নারী মাত্রেই নারীবাদী নন। নারীবাদী মাত্রেই নারী নন। পিতৃতান্ত্রিক সমাজবাস্তবতায় নারীবাদ নারীর অন্তিম অর্জন না প্রাথমিক শর্ত সেই নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে, কিন্তু এটা খুব সত্যি, নারীবাদ পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে নারীর অন্যতম প্রতিরোধ। কিন্তু বর্তমান ধনতান্ত্রিক পুঁজিবাদী বিশ্বে নারীবাদ কি আদৌ নারীর রক্ষাকবচ হয়ে উঠতে পেরেছে? এই প্রশ্নগুলির সাথে আমরা কতটুকু পরিচিত। আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের সাথে এই প্রশ্নগুলিই বা কতটুকু সংশ্লিষ্ট? আমি বলছি আমাদের সাধারণ জনসাধারণের কথা। আমাদের দৈনন্দিন পারিবারিক জীবনচর্চার সামাজিক পরিসরে নারীবাদের প্রাসঙ্গিকতাই বা কতখানি? এবং নারী নিজে কীভাবে দেখে থাকে এই বিষয়গুলি? না বিষয়টি এতটাই ব্যাপক ও বৈচিত্র্যময় যে, এককথায় এর কোন উত্তর হয় না। কিন্তু আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের পরিসরে, আমাদের সামজিক রীতিনীতির পরতে পরতে উত্তর রয়ে গিয়েছে প্রতিটি প্রশ্নেরই। পিতৃতন্ত্রের স্বরূপ ও ইতিহাস নির্ণয়ের দিকে না গিয়েও একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, কালের নিয়মেই পিতৃতন্ত্রের প্রকরণ ও অনুষঙ্গেও বদল ঘটেছে বিস্তর। আধুনিক প্রযুক্তির বিপ্লব ও ধনতন্ত্রের একচ্ছত্র বিশ্বায়নেই ঘটেছে এই পরিবর্তন। কিন্তু এই পরিবর্তন কতোটা পিতৃতন্ত্রের অাভ্যন্তরীণ প্রকৃতিগত আর কতোটা বাইরের স্বরূপগত সেটি বিতর্কের বিষয় অবশ্যই। তবে একথা বলা যায়, আবিশ্ব বিভিন্ন দেশেই নারী সুরক্ষার বিষয়ে নতুন নতুন আইন প্রণয়ন দিনে দিনে নারীবাদীদের হাত শক্ত করে পিতৃতন্ত্রের আস্ফালনে কেবলই লাগাম পড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে। কাজের কাজ কতটুকু হচ্ছে আর হচ্ছে না সেটি পরের বিষয়। কিন্তু এই যে নারী সুরক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন আইন তৈরি হওয়া, এটি কিন্তু আবিশ্ব নারীবাদের প্রসারের সরাসরি অভিঘাত। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ও সমাজ বাস্তবতায় এই অভিঘাতের ধরন ও পরিমাণও ভিন্ন। এক দেশের সাথে আরেক দেশের এই বিষয়ে যে পার্থক্য থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নারীবাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিকগুলির বাইরেও একটি পরিসর রয়ে যায়। যেখানে অর্থনৈতিক স্বাধিকারও একটি নারীর স্বঅভিভাবকত্ব সুনিশ্চিত করতে পারে না। এই না পারার কারণগুলিই পর্যালোচনা করা সবচেয়ে বেশি জরুরী। সাধারণভাবে আর্থিক স্বনির্ভরতাই যেখানে নারীমুক্তির চাবিকাঠি, সেখানে বাস্তব পরিস্থিতি যে দেশে দেশে সমাজে সমাজে ভিন্ন এবং এক একটি ক্ষেত্রে সম্পূর্ণতই বিপ্রতীপ অবস্থানে অবস্থানরত সেকথা কম বেশি আমরা জানি সকলেই। কিন্তু কেন হয় এরকমটি? অনুসন্ধান করে দেখা দরকার সেটাও।
উন্নত বিশ্বের সমাজ ও অনুন্নত বিশ্বের সমাজ বাস্তবতার ভিন্নতার কারণে দুই সমাজের নারীবাদের প্রকৃতি ও নারীর প্রকৃত অবস্থান ভিন্নরূপ হতে বাধ্য। আবার বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি ও জাতপাতের বিভেদ এবং অর্থনৈতিক শ্রেণিবিন্যাস এই পার্থক্যগুলির পিছনেও কাজ করতে থাকে। সামাজিক পরিকাঠামোয় একটি মেয়ে কীভাবে বেড়ে উঠবে, কীভাবে তার চিন্তা-চেতনার প্রকাশ ঘটতে থাকবে, এবং বংশগত ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার কীভাবে তার সংস্কার ও বিশ্বাসকে রূপ দিতে থাকবে; এই সবগুলি বিষয়ই হিসাবের মধ্যে ধরতে হবে। আর এই বিষয়গুলি দেশ, সমাজ ও সম্প্রদায়গতভাবে এতই বৈচিত্র্যপূর্ণ যে নারীবাদের প্রকৃতি ও নারীর প্রকৃত অবস্থানও এত বিভিন্ন রকমের। কিন্তু মুশকিল ঘটে তখনই, যখন আমারা এই জটিল বিষয়টিকে একরৈখিক মাত্রায় সরল করে নিয়ে দেখতে ও দেখাতে যাই। তাই শুধুমাত্র আর্থিক স্বনির্ভরতাই নারীর স্বঅভিভাবকত্ব নিশ্চিত করতে পারে না। পাশ্চাত্য সমাজে নারীর অবস্থান ও প্রাচ্যের নারীর অবস্থানজনিত কারণে এই দুই সমাজের নারীবাদের প্রকরণও ভিন্ন। কিন্তু যাঁরা সেটি বিস্মৃত হয়ে আন্তর্জাতিক নারীবাদের প্রবক্তা হয়ে উঠতে চান, তাঁরা ভুল করেন প্রথমেই। ইউরোপ-আমেরিকার মেয়েদের সাথে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মেয়েদের সংস্কার ও বিশ্বাস, চাহিদা ও প্রত্যাশার ভিন্নতা খুবই সুস্পষ্ট। সেই বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করা যাবে কী করে? তাই বস্তুত আন্তর্জাতিক নারীবাদ বলে কিছু হয় না। এক একটি দেশে, রাষ্ট্রে, সমাজে ও সম্প্রদায়ে এবং জাতিগত গোষ্ঠীতে নারীর অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন। তার জীবনবোধ ও মূল্যবোধও বিভিন্ন। তার সমস্যা ও সম্ভাবনার দিগন্তও বিশিষ্ট রকমভাবেই ভিন্ন। তাই তাদের চেতনায় নারীবাদ কখনোই একরৈখিক হতে পারে না। আমাদের সেই সত্যটি অস্বীকার করলে চলবে না কিছুতেই। এবং এর সাথে যুক্ত করতে হবে যুগলক্ষ্মণকেও। অর্ধ শতাব্দী পূর্বের নারী আর আজকের নারীর ভূবন, সে- যে দেশগত ঐতিহ্য ও সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির উত্তরাধিকারই বহন করুক না কেন; এক নয় কখনোই। তাই নারীবাদও পাল্টাতে থাকে, থাকবে দশক থেকে দশকে।
পিতৃতন্ত্রের মধ্যেই সবচেয়ে মুখ্য যে বিষয়টি সুপ্তভাবে লুকিয়ে থাকে, সেটি হল নারীগর্ভের ওপর পুরুষের সত্ত্বাধিকার। কমবেশি, দেশ-কাল-সমাজ নিরপেক্ষভাবে সবখানেই এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। এবং মানবসভ্যতার আরও বিশেষ করে বললে বলা যায় এটিই আধুনিক মানবসভ্যতার মূলস্বরূপ। বয়ঃসন্ধির পরপরই ছেলে-মেয়ে উভয়ই এই বিষয়টি সম্বন্ধে সচেতন হয়ে যায়। সচেতন হয়ে যায় এমনভাবেই যে বিষয়টি তাদের বিশ্বাস ও সংস্কারের ভিতের মধ্যেই দৃঢ় হয়ে গেঁথে যায়। তাই এই নিয়ে প্রশ্ন করার সচেতনতা জন্মায়ই না সাধারণত। জল, হাওয়া, মাটি, আকাশের মতোই স্বতঃসিদ্ধ সত্য হয়ে যায় তাদের কিশলয় ধারণায়। আর সেই বিশ্বাসই তাদের আজীবন সংস্কারে পরিণত হয়ে ওঠে যৌবনপর্বেই। নারীবাদ এই বিশ্বাস ও সংস্কারকেই প্রশ্ন করে। যে বা যারা সেই প্রশ্নের শরিক হয়ে উঠতে থাকে, সমাজ সংসার তাদেরকেই নারীবাদী বলে দেগে দিতে চায়। দেগে দেয়ও। বিশেষত আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে পারিবারিক সংস্কৃতি ও সমাজিক রীতিনীতিগুলি এমনভাবেই ছেলেমেয়েদের ওপর খবরদারি করতে থাকে যে, তাদের স্বাধীন চিন্তার ও অনুভববের পরিসরটিই ক্রমে সংকুচিত ও অবরুদ্ধ হয়ে পড়তে থাকে। তাই তারা প্রশ্ন করতে ভুলে যায়। একটি মেয়ে বা ছেলে এই রকম অবরুদ্ধ পরিসরে বেড়ে উঠতে থাকে বলেই পিতৃতন্ত্রের ভিতটা এতোটাই মজবুত থাকে। আর সেই মজবুত ভিতটাই মেয়েদরকে গুরুত্বপূর্ণ জীবনপ্রশ্নগুলি থেকে দূরবর্তী করে রাখে। তাকে নির্বাক নীরব করে গড়ে তোলে। মেয়েরা শিখে যায়, না- প্রশ্ন করতে নেই। চিন্তা করতে নেই। অন্যরকম ভাবে ভাবতে নেই। অন্যরকম হতে নেই। এই নিরব আত্মসমর্পণ, পিতৃতন্ত্রের আধিপত্যের কাছে, এটিই তৃতীয় বিশ্বের মেয়েদের আসল ইতিহাস। এবং বর্তমানও। হ্যাঁ, প্রযুক্তি বিপ্লবের এই একুশ শতকেও। এই যে অন্যরকম হতে নেই, এই যে সংস্কার এইটিই একটি মেয়েকে নিরব করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। আর তারপরেও যদি কাজ না হয়, তাহলেই সেই মেয়েটিকে দেগে দেওয়া যাবে ‘নষ্ট তসলিমা’ বলে। এটিই পিতৃতন্ত্রের রাজনৈতিক ছক। ক’জন মেয়ের মধ্যে সেই মানসিক শক্তি ও চারিত্রিক দৃঢ়তা আছে, যে এই ছকের বিরুদ্ধে গর্জে উঠবে? বেরিয়ে আসতে চাইবে চেনা এই ছকের ঘোরতর বাস্তবতা থেকে? মেয়েরা সাধারণত এবং খুবই স্বাভাবিকভাবেই তাই অন্যরকম হতে চায় না। বরং কেবল একটি দরদী পুরুষের স্বপ্ন দেখতে চায়, যে আদরে সোহাগে সুরক্ষিত করে রাখবে তার প্রেয়সীর জীবন। সেটাই তো ভালোবাসার মাপকাঠি। আমাদের সমাজ-সংসার সেই মাপকাঠিটিই প্রতিটি মেয়ের চেতনায় গেঁথে দেয় সফলভাবে। কেননা তবেই সেই মেয়েটির গর্ভের ওপর পিতৃতন্ত্রের সত্ত্বটুকু আরোপ করা যাবে সহজে ও নিশ্চিন্তে।
আর তাই আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের এই দেশগুলিতে আর্থিক স্বনির্ভর নারীও অন্যরকম করে ভাবতে পারে না। অন্যরকম হয়ে উঠতে পারে না। যেখানে সে তার গর্ভের ওপর পিতৃতন্ত্রের সত্ত্বাধিকার আরোপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে নিজের মতো করে। বই পড়া নারীবাদী তত্ত্ব মুখস্থ করে নয়, বা নয় সেমিনারে শোনা নারীবাদের আলোচনাকে অন্ধের মতো অনুসরণ করে। সেখানে নিজেকে দেখার মতো সাহস ও অধ্যাবসায় নিরানব্বই শতাংশ নারীরই থাকে না। উচ্চশিক্ষা কিংবা অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা যতোই থাকুক না কেন। আর সেখানেই কী শিক্ষিত কী অশিক্ষিত, কী আর্থিক স্বয়ম্ভর, কী স্বামীর অর্থে প্রতিপালিত সব নারীর চেতনাতেই চলতে থাকে পিতৃতন্ত্রের আরোপিত কার্ফিউ। বরং যে মেয়ে যতোবেশি শিক্ষিত ও আর্থিক স্বয়ম্ভর সে ততো বেশি তার থেকে শিক্ষিত ও অর্থবান মনের মানুষ কল্পনা করতে থাকে। যার আদরে সোহাগে সুরক্ষার নিশ্চয়তার নিশ্চিত পরিসরে তুলে দিতে পারবে আপন নারীগর্ভের স্বত্বাধিকার সম্পূর্ণ করে। হ্যাঁ, নিরানব্বই শতাংশ নারীই এখানে নারীজন্মের মূল স্বার্থকতা খুঁজে পেয়ে কৃতার্থ হয়ে যায়। ঘটনাচক্রে যাদের জীবনে এই প্রত্যাশা এরকম মসৃণভাবে পরিপূর্ণ হয় না, তারাই বিলাপ করতে থাকে নারী হয়ে জন্মানোর জন্যে। দোষারোপ করতে থাকে আপন ভাগ্যের ওপর। তবুও অন্যরকম হয়ে উঠতে পারে না। ভাবতে পারে না অন্যভাবে। অনুধাবন করতে পারে না, গণ্ডগোলটা ঠিক কোথায় ঘটে গিয়েছে। কীভাবে ঘটেছে, বা কেনই বা ঘটলো। এই সমাজ বাস্তবতায় আমাদের দেশীয় পরিস্থিতিতে নারীবাদের চর্চা নেহাৎই ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আমদানী করা শৌখিন অবসর বিনোদনমাত্র। কিংবা কখনো সখনো সেটাই খ্যাতির চৌকাঠে পা রাখার কৌশল বা পেশাগত দক্ষতা পরিচর্যার একটি মাধ্যমমাত্র।
না নারীর এই অক্ষমতার কারণ নারী নয়। একেবারে শৈশব থেকেই মেয়েদেরকে গড়ে তোলার সাংসারিক ও সামাজিক প্রকরণই এই ঘটনার জন্যে দায়ী। আমাদের সমাজে আমরা মেয়েদেরকে সর্ববিষয়ে খাটো করে গড়ে তুলি। কে কতো কলেজ-বিশ্বাবিদ্যালয়ের ডিগ্রী অর্জন করলো, কিংবা নির্দিষ্ট পেশাগত দক্ষতায় কতো পারদর্শী হয়ে উঠলো সেটাই শেষ কথা নয়। যে আত্মপ্রত্যয় ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের নির্যাসে স্বাধীন ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠে আমাদের সমাজে আমাদের সংসারে মেয়েদেরকে সচেতনভাবেই তার থেকে অনেক দূরবর্তী করে রেখে দেওয়া হয়। স্বাধীন ব্যক্তিত্ব বলতে ইচ্ছেমতো পেশা নির্বাচন কী স্বামীর অর্থে খেয়াল-খুশি মতো শপিং করতে পারাই বোঝায় না। স্বাধীন ব্যক্তিত্ব তাই, যা একটি মানুষকে তার দেহ-মন-সত্তার কোনটিই কোনদিন কোনোভাবে কোথাও কারুর কাছে বন্ধক দিতে প্ররোচিত করে না। এই যে স্বাধীন ব্যক্তিত্ব, দুঃখের বিষয় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির অনুন্নত সমাজব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ করা যায় কদাচিৎই। আর করলেই সমাজ তাকে একঘরে করতেই উঠে পড়ে লাগে। তাই এই দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে নারীর দশা দশচক্রে ভগবান ভূতের মতো আজও।
পিতৃতন্ত্রের এই ঘেরাটোপে নারীকে খর্ব করে রেখে নারীর গর্ভের ওপর পুরুষের একচ্ছত্র অধিকার কায়েম রাখার আবহমান সংস্কৃতির সবচেয়ে বড়ো হাতিয়ারই হলো সাম্প্রদায়িক ধর্ম। কম বেশি সকল ধর্মই এই অপকর্মে যথেষ্ট পরিমাণে কার্যকরি। এবং পারদর্শী। আজকের প্রযুক্তির এই অভূতপূর্ব সাফল্য ও অগ্রগতির যুগেও সাম্প্রদায়িক ধর্ম নারীর ওপর পিতৃতন্ত্রের কর্তৃত্ব কায়েম রাখার বিষয়ে প্রবলভাবেই শক্তিশালী। তাই ধর্ম ও পিতৃতন্ত্র এই বিষয়ে একে অপরের পরিপূরক। আর লিঙ্গরাজনীতির শুরুই এই দুইয়ের অশুভ আঁতাত থেকে। তাই ব্যক্তিগতভাবে যে কোন নারীর পক্ষেই এই অসম লড়াইয়ে জয়ী হওয়া প্রায় অসম্ভব। আর সেই জন্যে তো নারীবাদকে সেই অসম্ভব কাজটিতে মেয়েদেরকে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগানোর কাজে সচেষ্ট হতে হয়েছে। আরও বেশি করে হতে হবে। আরও বেশি করে হতে হবে কারণ বিষয়টি, আগেই দেখানো হয়েছে আদৌ একরৈখিক কোন সমস্যা নয়। তাই পথ ও পদ্ধতি সকল সমাজেই সকল সম্প্রদায়েই একরকমও হতে পারে না। সে কারণেই নারীবাদকেও হয়ে উঠতে হবে আরও বেশি বাস্তববাদী। এখানে আবেগ সর্বস্ব শ্রেয়বাদের ভুমিকা যতো কম হয় ততই ভাল। বাস্তব পরিস্থিতির মোকাবিলায় বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনাকেন্দ্রিক বিবেচনার প্রয়োজন। প্রয়োজন নারীশিক্ষা বিস্তারের মধ্যে দিয়েই কাজ শুরু করা। নারীর অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার নিশ্চয়তা বৃদ্ধির সাথে তার আত্মপ্রত্যয়ের উদ্বোধনে কাজ করে যেতে হবে নারীবাদকে। এক এক অঞ্চলে এক একভাবে। আত্মপ্রত্যয়ের উদ্বোধনের পথেই অর্জিত হবে আত্মশক্তির। লিঙ্গরাজনীতির ঘেরাটোপ কেটে নারীমুক্তির জন্যে যার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। একমাত্র তখনই পিতৃতন্ত্রের আস্ফালন ও আধিপত্যের কাছে নিঃশর্ত ও নীরব আত্মসমর্পন না করেও নারী তার নিজস্ব ভূবনে লড়াই করে বেঁচে থাকার সাহসটুকু খুঁজে পাবে। সেদিনই একজন নারীর কাছে মুক্তির দিন। গর্বিত হওয়ার দিন। পথ দেখানোর দিন অন্যদের।