১২৬১ বার পঠিত
জালাল উদ্দিন খাঁ বাংলাদেশের অন্যতম বিশিষ্ট বাউল কবি ও গায়ক। তিনি ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের অধীন ময়মনসিংহ জেলায় (বর্তমানে বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার আসদহাটি গ্রামে ) জন্মেছিলেন। তাঁর পিতার নাম সদরুদ্দীন খাঁ।
বিংশ শতাব্দীর বিশ থেকে ষাটের দশক অবধি প্রাকৃত বাঙালিজনের এই গীতিকবি তার সাধনায় সক্রিয় ছিলেন। আত্মতত্ত্ব, পরমতত্ত্ব, নিগূঢ়তত্ত্ব, লোকতত্ত্ব, দেশতত্ত্ব ও বিরহতত্ত্ব-এর নামাঙ্কিতের মাঝে জালাল উদ্দিন প্রায় সহস্রাধিক গান রচনা করেছিলেন। প্রখ্যাত এই লোক কবি মালজোড়া গানের আসরেও ছিলেন অনন্য। জালাল উদ্দীন খাঁ অনেক গান রচনা করেছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় চার খণ্ডের ‘জালাল-গীতিকা’ গ্রন্থে ৬৩০টি গান প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় ‘জালাল-গীতিকা’ পঞ্চম খণ্ড। সেই খণ্ডে গানের সংখ্যা ৭২টি। এরপর মোট ৭০২টি গান নিয়ে ২০০৫ সালের মার্চে প্রকাশিত হয়েছে ‘জালাল গীতিকা সমগ্র’। জালাল তাঁর গানগুলোকে বিভিন্ন ‘তত্ত্ব’তে বিন্যস্ত করে প্রকাশ করেন। সেই তত্ত্বগুলোর নামগুলো হলো- আত্মতত্ত্ব, পরমতত্ত্ব, নিগূঢ় তত্ত্ব, লোকতত্ত্ব, দেশতত্ত্ব, বিরহতত্ত্ব। ‘জালালগীতিকা’র অধিকাংশ গানই এরকম তত্ত্বনামাঙ্কিত হলেও অনেক গানকে জালাল খাঁ তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত করেননি।
যেমন- ‘জালাল গীতিকা’ প্রথম খণ্ডে সংকলিত ২০২টি গানের মধ্যে ২০টি গান ‘ভাটিয়ালি’ নামাঙ্কিত। দ্বিতীয় খণ্ডের ২২৮টি গানের ৬০টিই ‘ভাটিয়ালি’। তৃতীয় খণ্ডের ৭৮টি গানের সাতটি ‘তত্ত্ব’ বিষয়ে, আর ১৪টি ‘মুর্শিদি’ ও ১১টি ‘মারফতি’ নামাঙ্কিত গান। ‘জালাল গীতিকা’র চতুর্থ খণ্ডে কোনো তত্ত্ব নির্দেশ ছাড়াই বাউল সুর, ঝাপতাল, চৌপদী, প্রসাদ সুর, মুকুন্দ সুর, খেমটা নামে মোট ১০১টি গান সংকলিত হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর উত্তরসূরিদের হতে ‘জালাল গীতিকা’র যে পঞ্চম খণ্ড প্রকাশিত হয় তাতে গীতিগুলোর কোনোরূপ শ্রেণীবিন্যাস বা নামাঙ্কন করা হয়নি। নব এই প্রকাশনায় জালালের জীবৎকালে অপ্রকাশিত বিভিন্ন ধরনের ৭২টি গীতি সংকলন করা হয়। তাছাড়া ‘বিশ্ব রহস্য‘ নামে একটি প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশ করেন। ১৯৭২ সালের ৩১ জুলাই তিনি দেহত্যাগ করেন। ‘কোন পরাণে বলব আমি’ শিরোনামের এই ব্লগপোস্টটি প্রাথমিক সূচনা। এই পোস্টে একটু একটু করে তাঁর রচিত বাছাই করা কিছু সৃষ্টি উল্লেখ করা হবে।
গীতিকার: জালাল উদ্দিন খাঁ
কণ্ঠ: সুনীল কর্মকার
কোন পরাণে বলব আমি
বধু তোমায় ভালোবাসি
সাগর হতে একটি বিন্দু
তার চেয়ে যে আরো বেশি।
পর্বতের গায়ে পিপীলিকা
সূর্যের মুখে দীপশিখা
পূর্ণিমায় জোনাকি পোকা
কে দেখে তার রূপরাশি।
সাহারার সমান তুমি
তারই একটি কণা আমি
সাহস পাইনা বলতে স্বামী
যদিও তোর প্রেম প্রিয়াসী।
শক্তি সম্পদ মোর কিছু নাই
তোমার খেয়ে জীবন বাঁচাই
মারো যদি মরিয়া যাই
ধূলা খেলা কাঁদি হাঁসি।
জালালে কয় মোর পথ চাওয়া
ভাগ্যে নাই মোর পরশ পাওয়া
সার হয়েছে আসা যাওয়া
গোলে ধাঁধা মায়ার ফাঁসি।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন