেন, দুলাভাই আপনার এতো ভারত বিদ্বেষের কারণ কী! ভারত রাষ্ট্রের সরকার কোন নেতিবাচক কাজ করলে, কোথাও দখলদারিত্ব দেখালে তার দায় ভারতের মানুষের বা পেঁয়াজের হয় কী করে! ‘ভারত’ শব্দ উচ্চারণ করলে মিছওয়াক দিয়ে দাঁত মাজতে হয় কেন!
বিএনপির বুদ্ধিজীবী বলেন, ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রকাশ ছাড়া পদ-পদবী হাসিল করা যায় না গো! তুমি প্রশমনের মন্ত্রপাঠ বন্ধ করো। ভারতের বিরুদ্ধে ঘৃণা বিদ্বেষটাই আমাদের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ঐক্যের ঠিকানা।
বিএনপি বুদ্ধিজীবীর স্ত্রী তার ছোট বোনের স্বামী আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামো-একাত্তরের দখলদার ঘাতকদের সঙ্গে ওখানকার সাধারণ মানুষ বা পেঁয়াজের সম্পর্ক কী!
আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবী আর্তনাদ করেন, খবরদার রিকনসিলিয়েশান তত্ত্ব আওড়াবেন না! পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষটাই আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার ঐক্যের ঠিকানা!
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন